দেশে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। উচ্চশিক্ষিত তরুণের ১২ শতাংশের বেশি বেকার। যারা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগই আশানুরূপ বেতন পান না। সীমিত আয়ে জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণেও হিমশিম খেতে হয়। কোনো দেশের জনশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের স্বল্পতার ফলেই সৃষ্টি হয় বেকার সমস্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। দুই দশক ধরে বেকারের সংখ্যা ২৪ থেকে ২৮ লাখের মধ্যে রয়েছে। একজন শিক্ষিত তরুণের যখন বেকার জীবনযাপন করতে হয়, তখন হতাশা নেমে আসে পুরো পরিবারের ওপর। গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। যার পেছনে কারণ হিসেবে থাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুশ্চিন্তা ও স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা।
বিবিএস বলছে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেকারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮০ হাজার। বিবিএসের এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে অর্থনীতিবিদরা একমত নন। তাদের মতে, প্রকৃত বেকারের সংখ্যা আরও বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকার মানুষের হিসাব করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের কাজের ধরন ও পরিবেশ ভিন্ন। তাই এ সংজ্ঞা ঠিক নয়। আমাদের দেশে যারা কাজ না পেয়ে ছোটখাটো কাজ করে, তাদের এই সংজ্ঞা দিয়ে বেকার বা কর্মে নিয়োজিত বলা যায় না।
দেশের শ্রমশক্তিতে আছে সাত কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ২০২২ সালে ছিল সাত কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ গত এক বছরে শ্রমশক্তিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চার লাখ মানুষ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করতে পারছে না। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা করেও প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে বেকার থাকেন অনেকেই। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে কর্মসংস্থান আরও হুমকির মুখে পড়েছে। সে আলোকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ সময়ের দাবি। বেকারত্ব যে কোনো দেশের জন্য অভিশাপস্বরূপ।
শিক্ষিতদের একটি বড় অংশ কর্মহীন হলে দেশের অর্থনীতিকে প্রত্যাশিতভাবে উন্নত করা অসম্ভব। বিগত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়া সত্ত্বেও মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দেশে কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগসহ বেশ কয়েকটি কারণে শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতাও বেড়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সরকার যদি বেকারত্ব কমাতে চায়, তবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে। যেখানে বেকার তরুণরা কাজের সন্ধান পাবেন। ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে সহজ এবং স্বল্প সুদে। এতে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। বেকার ভাতা চালু করা যায় কিনা, তা নিয়েও ভাবতে হবে।