শেষ পর্যন্ত সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে বেশির ভাগ দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে এবং ভোটগ্রহণের দিন বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মোটাদাগে সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। ভোটারদের অংশগ্রহণও ছিল সন্তোষজনক এবং উৎসবমুখর। দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনের ভোটগ্রহণ হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ভোটকেন্দ্রে হামলা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভোটের আগের রাতে পুড়েছে ১০টি যানবাহন। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে ভোটকেন্দ্রের সামনে নৌকা প্রতীকের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যেকোনো নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা থাকেই। বরং বলা যায়, অতীতের যেকোনো সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে হতাহতের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তা সত্ত্বেও এই মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
ওদিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়াসহ মন্দির পোড়ানো এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ফসলি জমির ধান নষ্ট করা হয়েছে। এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। বিশেষ করে নির্বাচনের পর যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে। সাবধান থাকতে হবে যেকোনো ধরনের নাশকতা থেকেও।
৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও এবারের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। অনেক নির্বাচন পর্যবেক্ষকও মনে করছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মোটাদাগে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আমরা আশা করি, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।
জনগণ নির্বাচিতদের আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশে শান্তি বিরাজমান থাকবে, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে না। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।