
ডেস্ক রিপোর্ট : গত মাসে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এনেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, দুর্ঘটনার ঠিক আগে ককপিটে পাইলটদের শেষ কথোপকথনে দেখা গেছে, বিমানের ক্যাপ্টেন ইঞ্জিনে জ্বালানির প্রবাহ বন্ধ করেছিলেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের পরই ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডার জিজ্ঞেস করেন, কেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল জ্বালানি কাট-অফ সুইচ বন্ধ করে দিলেন। তখন তিনি ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কিন্তু ক্যাপ্টেন ছিলেন শান্ত।
ভারতের এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এআইআইবি) প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি আকাশে ওঠার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি কন্ট্রোল সুইচ বন্ধ হয়ে যায়। উড্ডয়ন থেকে ক্র্যাশ পর্যন্ত সময় ছিল মাত্র ৩২ সেকেন্ড।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪১ জনের মধ্যে ২৪০ জন নিহত হন, যার মধ্যে দুই পাইলটও ছিলেন। ওই দুই পাইলটের একজন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল। তার ১৫ হাজার ৬৩৮ ঘণ্টার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর দ্বিতীয় পাইলট হচ্ছেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডার। তার ৩ হাজার ৪০৩ ঘণ্টার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এছাড়া দুর্ঘটনার পর মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন মারা যান। মাত্র একজন যাত্রী জীবিত বেঁচে ফেরেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল কি ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি সুইচ বন্ধ করেছিলেন? ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, তদন্তকারীরা এখনো নিশ্চিত নন যে এটি পাইলটের ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত ছিল, নাকি দুর্ঘটনাবশত ঘটে গেছে। তদন্ত এখনো চলছে।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী কিঞ্জারাপু রাম মোহন নাইডু জানিয়েছেন, এআইআইবি-এর এই রিপোর্ট শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের, এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়। তিনি বলেন, এখনই চূড়ান্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমাদের পাইলটদের দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটস (এফআইপি)-এর সভাপতি সিএস রণধাওয়া ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তার দাবি, এআইআইবি-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে কোথাও বলা হয়নি যে পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি সুইচ বন্ধ করেছিলেন।
এদিকে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের (ডিজিসিএ) নির্দেশে এয়ার ইন্ডিয়া এরই মধ্যে তাদের পুরো বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচের লকিং মেকানিজম পরীক্ষা করেছে। কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
তারা আরও জানায়, তাদের সব বিমানে বোয়িং-এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা অনুযায়ী থ্রটল কন্ট্রোল মডিউল (টিসিএম) বদল করা হয়েছে। ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ টিসিএম-এর অংশ হিসেবেই কাজ করে।