হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন শিক্ষার্থী মো. সিফায়েত চৌধুরী (২৬)। উন্নত চিকিৎসার অভাবে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। অর্থাভাবে তার পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছে না। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাপাইল গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে এমন তথ্য মিলেছে।
বৃহস্পতিবার সিফায়েতের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আসাদ চৌধুরী ও মরজিনা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সিফায়েত। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় দুই ভাই মসজিদে ইমামতি করে। পাশাপাশি কৃষি কাজ করে। এছাড়া তার অন্য আয়ের উৎস নেই। কোনোমতে তার সংসার চালান। ভাইদের সহযোগিতা ও টিউশনি করেই এত দিন পড়ালেখা করেছে সিফায়েত। বিএ পাস করে গত ১৫ জুলাই ঢাকায় উঠেছিলেন বড় বোনের বাসায়। উদ্দেশ্য ছিল মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া ও চাকরির চেষ্টা করা। গত ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ বৈষম্যবিরোধি ছাত্রআন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন সিফায়েত। অন্য আন্দোলনকারিরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসার পর তাঁকে নেয়া হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে গত ৩০ আগস্ট ছাড়পত্র নিয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চাপাইলে গ্রামের বাড়িতে আসেন।
সিফায়েত ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। ভালো করে কথা বলতে পারছেন না। অর্থের অভাবে তাঁর উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। একজন অসুস্থ রোগির যে খবার অর্থাভাবে সেই খাবার তাকে দিতে পারছেন না। সিফায়েত কাপাকাপা কণ্ঠে বলেন, ‘৫ আগস্ট নবীনগরে আন্দোলনে গিয়েছিলেন। আরও অনেক লোক ছিল। আন্দোলনে পুলিশ ছররা গুলি মারে। এরপর যা ঘটেছে, তা তিনি কিছুই বলতে পারেননি। কোন কিছু মনে করতে পারছেন না।
সিফায়েতের ভাই জুলাইয়ের জানায় ৫ আগস্ট হঠাৎ একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, আন্দোলন গিয়ে সিফায়েত মারা গেছে। তিনি ঢাকায় গিয়ে দেখেন সিফায়েতের চার থেকে পাঁচটি গুলি লেগেছে। অপারেশন করে তা বের করা হয়েছে। প্রথম দিকে দামি ওষুধপত্র অধিকাংশই নিজেদের কিনতে হয়েছে। পরে সরকারিভাবে চিকিৎসা হয়। কিন্তু ঢাকায় থাকা-খাওয়া ও ওষুধ কেনার খরচ বহন করতেই তাঁদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন আর সিফায়েতের চিকিৎসা ব্যয় টানার মতো সক্ষমতা তাঁদের নেই।
বড় ভাই রুবেল চৌধুরী বলেন, ‘সিফায়েতের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না। সুস্থ হতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তারা সরকারের কাছে ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান।
তাদের প্রতিবেশি ইউছুফ ও তবিবর বলেন, ‘ সিফায়েতরা গরিব মানুষ। তাদের কোন রকম সংসার চলে। সিফায়েতের গুলি লাগার খবর পাওয়ার পর ঢাকা যাওয়ার টাকা প্রতিবেশিরা দিয়েছে। পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘ সিফায়েত আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে সে পুরো সুস্থ হয়নি। তার আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। তাদের আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো না। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেয়া না হলে সে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না।