বিজ্ঞপ্তি : ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে বাংলা ভাষা চর্চা আশানুরুপ হচ্ছে না। নিজেদের পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ সব জায়গায় বাংলা ভাষা চর্চা করা প্রয়োজন। ভাষা আন্দোলনের চেতনা হল বাঙ্গালীর সংস্কৃতি, ঐহিত্য ও অধিকারের আন্দোলন। তবে এখন দুঃখ হয় রেডিও, টেলিভিশনে রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রায় সকলেই বাংলা ভাষা ভুলভাবে উচ্চারন করেন। একজন ভাষা সৈনিক হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার ও প্রসার। সম্মাননা স্মারক প্রদানকালে ভাষা সৈনিক বেগম মাজেদা আলী এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকালে গুনীজন স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে ভাষা সৈনিক বেগম মাজেদা আলীর বাসভবনে অসুস্থ বেগম মাজেদা আলীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান ও ভাষা সৈনিকের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ আফম মহসিন, যশোর বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ সাদী ভূইয়া, সংগঠনের উপদেষ্ঠা সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সভাপতি মফিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী এ্যাডঃ মোমিনুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুদ মাহামুদ, পোল্ট্রি ফিস ফিড শিল্প দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন, রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানস রায়, সমাজসেবক এস এম ইদ্রিস আতিয়ার, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, ছাত্র ইউনিয়নের মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক জয় বৈদ্য প্রমুখ। বেগম মাজেদা আলী বলেন, ওই সময়ে মেয়েদের পড়াশুনা করাটা খুব কষ্টের ছিল। আমার বাড়ি ছিল খুলনার কাশিপুর মসজিদ বাড়ি। আমি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতাম বলে আমাদের মসজিদের মোয়াজ্জেম ও গ্রামের লোকজন বাবাকে নানা বাজে কথা বলত। একদিন তারা বলেই ফেললেন মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হলে আমাদের পরিবারকে এক ঘরে করা হবে। বাবা সেদিন নামায পড়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে এলেন। কারোর সঙ্গে কথা না বলেই ছাতাটা নিয়ে বয়রায় বড় মামার বাসায় গেলেন। ‘বড় মামা নারী শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি বললেন, ধৈর্য্য ও সাহস ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে। ইসলামে নারীদের পড়াশুনায় কোন বাঁধা নেই। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের সময় আমি আর কে গার্লস কলেজের (বর্তমানে বয়রা মহিলা কলেজ) ছাত্রী ছিলাম। ভাষা আন্দোলনের সময় আমাদের ক্লাস হতো বর্তমান করোনেশন স্কুল ভবনে। তৎকালীন সময় আমরা করোনেশন স্কুলের হোস্টেলে থাকতাম। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলির খবরের পর সন্ধার দিকে কলেজের হোস্টেল গেটে মানুষ জড়ো হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই খোঁজ নিতে কলেজ গেটে বের হই। তখন বিএল কলেজের ছাত্রনেতা গাজী শহীদুল্লাহ, এম নুরুল ইসলাম, আবু মোহাম্মাদ ফেরদাউস, একেএম শামসুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ঢাকার খবরটি জানতে পারি।’ ‘আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গাজী শহিদুল্লাহ, এম নুরুল ইসলাম দাদুসহ কয়েকজন ফেস্টুন লেখার জন্য কাগজ, কালি দিয়ে যান। ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। ওইদিন রাত জেগে কয়েকজন মিলে ব্যানার লিখি। পরদিন কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রীদের মধ্য জনমত সৃষ্টি করা হয়। শনিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে কলেজের ম্যাডামের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বলি কলেজে ধর্মঘট, যেতে হবে না। আপনি বাসায় রেস্ট নেন। এরপরে কয়েকজন কলেজ গেটে ছাত্রীদের জড়ো করতে থাকি। কাছে ব্যানার ফেস্টুন থাকায় বাকি মেয়েরা হোস্টেল থেকে বের হয়নি। সকাল ৯টায় মেয়েরা পেছন গেট দিয়ে হোস্টেল থেকে বের হয়। এরপর মিছিল শুরু হয়। মিছিলে ৭০০ থেকে ৮০০ ছাত্রী অংশ নেয়। মিছিলটি নিয়ে হাদীস পার্কের বাম দিকের একটি উঁচু মঞ্চে গিয়ে সমাবেশ করা হয়। নানা স্মৃতি মনে করতে তিনি কষ্টবোধ করছিলেন। বর্তমান তিনি চোখে দেখতে পান না। অসুস্থ অবস্থায় বাসায় তার সময় কাটছে।