গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : একটা সময় ছিল যখন গ্রাম বাংলার প্রতিটা ঘরের রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া আর অতিথি অ্যাপায়ণসহ অধিকাংশ কাজেই মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হতো। স্বাস্থ্যকর আর সহজলভ্য ছিলো বলে সব পরিবারেই ছিল এই মৃৎশিল্পের ব্যবহার। কিন্তু, কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যগণ এই মৃৎশিল্প। এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্যসব সময়ে না থাকলেও পহেলা বৈশাখের উৎসবে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর বেড়ে যায়। চৈত্রের রৌদ্রদগ্ধ দিন জানান দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। আর সেই উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তালা উপজেলাসহ সাতক্ষীরা এলাকায় হারিয়ে যেতে বসা এই মৃৎশিল্পের অল্পসংখ্যক কারিগররা।
বর্তমানে তালা উপজেলার নগরঘাটা, আলাদীপুর, জাতপুর, শিবপুর, সাতক্ষীরার বাবুলিয়া, সুলতানপুর, গড়েরকান্দা, ইটাগাছা, ধুলিহর, ঝাউডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকার ৫ শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে। তারা পহেলা বৈশাখ ও ঈদকে সামনে রেখে তাদের দক্ষ হাতের সুনিপুণ নৈপুণ্যে তৈরি করছেন মাটির তৈরি হাড়ি, কলস, ঢাকনা ও ঘর সাজানোর উপকরণসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র।
তালঅর নগরঘাটা গ্রামের দুলাল পাল জানান, ‘বংশ পরম্পরায় ও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এখনও মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন তারা। দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করা এটেল মাটি দিয়ে তৈরি করা পাত্রগুলোকে প্রথমে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। পরে শিল্পীর নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় রঙের তুলির আঁচড়ে ফোটানো সব চমৎকার নিদর্শন তৈরীর পর সেগুলো সাইকেল, ভ্যান বা মাথায় করে দূর থেকে দূরান্তরে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতেন তারা। আর তাতেই চলতো তাদের সংসার।’
তিনি বলেন, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধাতব, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পণ্য সহজে বহনযোগ্য আর সস্তা মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজ বিলীন হতে চলেছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যগণ এই মৃৎশিল্প। এদিকে কুমারদের দাবি, তৈরিকৃত মাটি, উপকরণ ও পোড়ানোর খরচ বেশি হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে অনেক পরিবার।
এ সময় তালার শান্তি পাল, বিধান পাল, উত্তম পালসহ কুমার সম্প্রদায়ের কয়েকজন বলেন, বৈশাখ মাসটা তাদের পালনী মাস। এইজন্য চৈত্র মাসে তাড়াহুড়ো করে কাজ করেন। বৈশাখে মেলা হয় যেখানে তাদের পণ্যগুলো বিক্রি হয়। নতুন বছর শুরুর এই সময়টায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয় বেশি। এ আয়ের ওপরই তাদের বছরের বাকি দিনগুলো চলায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসব সামনে রেখে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর কিছুটা বেড়েছে। তবে ধীরে ধীরে মৃৎশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত