জন্মভূমি ডেস্ক : মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সংসদে জবাবদিহিতে বাধ্য করতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ লোকসভায় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিল। আজ বুধবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ আসাম থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য গৌরব গগৈ এ প্রস্তাব জমা দেন।
ইন্ডিয়ার পক্ষে এই প্রস্তাবের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের শাসক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) তরফ থেকে নম নাগেশ্বর রাও পৃথক আরেকটি অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। বিআরএস ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক নয়। তাদের নীতি কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলের সঙ্গেই সমদূরত্ব বজায় রাখা।
লোকসভা সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাব বিধিসম্মতভাবে পেশ করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন স্পিকার ওম বিড়লা। তারপর সেটি গৃহীত হলে আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক করবেন।
নিয়ম অনুযায়ী, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিতে লোকসভার অন্তত ৫০ সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন। সেই সংখ্যা ইন্ডিয়া জোটের আছে। কিন্তু প্রস্তাবটি পাস করানোর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা লোকসভায় বিরোধীদের নেই। কাজেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আনা এই দ্বিতীয় প্রস্তাব আলোচনার পর ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যাবেই।
নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৮ সালে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তেলুগু দেশম পার্টি। ৩২৫–১২৬ ভোটে সেটি খারিজ হয়েছিল। অনাস্থা প্রস্তাব একবার খারিজ হলে পরবর্তী অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিতে গেলে ছয় মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়।
প্রস্তাব খারিজ অনিবার্য জেনেও ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে কেন তা আনা হলো? সহজ উত্তর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মণিপুরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে জবাবদিহিতে বাধ্য করানো। গত ৯ বছরে কোনো বিষয়ে তিনি সংসদের ভেতর অথবা বাইরে—কাউকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি। পৌনে তিন মাস ধরে মণিপুর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, তা সত্ত্বেও তিনি সংসদে নীরব। সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর দিন সভাকক্ষের বাইরে ৩৬ সেকেন্ডের জন্য মুখ খুলে শুধু বলেছিলেন, দেশবাসীর মাথা লজ্জায় নত হয়ে গিয়েছে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
মণিপুরে নিজের দলের সরকার থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে ভর্ৎসনা করেননি, তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশ দেননি; এমনকি সরকার লোকসভা ও রাজ্যসভা—কোথাও মণিপুর নিয়ে মুলতবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনার দাবি মেনে নেয়নি। তাই অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত।
সিপিআইয়ের সংসদ সদস্য বিনয় বিশ্বম আজ সকালে কৌশল ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবেই একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ। উদ্দেশ্যও পুরোপুরি রাজনৈতিক। এই কৌশল একমাত্র ফলদায়ক (প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলাতে) হতে পারে। এই প্রস্তাব তাঁকে বাধ্য করাবে সভাকক্ষে আসতে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংসদে আমরা আলোচনা চাই; বিশেষ করে মণিপুর।’
বিনয় বিশ্বম বলেন, ‘সংখ্যার বিষয়টি ভুলে যান। ওরাও জানে, কোন দিকে সংখ্যা কত। আমরাও জানি, আমাদের পক্ষে কতজন আছেন।’
মণিপুরের জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়েছে ৩ মে। সেই থেকে প্রায় দেড় শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত এক হাজারের বেশি। সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, মন্দির ও গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গৃহহীনের সংখ্যা অন্তত ৬০ হাজার।
মণিপুরের এই দাঙ্গার আঁচ পড়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য মিজোরামে। লাগোয়া রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকেও উদ্বাস্তুরা ভারতে চলে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং নির্বিকার। তিনি পদত্যাগে ইচ্ছুক নন। তাঁকে পদত্যাগ করিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করতেও কেন্দ্রীয় সরকার অনিচ্ছুক, প্রধানমন্ত্রী নির্বাক। সরকার তাদের পছন্দমতো প্রস্তাবে স্বল্প সময়ের আলোচনায় রাজি, যার জবাব দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরকার ও বিরোধীদের এই টানাপোড়েনে ২০ জুলাই থেকে সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজকর্ম অচল রয়েছে।