
এম সাইফুল ইসলাম : ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে খুলনাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও অনেকটা ভেস্তে গেছে এ কর্মসূচি। পূর্নবাসিত ভিক্ষুকরা নতুন করে ফিরেছেন পুরনো ‘পেশায়’। নাগরিক নেতাদের দাবী ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচির ফলোআপ না থাকায় পূর্নবাসিতরা দেখছেন না কাঙ্খিত আলোর মুখ। এসব ভিক্ষুকদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণকারীরাও রয়েছে। এরা ছয় বছর পূর্বের জেলা প্রশাসনের সাহায্যকে যৎসামান্য দাবি করেছে। বাকিরা কোন প্রকার সহায়তা পায়নি বলেও জানান।
নগরীর রেলস্টেশনে ১০৮ বছরের বৃদ্ধা ফজিলা খাতুন। তার স্বামী আঃ হামিদ সরদার, ১৩ বছর আগে মারা যান, এরপর থেকেই তিনি পথে পথে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন। শুধু ফজিলা খাতুন নয়, এমনিভাবে ভিক্ষা করছে ডালমিল মোড়ের আলতাফ হোসেনের স্ত্রী আশিউর্দ্ধ বয়স্কের ফাতিমা বেগম। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, “আগে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন বস্তিতে থাকতাম। সরকার উচ্ছেদ করে দিলে আমরা ডালমিল মোড়ে বাসা নিয়ে থাকি।”
খুলনা জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ উদ্যোগে ২০১৭ সালে ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসুচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করে তৎকালীন প্রশাসন। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিকে স্বাগত জানালেও আগের মতই রয়েছে ভিক্ষুকদের আনাগোনা।
‘ভিক্ষাবৃত্তিকে না বলুন, ভিক্ষুকমুক্ত খুলনা গড়ুন’ কর্মসূচির আওতায় মহানগরীর তালিকাভুক্ত ৩ হাজার ৭৮৩ জন ভিক্ষুককে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, খুলনা জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ সম্পন্ন করছে। এ প্রকল্পের তহবিলে বিভিন্ন দপ্তর ও বিশিষ্টজনের কাছ থেকে সংগ্রহকৃত অর্থের পরিমান ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ টাকা। যার মধ্যে খরচ করা হয়েছে ৬০ লাভ ৮১ হাজার ৪২৭ টাকা। এখনও অবশিষ্ট রয়েছে ৯ লাখ ১ হাজার ৪ শত ৫০ টাকা। ভিক্ষুকদের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ও রেশন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল সেলাই মেশিন, ফ্লাক্স, পানের দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিক্ষুকদের হাতে এসব সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড বাবুল হাওলাদার বলেন, ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচির ফলোআপ না থাকায় পুনর্বাসিতরা দেখছেন না কাঙ্খিত আলোর মুখ। এ সময় এ্যাড বাবুল হাওলাদার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সময়োপযোগি পরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ ও মনিটরিং এর দাবি জানান।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরাফাত বলেন, ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা নেবো। আশা করি আগামি মিটিংএ ই এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌছাবো। সেক্ষেত্রে আমরা এ তহবিলে কোনো টাকা আছে কিনা কিংবা নতুন করে তহবিলে অর্থ সংযুক্ত দরকার হলে সেটাও আমরা করবো।