জন্মভূমি রিপোর্ট
মৎস্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের চলতি মাসের হিসাবে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। অথচ চার বছর আগেও বিশ্বের মোট ইলিশের উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ আসত বাংলাদেশ থেকে। এই সময়ের মধ্যে এখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। সে তুলনায় প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশের পরই ইলিশের উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। পাঁচ বছর আগে দেশটিতে বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হতো। তবে চলতি বছর তাদের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশে নেমেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মিয়ানমারে উৎপাদন হয়েছে ৩ শতাংশের মতো। ইরান, ইরাক, কুয়েত ও পাকিস্তানে উৎপাদন হয়েছে বাকি ইলিশ।
ওয়ার্ল্ডফিশ, মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এবার শুধু পরিমাণের দিক থেকেই নয়, আকৃতিতেও বাংলাদেশের ইলিশের ধারেকাছে নেই কোনো দেশ। ২০১৪ সালে এ দেশে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন ছিল ৫১০ গ্রাম। গত বছর তা বেড়ে ৯১৫ গ্রাম হয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে চলতি বছর তা আরও বেড়ে ৯৫০ গ্রাম হতে পারে। অন্যদিকে ভারত, মিয়ানমার বা আরব সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোয় যে সামান্য পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে, তার গড় ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের মধ্যে। পুষ্টিগুণ ও স্বাদের দিক থেকেও বাংলাদেশের ইলিশকেই সেরা বলে থাকেন বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলা পর্যায়ের সেমিনার মঙ্গলবার সকালে গল্লামারীস্থ মৎস্য বীজ উন্নয়ন খামার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিটি মেয়র বলেন, অতীতে এদেশের নদী-খালে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতে। এখন নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। জলাভূমি দূষণ, দখল ও নির্বিচারে মাছ ধরে আমরা সে পরিস্থিতি নষ্ট করেছি। এমন কি নিজেদের স্বার্থে আমরা সুন্দরবনের বনজ ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে যাচ্ছি। দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। সেই সময় সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেয়। ইলিশরক্ষায় সরকারের নির্দেশনা মেনে চললে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
সেমিনারে জানানো হয়, দেশের জিডিপিতে ইলিশের আবদান এক শতাংশের বেশি। বিশে^ মোট আহরিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশে পাওয়া যায়, যার পরিমাণ বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। ইলিশ আহরণের সাথে দেশের পাঁচ লাখ মানুষ সরাসরি এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ পরোক্ষভাবে জড়িত। ইলিশের উৎপাদন ২০২৫ সাল নাগাদ ১৬ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে সরকার দুইশত ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ২৯ জেলার একশত ৩৪টি উপকূলীয় উপজেলায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় খুলনার বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া, রূপসা, তেরখাদা ও দাকোপ উপজেলায় মোট ৪৫০ জন মৎস্যজীবীকে প্রশিক্ষণ ও ৭৫০ মৎস্যজীবীকে বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ প্রদান করা হবে। এছাড়া ৪০টি সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সভা ও ইলিশ রক্ষায় ৬২০টি অভিযান পরিচালনা করা হবে।
খুলনা জেলার দিঘলিয়া, তেরখাদা, রূপসা, দকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার নদ-নদীতে বছরে ১৪ শ’ মেট্টিক টন ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী ১৬ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে। জেলার কাজীবাছা, রূপসা, ভৈরব ও আঠারোবেকী নদীতে ইলিশ বিচরণ করছে। মা ও জাটকা নিধন বন্ধ হলে এবং মধুমতি ও গড়াই নদীর প্রবাহ বাড়লে খুলনাঞ্চলে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মো: জিয়া হায়দার চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো: মাহবুবুর রহমান। এসময় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপপরিচালক মো: আব্দুদ দাইয়ান, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের সাবেক উপপরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
সেমিনারে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড কর্মকর্তা, মৎস্যজীবী, ট্রলার মালিক, মৎস্য ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত