জন্মভূমি ডেস্ক : তার অপরাধ, চার বছর আগে তার বোন চারজনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন এবং মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। চার বছর আগের সেই ঘটনার মাশুল দিতে হলো এতদিন পর। শ-খানেক লোকজন এসে হাজির হয়েছিল অভিযোগকারিণীর বাড়িতে। তাকে বেধড়ক মারধর করার পাশাপাশি নগ্ন করে মারধর করা হয় তার মাকে। সেই সঙ্গে পিটিয়ে মারা হলো তার ১৮ বছর বয়সি ভাইকে।
ভয়ঙ্কর এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলায়। মৃত যুবকের বোন জানিয়েছেন, চার বছর আগে সেই অভিযোগে ভিত্তিতে যারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল, এদিনের ঘটনার পিছনেও তাদেরই হাত রয়েছে।
মৃতের মা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে এমন বেধড়ক মারা হয় যে তাকে বাঁচানো যায়নি। কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে তিনি বলেন, ‘আমাকে সবার সামনে বিবস্ত্র করে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে আমাকে একটা তোয়ালে দেয়। যতক্ষণ না আমাকে একটা শাড়ি দেওয়া হয় ততক্ষণ আমি ওই তোয়ালে জড়িয়েই দাঁড়িয়ে ছিলাম।’
নিহতের মা আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে সবকিছু লন্ডভণ্ড করে দিয়েছে। এমনকি ঘরের চালটুকুও আস্ত নেই। একটি বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পর তার আরও দুই ছেলের খোঁজে অন্য একটি বাড়িতেও গিয়ে হামলা চালায় অভিযুক্তরা।
মৃতের কাকি জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা তাদের বাড়িতেও ঢুকে পড়ে এবং তার স্বামী ও সন্তানদের হুমকি দেয়। তিনি বলেন, ‘ওরা আমার সন্তান ও স্বামীকেও মেরে ফেলত। এমনকি আমাদের ফ্রিজ খুলেও তল্লাশি করেছে ওরা।’
এই ঘটনার পরেই গ্রামে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মৃতের পরিবার ইতোমধ্যেই ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে। ঘটনায় নয় জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তিনজনের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি/ তফসিলি উপজাতি আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জীব উইকে।
গ্রামের পরিস্থিতি খুবই উত্তেজক। ছেলের দেহের সৎকার করতেও পরিবার প্রথমে অস্বীকার করেছিল। তারপর জেলাশাসক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। গ্রামে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই ঘটনার পরেই কংগ্রেস ও বহুজন সমাজ পার্টি জানিয়েছে, বিজেপি সরকারের নীতিই এজন্য দায়ী। কংগ্রেস সভাপতি ও দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, মধ্যপ্রদেশে দলিত ও আদিবাসীদের উপর সমানে অত্যাচার হচ্ছে।
খাড়গের দাবি, ভারতের মধ্যে মধ্যপ্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের ঘটনা ঘটে। এই রাজ্যই হলো দলিতদের উপর অত্যাচারের গবেষণাগার।