By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ
সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

Last updated: 2025/12/22 at 1:53 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 42 minutes ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবনের বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলটি জলবায়ু দুর্যোগে সবচে’ নাজুক একটি এলাকা। উপকূলীয় এই দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা অন্যতম। লবণ পানি, চিংড়ি চাষ, কৃষিজমি অকৃষিখাতে ব্যবহার, উন্নয়ন উদ্যোগের ব্যর্থতা নানান সমস্যাকে সঙ্গী করে এই জেলার মানুষগুলোকে বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে থাকার তাগিদে নিত্যনতুন স্বপ্ন বোনা, দুর্যোগে এসব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হওয়া, আবার নতুন স্বপ্ন বোনা, অর্থনৈতিক আয়ের পথ সঙ্কুচিত হওয়া, লবণাক্ততায় কৃষি-ফসল উৎপাদনে সমস্যা, সুপেয় পানি সঙ্কট, জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সুন্দরবনে সম্পদ সংগ্রহ, সম্পদ সংগ্রহে জলদুস্য ও বাঘের আক্রমণের শিকার হওয়া, বাঘ বিধবাদের সামাজিক স্বীকৃতির অভাব-এই সমস্যাগুলো অহর্নিশ সন্মুখীন হতে হচ্ছে এসব মানুষদের! সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, দাঁতিনাখালী, হায়বাতপুর, চুনকুড়ি, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের মানুষের ভাষ্যমতে, চিংড়ি চাষের পূর্বে এই এলাকায় এত সমস্যার পাহাড় ছিলো না! কৃষিজমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ হতো বলে ‘কাজের’ কোন সমস্যা হতো না! চিংড়ি ঘেরে কম শ্রমের প্রয়োজন হয় বিধায় চিংড়ি চাষ প্রবর্তনের পর থেকেই এলাকায় বেকারত্বের হার বেড়েছে, বেঁচে থাকার জন্য সুন্দরবনে সম্পদ সংগ্রহের কারণে সুন্দরবনের ওপর চাপ বাড়ছে। সুন্দরবনের বাঘ বনে খাবার না পেয়ে মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে, এমনকি খাদ্যের জন্য তারা লোকালয়েও চলে আসা শুরু করেছে।
মুন্সিগঞ্জ থেকে দাঁতিনাখালী গ্রামের দূরত্ব বেশি নয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবস্থা দু’টিই খুবই নাজুক বলে এই গ্রামে পৌছুতে বেশ সময় লেগেছে। গ্রামের চারপাশ অনেক জমি। তবে কৃষি নয় সেখানে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। ইদানীং কাঁকড়া চাষও বেড়েছে। কৃষি শস্য-ফসলের সোনালি-সবুজ আবরণে যে জমিগুলো ঢাকা পড়ার কথা সেখানে চিংড়ি ও কাঁকড়া প্রদর্শনী প্লটের নানান ‘সাইনবোর্ড’-এ ভরে গেছে। এই ‘সাইনবোর্ডগুলো’তে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে যারা এই গ্রামের মানুষের ‘উন্নয়ন’র জন্য কাজ করে যাচ্ছে! তবে মানুষের ভাগ্যের আর উন্নয়নই হচ্ছে না! দাঁতিনাখালী গ্রামের বনজীবীরা তাদের বসতভিটা উচু করে রাখেন। কারণ জোয়ারের কারণে প্রতিদিন তাদের বসতভিটা প্লাবিত হতে পারে! গ্রামে যেখানে কিছুটা হলেও সবুজ দেখা গেছে সেটা হলো মানুষের বসতভিটার সামান্য জায়গা, যেখানে তারা বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ করেন। কৃষি শস্য-ফসল উৎপাদনের সুযোগ না থাকায় গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই সুন্দরবনে সম্পদ সংগ্রহের সাথে জড়িত। বনের সম্পদের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে বলে এদেরকে ‘বনজীবী’ বলা হয়। কেউ কেউ মাওয়ালী, বাওয়ালী, চুনারী নামেও পরিচিত। সম্পদ সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করলে তারা নিশ্চিত থাকেন না যে, জীবিত না মৃত অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন! তারপরও জীবন চাকাকে সচল করার জন্য ঝুঁকি নিয়ে তারা সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। এদের অনেকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে, কেউ মারাত্মক আহত হয়ে, কেউবা আবার নিখোঁজ রয়েছেন এখনও! বনজীবীরা এখনও সুন্দরবনে প্রবেশ করেন সম্পদ সংগ্রহের জন্য! তারা জানেন না কবে অবসান হবে তাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান! খাদ্যের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য যেখানে সমস্যা প্রকট সেখানে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও যে অপ্রতুল তা বলাই বাহুল্য! গ্রামে খাবার পানির সঙ্কট খুবই প্রকট। অনেকদুর থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়। নারীদেরকে সময় ও শ্রম দু’টিই বেশি ব্যয় করতে হয় সুপেয় পানি সংগ্রহে, ইদানীং যদিওবা পুরুষেরা এ কাজে তাদের সাহায্য করে। স্বাস্থ্যসেবার চিত্র আরও ভয়াবহ। অনেকে বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত না হওয়ায় বাঘ আক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন! তবে আশার কথা হলো এত সমস্যার মধ্যে থেকে এই মানুষগুলো মনোবল হারাননি! জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য তারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বারসিক’র সহযোগিতায় তারা কেওড়া ফল থেকে আচার, চকলেট, জেল, মৌচাক থেকে মোম, সাবান তৈরি করছেন, মধুর বাজারজাতকরণে জন্য বারসিকের সহযোগিতা পাচ্ছেন, বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা এই কাজগুলো করছেন, অন্যকেও শিখাচ্ছেন! সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সেবা-সুযোগ পাচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে, গ্রামে নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহের হার অনেক কমে গেছে! সবাই সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন জীবন-জীবিকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য। এজন্য তারা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সহযোগিতা চাচ্ছেন!
সিডর-আইলায় উপকূলীয় এলাকায় অনেক মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন! নিঃস্ব হয়েছেন! আমরা এ মানুষগুলোকে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’ বলি! এদের সবচে’ অসহায় মনে করি, এদের প্রতি সহমর্মীতা দেখাই আর কত কি! কিন্তু তারা মনোবল হারাননি বা হতাশ হননি! তারা মনে করেন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার, খাদ্য খাবার, কথা বলার, বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে তাদের। নিঃস্ব, দরিদ্র, ভূমিহীন এসব মানুষের পুর্নবাসনের জন্য সরকার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শ্যামনগর বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। স্থানীয়ভাবে এটিকে ব্যারাক বলা হয়। ৮০টি দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবার এ ব্যারাকে বসবাস করে এখন। ঘর দেওয়ার পর পরই সরকার মনে করে তার দায়িত্ব শেষ! কিন্তু এসব মানুষগুলো কী খেয়ে বাঁচবে? প্রতিটি পরিবারকে অতিসামান্য বসতভিটার জমি বরাদ্দ করা হলেও এই জমিগুলো লবণাক্ততায় আক্রান্ত! এখানে কিছু হবে না। এসব জমি কীভাবে আবাদযোগ্য করা হবে সেই ব্যাপারে তাদের কোন নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি! তবে বারসিক’র সহযোগিতায় এসব মানুষ তাদের সামান্য বসতভিটার জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। কয়েকবছর আগেও যেটাকে আমি মরুভূমি হিসেবে দেখে আসছি সেখানে এখন সবুজের সমারোহ! এসব মানুষ বারসিক, হায়বাতপুর কৃষক সংগঠনের ফরিদা পারভীন, সিরাজুল ইসলামদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাদেরকে কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। জমিগুলোকে আবাদযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতার জন্য! সামান্য বসতভিটায় সবজি উৎপাদন করতে পারায় পরিবারের সবজির চাহিদা মেটাতে পারছেন। যে টাকা সবজি ক্রয়ে ব্যয় হতো সেটা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য তাদের ‘কাজ’ দরকার বলে তারা জানিয়েছেন। কাজের অভাবে অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়েছে তাদের তা অপকটে স্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, “শুধু ঘর দিয়ে আমরা কী করবো? আমাদের কাজ দ্যান? আমাদেরর তো ক্ষুধা, পিপাসা আছে! আমরা রিলিফ চাই না, চাই কাজ”। এসব মানুষগুলো বেশির ভাগই দিনমজুর। কিন্তু দিনমজুরির জন্য তো কাজ থাকা লাগবে। চিংড়ি ঘেরে কয়েকজন মানুষ কাজ করতে পারে। অন্যরা তাই কাজের সন্ধানে নিজ পরিবার ছেড়ে মাসের পর মাস বিভিন্ন এলাকায় থাকতে হয়েছে। মুন্ডা আদিবাসী বিনোদিনির স্বামী বর্তমানে কুমিল্লায় একটি ইটভাটাতে কাজ করছেন। দীর্ঘ ছয়মাস ধরে বাড়ি আসেননি তিনি।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন একটি পরিচিত নাম। আইলা-সিডরে সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ইউনিয়নটি। সিডর-আইলার ধ্বংসস্তুপ এখনও এই ইউনিয়নে দেখা যায়। সোরা ৯নং গ্রামটি এখনও লবণ পানিতে প্লাবিত। জোয়ার সময়ে এই পানি অনেকের উচু ভিটার শেষ সীমা পর্যন্ত চলে আসে! গ্রামবাসী বেশির ভাগই সুন্দরবনে সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। সুন্দরবনে সম্পদ সংগ্রহে করতে গিয়ে এই গ্রামের অনেক পুরুষ বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা গেছেন। ২০১১ সালের বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র এই গ্রামেই ৫২ জন বাঘ বিধবা রয়েছে, পুরো ইউনিয়নে এর সংখ্যা ৪৭৬ জন জানালেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার ম-ল! সম্পদ সংগ্রহের জন্য স্বামী বনে গেলে নারী ঘরে বসে থাকে। নানান কুসংস্কার তাদেরকে এসময় পালন করতে হয়। কেউ সুন্দরবনে গেলে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা গেলে দোষারূপ করা হয় নারীকে। তাকে অপয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়, স্বামীর অ-বর্তমানে ওই নারী নিশ্চয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে! এজন্য তার স্বামীকে বাঘে ধরেছে! নারীকে নানাভাবে দোষারূপ করা হয় বলে সমাজে তাকে ভালো চোখে দেখা হয় না, তাকে সমাজ থেকে নির্বাসিতই করা হয়। তার সাথে কেউ কথা বলে না, যোগাযোগ করে না ইত্যাদি। এছাড়া নারীদের কোন সন্তান থাকলে সেই সন্তানের সাথেও সমাজের মানুষ ভালো ব্যবহার করে না, মেয়ের বিয়ে দিতে বেশি যৌতুক চাওয়া হয় ইত্যাদি। স্বাভাবিক বিধবাদের (যাদের স্বামী রোগে অথবা অন্য কোন কারণে মারা গেছে) জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিধবা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও বাঘ বিধবাদের এসব সুবিধা দেওয়া হয় না! সরবানুরা জানান বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে স্বামী মারা যাওয়ায় এমনিতেই অর্থনৈতিকসহ নানান সমস্যায় পড়তে হয় তার ওপর সামাজিকভাবে তাদেরকে অবহেলা করায় তারা চরম মানসিক কষ্টে আছেন! কিন্তু এসব নারীরা বসে নেই। তারা তাদের জীবন-জীবিকার জন্য, সন্তানদের মানুষ করার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কেউ বসতভিটায় সবজি করেন, দিনমজুরি করেন, মাছ ধরেন এবং প্রশিক্ষণ পেয়ে নানান আয়মূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনয়ন করছেন অন্যদিকে স্বজন হারানো ও সামাজিক অবহেলার মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা ভূলে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই সাহসী মানুষগুলো! আসুন এসব সাহসী মানুষকে শ্রদ্ধা জানাই, তাদের পাশে দাঁড়াই!
উপকূলীয় জনপদ কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া আর আড়পাঙ্গাসিয়া নদী তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে এই ভূখন্ডকে। আকাশ থেকে দেখলে মনে হয়, পানির বুকে ভাসমান এক দ্বীপ। প্রকৃতির আশীর্বাদ নয়, বরং শাস্তির মতো প্রতিদিনের জীবনসংগ্রামই এখানের নিয়তি।
দক্ষিণ বেদকাশীতে গেলে প্রথমেই চোখে পড়ে ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধ। নদীর জোয়ার-ভাটা আর ঘূর্ণিঝড়ের হানা এখানে জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ২০০৯ সালের আইলার মতো দুর্যোগ মানুষকে নিঃস্ব করেছে, আবার সিডর, আমফান, ইয়াস- প্রতিটি দুর্যোগ নতুন ক্ষত তৈরি করেছে। প্রতিবারই ঘরবাড়ি ভেসে যায়, আবার নতুন করে উঠে দাঁড়াতে হয়।
মোছাঃ রফিউন নেসা নামের এক গৃহবধূর গল্প যেন গোটা উপকূলের প্রতিচ্ছবি। থাকেন দক্ষিণ বেদকাশির চরামুখার কপোতাক্ষ পাড়ের বেড়িবাঁধের ওপর। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি চার সন্তান নিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ কুঁড়েঘরে বাস শুরু করেন। সিডর, আইলা, আমফান-প্রতিটি দুর্যোগ তার সংসার ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও বারবার নতুন করে উঠে দাঁড়িয়েছেন। নদীর মাছই তার পরিবারের একমাত্র ভরসা। মাছ না পেলে সন্তানদের নিয়ে কাটাতে হয় অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে। কুড়েঘরের পুরো বারান্দাজুড়ে দেখা মেলে পানিতে ভেসে আসা সুন্দরবনের বিভিন্ন ফল ও ডালপালা। জানতে চাইলে বলেন, এগুলো কুড়িয়ে শুকিয়ে রাখি সারাবছরের রান্নার জন্য। ওইগুলোই তাদের জ্বালানি।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এলাকার মানুষের জীবিকার ভরসা নদী আর সুন্দরবন। মাছ, কাঁকড়া, মধু সংগ্রহ করেই চলে সংসার। কিন্তু সেখানে আবার আছে বাঘ-কুমিরের ভয়, বনবিভাগের নিয়ম, আর বনদস্যুদের দাপট। এক জেলে জানালেন, “সাত দিনের জন্য বনবিভাগকে ২৭০০ টাকা দিয়ে পাস নিতে হয়। কিন্তু বনে গেলে আবার ‘দুলাভাই বাহিনী’ কিংবা ‘ছোট জাহাঙ্গীর’, ‘বড় জাহাঙ্গীর’ বাহিনীকে ট্রিপপ্রতি চার হাজার টাকা দিতে হয়। তাদের টোকেন ছাড়া কাজ করা যায় না।” রয়েছে বাঘের আক্রমণের পর জীবন নিয়ে ফিরে আসা অনেকের গল্পও।
মোহাম্মদ শাহজাহান গাজী নামে দক্ষিণ বেদকাশীর এক বাসিন্দা জানান, “সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মাথায় গুরুতর আঘাত পাই। মাথায় ৪৮টি সেলাই লেগেছিল। এখন দিনমজুরি করেই সংসার চলে, তবে কাজও তেমন পাওয়া যায় না।”
একই এলাকার রেজাউল মোল্লা, শামসুর আলি ও কাশেম মোল্লাসহ আরও অনেকে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কারও জীবন গেছে, কেউ অঙ্গহানি হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মাওলানা মাহফুজুর রহমান বলেন, “এখানে বেড়িবাঁধ মানেই জীবন। বাঁধ ভাঙলে সব ভেসে যায়, আশ্রয়কেন্দ্রও পর্যাপ্ত নেই। মানুষকে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হয়।”
ওই স্কুলসহ এলাকার আরও অনেকের ভাষায় সেখানে সুপেয় পানির সংকটও মারাত্মক। সাধারণ টিউবওয়েল বছরের কয়েক মাস পানি দেয় না। যাদের সাবমারসিবল আছে তারাই কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ-জেজেএস কিছু বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের ট্যাংক সরবরাহ করেছে। এতে কিছুটা সংকট দূর হলেও তা যথেষ্ট নয়। প্রতিটি ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে সাত হাজার লিটার। একেকটি সেটে দু’টি করে ট্যাংকি বসিয়ে মোট ১৫ হাজার লিটার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেজেএস’র সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, কয়রা সদরে ১৮টি ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে ১৮টি বাড়িতে ১৮টি সেট স্থাপন করা হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে পানি ধরে রেখে যাতে পুরো বছর চালানো যায়।
দক্ষিণ বেদকাশী থেকে উপজেলা সদর ২০ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব আরও ১৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় ওই ঐ এলাকার মানুষদের। ফলে গুরুতর অসুস্থরা অনেক সময় কোয়াক ডাক্তার বা গ্রাম্য চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করেন। বাঘের আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকেই স্থানীয় চিকিৎসকের সেবা নিয়েই সুস্থ হয়েছেন এমন নজিরও মিলেছে সেখানে গিয়ে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, দক্ষিণ কয়রার বেদকাশী ইউনিয়নের তিনদিক ঘেঁষা ১৪/১ নম্বর পোল্ডার পুনর্বাসনের কাজ চলছে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি ব্লক বসিয়ে শক্তিশালী করা হচ্ছে। পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাজকিয়া জানান, “প্রকল্পটি এ বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। শেষ হতে আরও বছরখানেক লাগবে। এটি সম্পন্ন হলে মানুষের জীবন কিছুটা হলেও নিরাপদ হবে।”
বাংলাদেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৪৭ হাজার ২১১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে উপকূলীয় অঞ্চল। সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে যা দেশের এক-তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশের জল জীবন ও জলাভূমির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে পুরো দেশের সামগ্রিক অংশ সমভাবে গুরুত্ব বহন করলেও উপকূলীয় অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গোটা বাংলাদেশ দুর্যোগের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করলেও ভূতাত্ত্বিক অবস্থান হেতু এসব দুর্ভোগ-দুর্যোগ সবার আগে মোকাবিলা করে উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন। দেশের অন্যান্য অংশের মতো নদীভাঙন, বন্যা, খরা ভোগ করলেও অতিরিক্ত বিপর্যয়কারী হিসেবে নেমে আসে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো তাণ্ডব সৃষ্টিকারী দুর্যোগ। একটির ঝক্কি-ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই চলে আসে আরেকটি ঝড়-ঝঞ্ঝা। জোয়ারে প্লাবন আসবে, ভাটায় নেমে যাবে। ভারী বর্ষণে উজান থেকে তীব্রবেগে ছুটে আসবে গ্যালন গ্যালন পানি, ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সর্বস্ব। অতঃপর কিছুদিন বাদে নদী অববাহিকা মিশিয়ে সাগরে শান্তভাবে মিশে যাবে। আর বন্যাপরবর্তী লবণাক্ততার দরুন কৃষিজমির ক্ষতি তো লেগেই আছে। কয়েক মাস আগে ঘটা আম্পানের আগেও তারা মুখোমুখি হয়েছে সিডর, আইলা, রোয়ানু, মহাসেনের মতো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের। প্রতিবার আসে ধ্বংস করে দিয়ে যায় বসতভিটা, ঘরবাড়ি এবং সর্বোপরি সাজানো-গোছানো সংসার।
গতবছর ঠিক এই সময়েই উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের প্রভাব ছিল ভয়াবহ। উপকূলবাসী আজো ভয়ে আঁতকে ওঠে সেসব দুর্বিষহ দিনের স্মৃতিচারণ করে। এখনো বুকফাটা কান্না পায় সেসব নিদারুণ কষ্টের দিনের কথা ভেবে। জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়া বসতভিটা ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিলেও খাবারের কষ্টে দিনযাপন করতে হয়েছে। বসতভিটাসহ গবাদি পশু ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হয়েছে বহু পরিবারকে। জীবন বাঁচিয়ে রাখতে জল, জীবন ও জলাভূমির সঙ্গে যেন রীতিমতো যুদ্ধ। যে যুদ্ধে বরাবরই তারা নিঃস্ব কিন্তু হেরে যাওয়ার নয়। হার মানতে রাজি নয় এসব সহজাত প্রকৃতি-যোদ্ধা। কারণ তারা বুঝে গেছে এসব দুর্যোগ-দুর্ভোগ-দুর্বিপাক সঙ্গে নিয়েই তাদের জীবন। সমস্যার কথা জানতে চাইলে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করলেও প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চাওয়া— রিলিফ চাই না, চাই টেকসই বাঁধ। বহুবার পত্র-পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি, এসব জলবায়ু-যোদ্ধা বার বার রাস্তায় নেমেছে বাঁধের দাবিতে। জানিয়েছে উপকূল রক্ষাকারী বাঁধের দাবি। অনেকের হূদয় ছুঁয়ে গেছে এসব মানুষের আকুতি। কিন্তু ছুঁতে পারেনি আমাদের নীতিনির্ধারকদের কৃত্রিম হাওয়ায় জুড়িয়ে থাকা হূদয়। প্রতিবছর ঝড়-ঝঞ্ঝা ও জলোচ্ছ্বাসের পর বিপর্যস্ত থমকে যাওয়া জনজীবনে গতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাদের কাজ শুধু সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। উচ্চগতির পানি প্রবাহ রোধে যেসব বাঁধ কার্যকর তা নির্মাণ করা হচ্ছে না। হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও যথাযথ সংস্কারের অভাবে কার্যকারিতা হারিয়ে এখন জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে।
ষাটের দশকে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা বার বার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে এবং পুনঃসংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এখন এসব জীর্ণশীর্ণ বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষেত, চিংড়ির ঘের, লোকালয়ে সর্বনাশা লবণাক্ত পানি অনায়াসেই ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শেষ উপজেলা খুলনার কয়রা। প্রায় ২ লাখ জনঅধ্যুষিত অঞ্চলটি চারদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ জনপদ টিকে ধরে রেখেছ। বেড়িবাঁধের নাজুক অবস্থা ভেবে সর্বদাই স্থানীয়দের তটস্থ থাকতে এই ভেবে- কখন জানি লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে! বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানির প্রবাহে জনপদ প্লাবিত হলেও গ্রীষ্ম মৌসুমেও মাঝেমধ্যে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। কয়রায় শেষ প্রায় আট মাস আগে আম্ফানের প্রভাবে পানি ঢুকেছিল, সেই পানিবন্দি অভিজ্ঞতা অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে না হতেই ইয়াসের আগমন। এ আগমন আকস্মিক নয়। বিগত প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছিল ইয়াসের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ও মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি একটি অন্যতম বড় পর্যায়। কিন্তু যথাযথ তথ্য ও সতর্কতামূলক প্রচারণা থাকা সত্ত্বেও আমরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারেনি। স্থানীয় প্রশাসন ইয়াসের আগমনে এরূপ প্রতিকূল আবহাওয়ায় প্রবল স্রোতের বিপরীতে যে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, অনুকূল আবহাওয়ায় সেই কাজ করলে বেশি ফলপ্রসূ হতো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলেই রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৭ কিলোমিটার। কিন্তু এসব বাঁধ অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ ও নিয়মিত তদারকির অভাব হেতু নাজুক অবস্থায় রয়েছে, যা উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবনকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। উল্লেখ্য, সরকারের তরফ থেকে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রতিটি দুর্যোগের পরই জোড়াতালি দেওয়া হলেও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে সাতক্ষীরা-খুলনা-বরিশাল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। উপকূল সুরক্ষার প্রথম ও প্রধান শর্তই হলো সুরক্ষিত ও টেকসই বাঁধ ব্যবস্থাপনা। কিন্তু সমন্বিত কর্মসূচির আওতায় টেকসই বাঁধ ব্যবস্থাপনা যেন এখনো সুদূর পরাহত।
এখনো উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্বল পয়েন্টগুলোতে বাঁধের বড্ড অভাব, যা জনপদে পানি প্রবেশের বড় পথ হিসেবে কাজ করছে। ফলস্বরূপ প্লাবিত হচ্ছে জনপদ, বয়ে নিয়ে আসছে দুর্ভোগ। মানববিধ্বংসী এসব ঝুঁকি এড়াতে আমাদের স্থানীয় জনজীবনের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। নির্মাণ করতে হবে নিচে ১০০ ফুট, ওপরে ৩০ ফুট এবং ৩০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন শক্ত, স্থায়ী ও মজবুত বাঁধ, যা উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সঙ্গে স্থানীয় অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে আন্তঃসমন্বয় করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটবে না। আমাদের মনে রাখা দরকার স্বল্পমেয়াদি অদূরদর্শী কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে উপকূলীয় জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনা, উপকূলবাসীর চাক্রিক এই আর্তনাদ আহাজারি প্রশমন সম্ভব নয়। দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব থেকে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সুসমন্বিত পরিকল্পনা।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ বহুমাত্রিক সংকটে পড়ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, খাদ্য, বসতি, বিশুদ্ধ পানীয় জল, যাতায়াত এবং নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হতে হচ্ছে তাদের। দেশের সমুদ্র উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, ভোলা, কক্সবাজার জেলার মানুষকে চরম সংকটে ফেলছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে। এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে সদ্য সমাপ্ত ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ দেশের উপকূলীয় উপকূলে আঘাতে সম্পদ ও বাড়িঘর, পশুপাখি, মাছসহ তাদের মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি। আবার এসব অঞ্চলের নদীসমূহ অতিমাত্রায় জোয়ার-ভাটার কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব নদীতে সাগর থেকে জোয়ারের পানি আসে এবং ভাটায় ফিরে যায়। এ নদীগুলোর সঙ্গে পদ্মাপ্রবাহের কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণে সমগ্র এলাকা হচ্ছে জোয়ার-ভাটার প্লাবনভূমি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিগত কয়েক বছরে জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। সমুদ্রের অতিমাত্রায় জোয়ার -ভাটা এবং জলোচ্ছ্বাসে একদিকে নদীভাঙন অন্যদিকে সমুদ্রের পানির অতিমাত্রায় লবণাক্তায় এসব অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। লবণাক্ত পানি পান করে নারী, শিশুসহ প্রায় সব বয়সি মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের লাখো মানুষের। অন্যদিকে খুলনা বাগেরহাট, সাতক্ষীরা প্লাবনভূমির নিম্নাংশে অবস্থিত জগৎখ্যাত সুন্দরবন। সুন্দরবন থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টন গাছের পাতা এ অঞ্চলের গভীর জোয়ারের পানি নদীতে পড়ে এবং তা ধীরে ধীরে জলজ প্রাণীর খাদ্যকণায় রূপান্তরিত হয়। তাই এ অঞ্চলের জৈবিক উৎপাদনশীলতা পৃথিবীর যেকোনো এলাকার তুলনায় অনেক বেশি।
উপকূলীয় বাঁধ হওয়ার আগে জোয়ারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জলরাশি নদীগুলোর দুকূল ছাপিয়ে প্লাবনভূমিতে উঠে আসত এবং জোয়ারবাহিত পলি প্লাবনভূমিতে পড়ে তীব্র স্রোতে ভাটায় তা ফিরে যেত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন জোয়ার-ভাটার নদীগুলোর নাব্য বজায় থাকত, তেমনি ভূমির গঠন প্রক্রিয়া সমানতালে চলত। তা ছাড়া এখানকার কৃষকরা প্লাবনভূমির চারদিকে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে সাময়িক বাঁধ দিয়ে আমন ধান রোপণ করত এবং পৌষ মাসে বাঁধ ভেঙে প্লাবনভূমিতে জোয়ারবাহিত পলির কারণে সুযোগ করে দিয়ে ভূমি গঠন ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করত। ফলে নদীর নাব্য থাকত। এ কারণে এখানকার নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষিব্যবস্থা এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী; দেশের অন্যান্য উপকূল থেকে তা ভিন্নতর; কিন্তু এখানকার প্রকৃতি ও প্রতিবেশকে বিবেচনায় না নিয়ে ষাটের দশকে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে ৩৯টি পোল্ডার নির্মাণ করা হয়, এর আওতায় ১ হাজার ৫৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ও ২৮২টি স্লুইসগেট নির্মিত হয়। এ কারণে এই নদীগুলো স্থায়ীভাবে প্লাবনভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার ফলে জোয়ারবাহিত পলি প্লাবনভূমিতে পতিত হতে না পেরে নদীতে অবক্ষেপিত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে বহু নদী মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। অবশিষ্ট জোয়ার-ভাটার নদীগুলো পলি দ্বারা ভরাট হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর ফলে বিগত শতকের আশির দশকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা এবং ধীরে ধীরে তা হয়ে উঠেছে প্রলয়ঙ্করী ও বিধ্বংসী।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাবে উপকূলীয় মানুষের মধ্যে মানসিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করা ২২.৪৮ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। এ ছাড়া ৪৩.৯৫ শতাংশ মানুষের ভালো ঘুম হয় না। সম্প্রতি রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফরমের এই যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ।

জন্মভূমি ডেস্ক December 23, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

By জন্মভূমি ডেস্ক 42 minutes ago
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago
খুলনা

ডুমুরিয়ায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

By জন্মভূমি ডেস্ক 17 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago
সাতক্ষীরা

তালায় শাহ্জালাল ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

By জন্মভূমি ডেস্ক 20 hours ago
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের ২ নেতা গ্রেফতার

By জন্মভূমি ডেস্ক 23 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?