আর মাত্র একমাস পরেই বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হবে ইটভাটা। দাদন দেয়া এবং অগ্রিম ইট ক্রয়ের কাজ চলছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে খুলনায় ইটের আকার ছোট করে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। ইট ব্যবসা ভালো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় বহু ইটের ভাটা। মালিকরা ভাটা মৌসুম শুরুর আগে ভোক্তাদের নিকট থেকে দাদন গ্রহণ করেন। পরে নতুন ইট উঠলেই ভোক্তাদের নিকট থেকে গ্রহণ টাকা আকারে ছোট ইট দিয়ে বুঝিয়ে দেন। খালি চোখে বিষয়টি দৃষ্টিগত না হলেও ইট কেনার পর কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন নির্মাতা ও ঠিকাদাররা।
এমন প্রতারণার সত্যতা স্বীকার করলেও জনবল সংকট ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এমনটি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম কবির বলেন, সরকারি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটি ইটের আকার হতে হবে সাড়ে ৯, সাড়ে ৪ এবং পৌনে ৩ ইঞ্চি বা ১১৭ দশমিক ৫৬ ঘনইঞ্চি। বাস্তবে ল্যাব টেস্টে দেখা যায়, ভাটার অধিকাংশ ইটের আয়তনই মাত্র ৯৫ থেকে ৯৮ ঘনইঞ্চি। ফলে প্রকৌশলীরা ড্রইং ডিজাইন ধরে যত নিখুঁত এস্টিমেটই করেন তাতে কোন লাভ হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা জেলায় চলমান প্রায় সকল ইট ভাটায় ইটের আকার ছোট করে ফেলেছে। একাধিক ভোক্তা বলেন, ভাটা মালিকরা ইটের স্টান্ডার্ড সাইজ ঠিক না রেখে আকারে ছোট করে বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা অবৈধ ভাবে মুনাফা অর্জন করছেন। তারা জানান, অবকাঠামো নির্মাণের শুরুতেই প্রকৌশলীর দেয়া ড্রইং/ডিজাইন ও পরিমাপগত নির্দেশনা মতো কাজ শুরু করার পরই দেখা দিচ্ছে যত বিপত্তি। যে কারণে কোনভাবেই তারা হিসাব মিলাতে পারছেন না। ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রাক্কলিত ব্যয়। বাড়ি নির্মাণ কাজে হাত দিয়ে এ ঝামেলায় পড়েছেন খুলনার টুটপাড়া এলাকার টেলিফোন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়র শামছুর রহমান। তিনি বলেন, ১২০০ বর্গফুটের এক ইউনিটের ভবন করতে প্রকৌশলীর কাছ থেকে ডিজাইন, নির্মাণ সামগ্রীর পরিমাণগত নির্দেশনা ও প্রাক্কলন ব্যয়ের ধারণা নিয়ে কাজে হাত দেয়া হয়। পূর্ব নির্ধারিত ৩০ হাজার ইটের ধারণা ভেঙ্গে যেয়ে ৪০ হাজার ইট ক্রয় করতে হয়েছে। শুধু ইট ক্রয়েই প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেশী লেগেছে। সিমেন্ট, বালু, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ তো রয়েছেই।
বিষয়টি প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইটের আকার ছোট হওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে। এমন ভোগান্তিতে পড়া ঠিকাদার সোহেল রানা জানান, সরকারি দরপত্রের প্রাক্কলন ব্যয় ধরে কাজ করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী ইটের সংখ্যা ধরে নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। সড়ক কিংবা ভবন নির্মাণে এক দিকে ধারণার চেয়ে বেশী ইট লাগছে, খোয়া তৈরীর সময়েও ইট এবং সিমেন্ট বালুর খরচ বেশী পড়ছে। নির্মাণ শ্রমিক কামাল উদ্দিন বলেন, ইটের আকার ছোট হওয়ায় শুধু মালিকরাই লোকসানের শিকার হচ্ছেন না, লেবার বেশি লেগে যাওয়ায় চুক্তিভিত্তিক কাজে আমাদেরকেও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ইট তৈরির সঠিক নির্দেশনা দেয়া আছে। কিছু অসাধু ইট ভাটা মালিক অধিক মুনাফা লাভের আশায় তারা নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভোক্তাদের ঠকিয়ে চলেছে। এদিকে ইটের আকার ছোট করার কথা স্বীকার করে কয়েকজন ইট ভাটা মালিক বলেন, এতে ভাটা মালিকদের কোন দোষ নেই। ক্রেতারা এক হাজার ইট ক্রয় করতে যেখানে এক টাকা কম পান সেখাইে চলে যান। সে কারণে ভাটা মালিকরাও ইটের আকার ছোট করছেন। ব্যবসায় লাভ করার জন্যই ভাটা মালিকরা আগে থেকে ইট তৈরীর ফর্মা ছোট বড় করে থাকেন। এখানে সরকারি বিধিমালা থাকলেও কিছু করার নেই।
ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা ফোরামের সাবেক সভাপতি, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট বাবুল হাওলাদার দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, ইট ভাটা মালিকরা অবশ্যই ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করছেন। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে এবং খুলনা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইটভাটা মালিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।