জন্মভূমি ডেস্ক : ভারতে শুল্কমুক্ত রপ্তানি ও সুতি লুঙ্গির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারত পরিণত হয়েছে বাংলাদেশি লুঙ্গির প্রধান বাজারে।
ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতিবছর ৩০ লাখ পিস লুঙ্গি ভারতে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। লুঙ্গির পরেই রপ্তানি হচ্ছে টি শার্ট। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল পাকিস্তান। বর্তমানে পাকিস্তানের লুঙ্গি ভারতে আর আসছেই না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ভারতে প্রতি বছর বাংলাদেশ ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এরমধ্যে প্রথমেই রয়েছে লুঙ্গি। ভারতে লুঙ্গি রপ্তানির হয় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের।
বিশ্বে প্রথম লুঙ্গি রপ্তানি শুরু করে হেলাল এন্ড ব্রাদার্স। তাদেও লুঙ্গিও নাম হলো আমানত শাহ লুঙ্গি। এর পওে আরো প্রায় ১২৫টি ব্র্যান্ডের লুঙ্গি বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
লুঙ্গি উৎপাদনকারীরা জানান, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা বিশ্বে বাড়ছে দেশি লুঙ্গি রপ্তানির পরিমাণ। আবার দেশে জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় স্থানীয় বাজারেও এই পণ্যের চাহিদা বেড়েই চলেছে। দেশে লুঙ্গির বাজার বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। আর লুঙ্গি রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ১০ লাখ ডলারের বেশি। বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে ২৫ কোটি পিস লুঙ্গি। পাঁচ বছর আগেও লুঙ্গির স্থানীয় বাজার ছিল বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার। রপ্তানি আয় ছিল কয়েক লাখ ডলার। এ ছাড়াও, অনানুষ্ঠানিকভাবে এক হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের লুঙ্গি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। লুঙ্গির স্থানীয় বাজার প্রতিবছর ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে।
গ্রামের তুলনায় শহরে লুঙ্গির চাহিদা কম। লুঙ্গি এখনো গ্রামের মানুষের অন্যতম প্রধান পোশাক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে কমপক্ষে ২৫ দেশে লুঙ্গি পাঠানো হয়। সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারত, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা এর প্রধান ক্রেতা। প্রতিবছর লুঙ্গির চালান বাড়ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিতে ভালো করছে।
আলাউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস (এটিএম) প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার সাহা বলেন, সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান লুঙ্গি তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে ৪০ মিলিয়ন লোক লুঙ্গি পড়েন। তাদের বছরে ২টি করে লুঙ্গির চাহিদা থাকলেও বছরে ৮ কোটি লুঙ্গিও প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি বিদেশে থাকেন। তাদের প্রায় সবারই কমপক্ষে একটি লুঙ্গি আছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজন বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লুঙ্গি সংগ্রহ করেন।
লুঙ্গি উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ লুঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার্স ট্রেডার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএমটিইএ) সদস্য ২৫০-র কাছাকাছি। দেশে লুঙ্গি উৎপাদকের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। চারটি বড় সুতা কারখানা বর্তমানে লুঙ্গির সুতা তৈরি করছে।
নরসিংদী, নরসিংদীর বাবুরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া এবং ঢাকার নবাবগঞ্জ ও রুহিতপুর লুঙ্গির জন্য বিখ্যাত। দেশে ৬০ হাজারেরও বেশি তাঁতি সরাসরি লুঙ্গি তৈরির সঙ্গে জড়িত। পরোক্ষভাবে জড়িতদের নিয়ে হিসাব করলে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে।
ভারতে পোশাক রপ্তানিতে এক নম্বরে বাংলাদেশের লুঙ্গি
Leave a comment