
এম সাইফুল ইসলাম
শহীদ হাবিবুর রহমান হাবিব । পিতা আশরাফ আলী খান । ঝালিকাঠির রাজাপুরে বাসিন্দা চিলেন তিনি। যুদ্ধচালাকালীন সময়ে রুপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন।
যুদ্ধের শুরুতেই বিদ্রোহী সেনা সদস্য মেজর জলিল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগদান করেন। চলে আসেন বাগেরহাট ও খুলনার দিকে। তাঁর পরামর্শে খুলনার মুক্তিকামী তরুণরা খুলনা রেডিও স্টেশন দখলের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তনুযায়ী ৩ এপ্রিল তাঁরা রূপসা নদী পাড়ি দিয়ে গল্লামারীতে রেডিও স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেন। এটিই খুলনায় প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ। রেডিও স্টেশন দখলে তরুণদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অবসর নেওয়া সুবেদার মেজর জয়নুল আবেদীন। তিনি ওই প্রতিরোধযুদ্ধে ছিলেন কমান্ডার। অধিনায়ক ছিলেন সেনাবাহিনীর নায়েক সিদ্দিক। পুরো পরিকল্পনার সমন্বয়কারী ছিলেন শেখ কামরুজ্জামান টুকু।
সেদিনের সেই বেতার কেন্দ্রের ভবনটি আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অংশ। এই ভবনটি ঘিরে জড়িয়ে আছে পাকিস্তানি সেনাদের নির্মমতা ও হত্যাযজ্ঞের নানা করুণ স্মৃতি।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পরই তরুণদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে খুলনা বেতার কেন্দ্র দখলের। মেজর জলিলের পরামর্শে ১৬০ জন তরুণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।
সিদ্ধান্ত হয় দুটি অংশ লক্ষ্যস্থলে আক্রমণ চালাবে। একটি অংশ বেতার কেন্দ্রের দেড় কিলোমিটার আগে কেন্দ্রে যাওয়ার প্রধান সড়কে থাকবে। এই অংশটির কাজ ছিল বেতার কেন্দ্রের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী যেতে চাইলে তাদের প্রতিহত করা। এই অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন কমান্ডার সুবেদার মেজর জয়নুল আবেদীন।
বেতার কেন্দ্র আক্রান্ত হয়েছে জানতে পেরে সেনা কনভয় এগোতে থাকে বেতার ভবনের দিকে। পথে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার মেজর জয়নুল আবেদীনের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সেখানে জয়নুলের সঙ্গে থাকা ২০ জন তরুণ বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর তিন ঘণ্টা মরণপণ লড়াই চলে। তবে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে টিকতে পারেননি তাঁরা। তার পরও এই বীররা হতোদ্যম হননি। বীরদর্পে প্রতিরোধ করে গেছেন। ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার সময় জয়নুল আবেদীন শহীদ হন।
পথের প্রতিরোধ ভেঙে গেলে কনভয় দ্রুত বেতার কেন্দ্রের দিকে এগোতে থাকে। এ খবরে কামরুজ্জামান টুকু অগ্রবর্তী দলকে পিছু হটার নির্দেশ দেন। ততক্ষণে বেতার কেন্দ্র এলাকায় শহীদ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হাবিব ।