
১৩৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ২৪০ টাকায় ঠেকেছে। অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে দেশের সব পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একদিন আগের ১২০ টাকার পেঁয়াজ খুলনার খুচরা বাজারে এখন কেজি প্রতি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারত আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে এর দাম রাতারাতি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। খুলনার বড়বাজার ও ট্রাকস্ট্যান্ড পাইকারী বাজারে এক রাতের ব্যবধান পেয়াজ উধাও হয়ে গেছে।
শনিবার খুলনার মিস্ত্রীপাড়া, সন্ধ্যা বাজার, নিউমার্কেট ও রুপসা বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে বাজারে স্থিতিশলতা আনতে অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম। নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে পাতাসহ ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
মোংলায় এক রাতের ব্যবধানে মোংলায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল শুক্রবার যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১০টাকায়, সেই পেঁয়াজ রাতের ব্যবধানে শনিবার সকালে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। শনিবার সকালে বাজারে এসে পেঁয়াজের দাম শুনে চোখ যেন মাথায় উঠে গেছে ক্রেতাদের। বাড়তি দাম শুনে কেউ পেঁয়াজ না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, আবার কেউ সাধ্যমত স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ কিনে বাড়ি ফিরছেন।
ক্রেতা দিনমজুর আলী আকবর বলেন, ১১০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১৫০-১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। কীভাবে এতো বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে খাব। অন্যান্য মালের দামও বেশি, আমাদের পরিবার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি ক্ষণেক্ষণে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এজন্য পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ছাড়ছেই না।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে, মাথায় হাত বেশিরভাগ ক্রেতার। এক রাতের ব্যবধানে, কেজিতে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে পেঁয়াজের।
এক রাতের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ল প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) হিলিতে খুচরা বাজারে এই চিত্র দেখা গেছে।
ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ সংকট ও দাম বৃদ্ধির অজুহাতে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওযায় এই অস্থিরতা দেখা দেয় পেঁয়াজের বাজারে। হিলি স্থলবন্দরের মোকামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া ৮০০ মার্কিন ডলারের রপ্তানি মুল্যে আমরা হিলি বন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করছি। কিন্তু ইতোমধ্যে ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এমন হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সারাদেশে ৫৭টি টিম কর্তৃক বাজার অভিযানের মাধ্যমে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই অভিযান আজ রোববারও চলবে। শনিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার সারাঙ্গী স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের আগে যেসব পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেসব পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। এই আদেশ আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওই আদেশে বলা হয়েছে।