
শেখ আব্দুল হামিদ : হরতাল-অবরোধ মানতে গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। অযৌক্তিক এসব কর্মসূচি আমরা শ্রমিকরা মানি না। পাঁচ সদস্যের সংসার আমার, বিএনপি-জামায়াত কি খেতে দেবে ? কথা গুলো বলেন, খুলনার-গল্লামারী-দাকোপ রুটে বাস চালক সমির মন্ডল।
‘হরতাল-অবরোধের কারণে বাস নিয়ে রাস্তায় নামতে প্রথম দিকে ভয় পেয়েছিলাম। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে এমনিতেই আধাবেলা-একবেলা খেয়ে-না খেয়ে থাকতে হয়। তাই এখন আর এসব অযৌক্তিক হরতার-অবরোধ মানি না। তার ওপর গাড়ি চালাতে না পারলে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে বেঁচে থাকব কীভাবে? কথা গুলো দৃঢ়তার সাথে বলেন বাস চালক সমীর মণ্ডল।
টুঙ্গিপাড়া পরিবহনের হেলপার আবুল কালাম আক্ষেপ করে বলেন, হরতাল-অবরোধ মানতে গেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। হরতাল-অবরোধ যারা ডাকে, তারা যদি আমাদের মজুরি দিয়ে দিত-তাহলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হতো না।’ সমীর মণ্ডল, আবুল কালামের মত অন্যান্য পরিবহন শ্রমিকরা জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে তাদেরও খুব কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। এধরণের কর্মসূচি যে কেন তারা দেয় বুঝি না।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা রাজনৈতিক দলের হরতালের কারণে দূরপাল্লার বাস গুলো ছেড়ে যাবার অপেক্ষায় রয়েছে। টার্মিনালের ভেতরে সারিবদ্ধভাবে বাসগুলোকে দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর অপেক্ষায়। হেলপার, শ্রমিকদের মুখে যাত্রী নেওয়ার জন্য হাক-ডাক চলছে। রয়েছে ব্যস্ততা। বাসের চালক-হেলপারদের দেখা যায়, প্রস্তুতি নিয়ে গাড়িতে বসে থাকতে। সকলের মধ্যে রয়েছে ব্যস্ততা। তবে, টার্মিনালের বাইরের সড়কে ইজিবাইক, রিকশা চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবেই। হরতালের কারণে দূরের যাত্রীরা অনেক সময় ভয়ে আসতে পারে না। তবে ইজিবাইকগুলোতে ছিল যাত্রীর চাপ। অভ্যন্তরীণ প্রায় সকল রুটে যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করেছে।
শাহ আলম নামের একজন বাসচালক জানালেন, হরতাল-অবরোধে বাস নিয়ে রাস্তায় নামলে ভাঙচুর, আগুন দেওয়ার ভয় থাকে। তাই ভয়ে চালক-হেলপাররা রাস্তায় নামতে চায় না। সব কিছুর চেয়ে জীবন তো আগে। তারপরেও বাধ্য হয়ে নামতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে যে সব বাস চলাচল করছে, যাত্রী স্বল্পতার কারণে তাদেরও ভাড়া কম উঠছে। যাত্রীরাও বেশ আতঙ্কে থাকেন। এ কারণে কেউ খুব বেশি প্রয়োজন না হলে যাতায়াত করছেন না।
আব্দুল আলীম নামের একজন বাস শ্রমিক বলেন, যারা বাস চালাচ্ছেন, তাদের খরচ কিছুটা কম উঠছে। বাসের চালক এবং মালিক সমন্বয় করে চলছে। আর আমাদের হেলপার, কন্ডাক্টরদেরও কম বেতন নিতে হচ্ছে। অহেতুক হরতাল-অবরোধের কারণে আমরা কিছুটা কষ্টের মধ্যে আছি।
আক্কাস আলী নামে অপর আরেক শ্রমিক বলেন, সারাদিন খেটে-খুটে মাত্র ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। হোটেলে এক বেলা ডাল-ভাত খাইতে ৫০ টাকার ওপরে চলে যায়। পেঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি সব কিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। তার ওপর ঘনঘন হরতাল-অবরোধ মানতে গেছে আমরা না খেয়ে মরে যাব।
সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, অনেক যাত্রীই জরুরি কাজে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বাসে যাত্রী হতে দেরি হওয়ায় না ছাড়ার কারণে তারা যেতে পারছেন না। তারাও পড়েছেন বিপাকে।
অপেক্ষারত সাজ্জাদ হোসেন নামের এক যাত্রী বললেন, তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যাবেন। জরুরি কাজ রয়েছে সেখানে। কিন্তু কারণ ছাড়াই অবরোধের ফালতু ঝামেলায় গাড়ি ছাড়ছে দেরি করছে। ওদিকে ভাঙ্গা থেকে বারবার ফোন আসছে। কি যে সমস্যায় আছি, তা বলবার নয়।