জন্মভূমি ডেস্ক : মাতৃভাষার দাবিতে জ্বলে ওঠা সেই দিনটি ছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। এদিন বেলা ১১টায় আমতলার সভায় এসেছিল ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত। সভাপতির ভাষণে ছাত্রদের মাঝে বিদ্রোহের উত্তাপ ছড়িয়ে গাজীউল হক বলেন, ‘নুরুল আমিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করেছে।
১৪৪ ধারা ভাঙা হলে নাকি গুলি করা হবে, ছাত্রদের হত্যা করা হবে। আমরা সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি। ১৪৪ ধারা আমরা ভাঙব। আমরা দেখতে চাই নুরুল আমিন সরকারের অস্ত্রাগারে কত বুলেট জমা আছে।’ সেই উদ্দীপ্ত বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান ওঠে, ১৪৪ ধারা মানি না-মানি না। গগনবিদারী স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সত্যাগ্রহ করতে দশজনের দল করে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। কে প্রথম ভাঙবে ১৪৪ ধারা, তা নিয়ে ছিল দ্বিধাদ্বন্দ্ব।
মোহাম্মদ সুলতানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যারা সত্যাগ্রহ করতে বাইরে যাবেন তাদের নাম, ঠিকানা লিখে রাখার। তাকে সাহায্য করেন আজহার ও হাসান হাফিজুর রহমান। নামধাম লিখে নেওয়ার জন্য মোহাম্মদ সুলতান এগিয়ে আসতেই মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী (পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) বলে ওঠেন, ‘তুই আমার পঙ্খিরাজটা (সাইকেল) দেখিস, আমি চললাম।’ গলা ফাটিয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে। ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রথম দলের নেতৃত্ব দিয়ে প্রথম দলের সঙ্গে বেরুলেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
১৪৪ ধারার ভাঙার ঘটনা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, ‘তখন বেলা সোয়া একটা। উত্তেজনায় সারা গা থেকে তখন আগুনের ভাপ বের হচ্ছে। প্রথমে পুলিশ আমাদের ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং পরে রাস্তার একধারে ঘেরাও করে রাখে। আমরা এগিয়ে যাওয়ার পর যখন অন্য ছাত্ররা গেট পার হয়ে রাস্তায় নামতে শুরু করল তখন আমাদের কয়েকজনকে পুলিশ একটা ট্রাকে তুলে নিল।
এর পর দলে দলে মানুষ বের হতে শুরু করে। ১৪৪ ধারা ভাঙা ও গ্রেপ্তার বরণের এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে গাজীউল হক বলেন, ‘দ্বিতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়ে জনাব ইব্রাহীম তাহা ও জনাব আবদুস সামাদ বাইরে বেরুলেন। তৃতীয় দল নিয়ে বেরুলেন আনোয়ারুল হক খান এবং জনাব আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তিনটি সত্যাগ্রহী দলকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং ট্রাকে তুলে নেয়।
এসময় পুলিশের তরফ থেকে গেটে একটি হামলা ও লাঠিচার্জ হয়। এর ফলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম চতুর্থ দলটি যাবে সাফিয়ার নেতৃত্বে। এই দলে বেশ কয়েক ছাত্রী ছিলেন। রওশন আরা বাচ্চু, ডা. সাফিয়া, সুফিয়া ইব্রাহিম, শামসুন নাহার প্রমুখ।
পুলিশ এর পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে। এসময় কিছুক্ষণের জন্য ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের মাঝখানের প্রাচীর টপকে মেডিক্যাল হোস্টেলের প্রধান ফটকের কাছে আবার জমায়েত হন। গ্রেপ্তারবরণ চলতে থাকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত