চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধ
জন্মভূমি ডেস্ক : রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা প্রভাব ফেলছে দেশের উৎপাদনশীল সব খাতে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তার প্রভাব অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আবাসন খাতে মন্দাভাব ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রড উৎপাদনকারী বেশিরভাগ স্টিল ও রি-রোলিং কোম্পানির বিক্রি কমেছে। ফলে কোম্পানিগুলোর আয়ও কমেছে। যদিও রডের উচ্চ দামের কারণে এ সময় তাদের মুনাফা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের সক্রিয় ছয় রড উৎপাদনকারী কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে ছয়টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই রড বিক্রি কমেছে চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর)। যদিও এ সময় চার কোম্পানির ইপিএস (শেয়ারপ্রতি আয়) বেড়েছে। তবে তালিকাভুক্ত ছাড়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর পণ্য বিক্রিও চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে ডলার সংকটে কোম্পানিগুলো নতুন করে ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হয়েছে। আর নির্বাচনকালে সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ থাকায় রড ও ইস্পাত সামগ্রীর চাহিদা কম ছিল। তাই কোম্পানিগুলোর বিক্রি কমেছে। এজন্য চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবসায় কিছুটা মন্দাভাব ছিল।
তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস চলতি হিসাববছরের প্রথম ছয় মাসে তিন হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার রড ও ইস্পাত সামগ্রী বিক্রি করে। ২০২২ সালের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির চলতি হিসাববছরের প্রথম ছয় মাসে বিক্রি কমেছে ৩৭২ কোটি টাকার। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির পণ্য উৎপাদনে খরচ ছিল তিন হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।
গত ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৬ টাকা ২৫ পয়সা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে হয়েছিল তা ৩ টাকা ৬৯ পয়সা ঋণাত্মক। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১৪৪ টাকা ২২ পয়সা, যা ৩০ জুন ২০২৩ ছিল ১৪০ টাকা ৪৬ পয়সা।
বিএসআরএম স্টিলস ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২৩) তিন হাজার ৬৩১ কোটি টাকার রড ও ইস্পাত সামগ্রী বিক্রি করে, যা ২০২২ সালে একই সময়ে ছিল তিন হাজার ৭০২ কোটি টাকা। এ হিসাবে বিক্রি কমেছে ৭১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির পণ্য উৎপাদনে খরচ হয়েছে তিন হাজার ১৩০ কোটি টাকা। চলতি হিসাববছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ২৪ পয়সা। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ কোম্পানিটির এনএভিপিএস ছিল ৭৪ টাকা ৯৪ পয়সা, আগের প্রান্তিক শেষে (৩০ জুন ২০২৩) ছিল ৭৩ টাকা ৩২ পয়সা।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ২০২৩ সালের শেষ ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২২৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল, যা আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ২৫৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। চলতি হিসাববছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ৯ পয়সা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ৩০ পয়সা। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১৮ টাকা ৬৪ পয়সা, যা ৩০ জুন ২০২৩ ছিল ১৮ টাকা ৮৮ পয়সা।
জিপিএইচ ইস্পাত ২০২৩ সালের শেষ ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দুই হাজার ৮১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ে হয়েছিল দুই হাজার ৮২২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩২ পয়সা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭৬ পয়সা ঋণাত্মক। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৫০ টাকা ৮০ পয়সা, যা ৩০ জুন ২০২৩ ছিল ৫৩ টাকা ৮ পয়সা।
ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ইপিএস হয়েছে ২ পয়সা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ২৯ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৭৪ টাকা ৯৪ পয়সা, যা ৩০ জুন ২০২৩ ছিল ৭৩ টাকা ৩২ পয়সা।
এসএস স্টিল ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২৩) এক হাজার ৩৯ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ৭৬২ কোটি টাকা। এ হিসাবে চলতি হিসাববছরের ছয় মাসে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২৭৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ পয়সা, যা ২০২২ সলের শেষ ৬ মাসে ছিল ২ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৩ টাকা ৮৯ পয়সা, যা ৩০ জুন ২০২৩ ছিল ২৩ টাকা ৯৯ পয়সা।
প্রসঙ্গত, স্টিল উৎপাদনকারী দুই কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ও অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।