
সাঈদীর দাফন সম্পন্ন
জন্মভূমি ডেস্ক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা আয়োজন নিয়ে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ ঘটনায় কক্সবাজারে ১জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পুলিশসহ প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। পুলিশ বিভিন্নস্থান থেকে ৩০জনকে আটক করেছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে পিরোজপুর পৌরসভার মাছিমপুর সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
এদিন সকাল ১০টার দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পুলিশি পাহারায় সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে পৌঁছায়। সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী ঢাকা থেকে পিরোজপুরে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় জানাজা বেলা একটার দিকে শুরু হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজার শুরুতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী বক্তব্য দেন।
২০০৬ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে জামায়াত এবং ২০০১ সালে পুনরায় চার দলীয় ঐক্যজোট থেকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার হন সাঈদী। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
॥ বিএসএমএমইউতে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব ॥
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে সোমবার দিবাগত রাতে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু এবং পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সোমবার আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাত ৮টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। তার মরদেহ নিয়ে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে, গাড়ি ভাঙচুর করে বেশ কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে।
॥ রাজধানীতে গায়েবানা জানাজার অনুমতি দেয়া হবে না ॥
রাজধানীতে আজ বুধবার জামায়াতকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, সাঈদীর দুই ছেলে তাদের বাবার মরদেহ পিরোজপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুরু থেকেই পুলিশের কাছে অনুরোধ করে আসছিলেন। পুলিশও সেভাবে প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা করছিল। পরে তার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জামায়াত এবং তার আত্মীয় স্বজনরা তাণ্ডব চালিয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট ডেকেছিল। ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।
খন্দকার ফারুক আহমেদ বলেন, ফজরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল দখল করে নেয় জামায়াত নেতা-কর্মীরা। তারা ফেসবুকে অন্যদেরও শাহবাগে আসার আহ্বান জানায়। পরে পুলিশ মিনিমাম শক্তি প্রয়োগ করে তাদের সরিয়ে দেয় এবং মরদেহ পিরোজপুরে পাঠায়।
পুলিশ কমিশনার বলেন, তাদের চরিত্র যে পাল্টায়নি। সেই ২০১৩/১৪ সালে যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, হেলমেট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়েছিল, তা আবার প্রমাণ করল।
॥ কক্সবাজারে গোলাগুলিতে নিহত ১ ॥
কক্সবাজারের চকরিয়ায় দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলিতে ১ জন নিহত ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিতে নিহত ব্যক্তি হলেন- ফোরকান (৫০)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টায় চকরিয়া সরকারি হাইস্কুল মাঠে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় লোকজন সমাগম হতে থাকে। গায়েবানা জানাজার খবর পেয়ে চকরিয়া থানার পুলিশ অকুস্থলে পৌঁছালে চকরিয়া নিউ মার্কেট এলাকায় উত্তেজিত জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া শহরের থানা রাস্তার মাথা থেকে চকরিয়া জনতা শপিং সেন্টার পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ফলে মহাসড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য জাফর আলম বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়ে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
॥ চট্টগ্রামে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষ, আটক ৩০ ॥
চট্টগ্রামে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা আয়োজনকে কেন্দ্র করে জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর পরপরই পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ৩০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে।
এর আগে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আসরের নামাজের পর সাঈদীর গায়েবানা জানাজা আয়োজনের ঘোষণা দেয় জামায়াত। যদিও পরবর্তীতে সে কর্মসূচি স্থগিত করে দলটি। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মসজিদ এলাকায় আগে থেকে অবস্থান নেয় পুলিশ।
এদিকে, কর্মসূচি স্থগিত করলেও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা আসরের নামাজের আগে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে কাজির দেউরি মোড় পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, গায়েবানা জানাজার ঘোষণা দিয়ে জামায়াত আবার কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা দিয়েছিল। তারপরও তারা জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
॥ খুলনায় দাফন না করার দাবিতে রাতভর বিক্ষোভ ॥
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে খুলনায় দাফন না করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বসুপাড়া এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশার নেতৃত্বে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলে অংশ নেন মহানগর যুবলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আলী আকবর টিপুসহ নেতাকর্মীরা।
মিছিলটি সোনাডাঙ্গা থানার হাজি ইসমাইল রোড হয়ে শতরূপার মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে আবার ইসমাইল রোড হয়ে বসুপাড়া এলাকায় আসে। সেখানে সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসায় রাতভর বিক্ষোভ করে নেতাকর্মীরা।
এদিকে বসুপাড়ার সিদ্দিকীয়া মহল্লার মাদরাসা চত্বরে সাঈদীর যেন দাফন না হয় সেজন্য নগরীর সোনাডাঙা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মাদরাসার জমি দাতার ছেলে নজরুল ইসলাম। সোমবার রাতে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও আবেদন জানান।