জন্মভূমি ডেস্ক : সারাদেশে অনেকটা জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েকদিনের শীতের তীব্রতায় নাজেহাল মানুষ। দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এতে বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশা আর শীতের তীব্রতার কাছে সবাই যেন পরাস্ত। ভোর থেকে দিনের একটা লম্বা সময় কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে চারপাশ। অনেক স্থানে মাঝদুপুরে সূর্য দেখা দিলেও তেমনটা নেই উত্তাপ। ঠান্ডা বাতাসের কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছে সূর্যের তাপ।
শীতের মাস পৌষ শুরুর আগেই তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন তারা। অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট বেডের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা পারভীন বলেন, ‘১৩ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৫০-৬০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতের কারণে নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের ভর্তি হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে।’
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, ‘শীতের সময় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। শীতে ধুলা ও ঠান্ডা বাতাস থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে। প্রতিদিন শিশুদের শরীর মুছে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, টিকা দেওয়া থাকলে অনেক রোগ এড়ানো সম্ভব।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. রকিব সাদী বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ওষুধ সরবরাহে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তবে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধের চাহিদা জানিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে জরুরি বেশির ভাগ ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।’
পঞ্চগড়: উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ঠান্ডাজনিত রোগে জেলা সদর হাসপাতালসহ ক্লিনিকগুলোতে বাড়ছে রোগী। বিশেষ করে সর্দি, জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে সদর হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
বুধবার জেলা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত তিন দিনে হাসপাতালের বহির্বিভাগে যত রোগী ভর্তি হয়েছে তার অর্ধেক ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীর বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ।
রংপুর: শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের হাসপাতালেও বেড়েছে শীতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন অনেক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের বেশিরভাগ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী।
বুধবার রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রাশেদুল বলেন, কয়েকদিন ধরে তার চার বছরের মেয়ের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আজ রংপুরে এসে ডাক্তার দেখিয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, শিশুদের এই সময়ে বেশি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা বাতাস ও কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে পারলে, এসব ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হবে না।
মাদারীপুর: মাদারীপুরেও বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগী। প্রতিদিনই ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার শিশু ওয়ার্ড ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭০ জন রোগী ভর্তি ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৭০-৮০ জন শিশুরোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়াও বহির্বিভাগেও প্রায় প্রতিদিন অর্ধশত শিশু ও বৃদ্ধ চিকিৎসা নিচ্ছে। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহম্মদ খান বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের আমরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে আসছি। এ ছাড়া হাসপাতালের জনবল সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম: শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামে শিশুদের সর্দি ও জ্বর বাড়ছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আল-আমিন মাসুদ বলেন, শীতে সর্দি-জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তবে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক বলে তাঁর দাবি।
বেড়েছে শীতের প্রকোপ, ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু শিশু-বয়স্করা
Leave a comment