বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে বিমা শিল্পের অগ্রগতি সেভাবে লক্ষণীয় নয়। বর্তমানে সাধারণ ও জীবন বিমা খাতে ৭৮টি কোম্পানি রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি দুটি সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা করপোরেশন এবং ব্যক্তি খাতে ৪৬টি সাধারণ ও ৩২টি জীবন বিমা কোম্পানি রয়েছে। জীবন ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে এখনো দেশের বিমা বাজারের পরিসর তেমন বড় নয়, সর্বসাকল্যে প্রিমিয়াম আয় ১২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। বিশ্বে বিমা শিল্পে আমাদের অবস্থান ৬৬তম। বলতে গেলে, বৈশ্বিক বিমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বিমা শিল্প খুবই নগণ্যÑ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ মাত্র। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন, মানুষের সচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে বিমা খাত এগোবে বলে আশা খাত সংশ্লিষ্টদের। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বিমার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। সমাজ ও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বিমা কোম্পানিগুলো এ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের যে লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে তা একটি শক্তিশালী বিমাশিল্প প্রতিষ্ঠায় অনেকটাই সহজতর করবে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশের মোট জনশক্তির মধ্যে বিমার আওতায় আছে ৮ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশের মোট দেশজ আয়ের মাত্র দশমিক ৫৫ শতাংশ বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়। যেখানে ভারত ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ২ শতাংশ, ফিলিপাইনে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্রিমিয়াম মাত্র ৯ ডলার। এছাড়া বিমা খাতে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান ৬৮তম। সম্ভাবনাময় খাত হলেও এর বিকাশ আর উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে স্বচ্ছতা ও আস্থার অভাব। এ খাতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, পরিচালকদের দুর্নীতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার অনেক উদাহরণ রয়েছে। প্রিমিয়াম সংগ্রহ, পুনর্বিমা, দাবি নিষ্পত্তিসহ কিছু বিষয়ে বড় দুর্নীতির অভিযোগ আছে। টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি শক্তিশালী বিমা খাত গড়ে তোলার এখনই সময়। এজন্য বিমা খাতের সংস্কার, আমূল পরিবর্তন ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া খুবই প্রয়োজন। সব বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। বিমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে, যা বিমা কোম্পানিগুলোকে বৈদেশিক বিমা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সহায়তা করবে।