
মোঃ এজাজ আলী : প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য খুলনা জেলার তোরোখাদা উপজেলায় ভুতিয়ার বিল যেন এক স্বর্গ রাজ্য। হাজার-হাজার পদ্ম ফুটে আছে সমগ্র বিলজুড়ে। বিলের চারপাশে সবুজের সমাহার আর ফুটে থাকা অজস্র পদ্ম ফুল শোভা ছড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের মাঝে। প্রতিদিন বিলে এসে ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিলের পদ্ম ফুলের আকৃষ্টতা দেখে দুই নয়নে তাকিয়ে থাকছেন তারা। ডিঙ্গি নৌকায় ভেসে জলের ছন্দ তালে পদ্ম ফুল স্পর্শ করার টানে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। নৌকায় বিলে ঢুকলে মনে হবে যেন অর্ভ্যথনা জানাচ্ছে পদ্ম ফুল। এ দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। অনেকেই পদ্ম ফুলের সাথে কাটানো সময়ের স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছেন ছবি। ভূতিয়ার বিলে ছেলে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মো. এম এ সাদি। তিনি বলেন, পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে খুলনা শহর থেকে এখানে এসেছি। যেদিকে চোখ যায় যেদিকেই চোখ যায় সেদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। সত্যিই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
এখানে ঘুরতে আসা অনেকেই বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে ফোটা এই পদ্ম ফুলের বিলটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা যায় মৌসুমী পর্যটর কেন্দ্র। পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো গেলে এটি হতে পারে জলাবদ্ধ এলাকার বিল সংলগ্ন হতদরিদ্র মানুষের বাড়তি আয়ের উৎস। জানা যায়, ভুতিয়ার বিলকে কেন্দ্র করে মওসুমী কর্মসংস্থান চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতিতে এখানে বাড়ে নৌকার কদর। গত কয়েক বছর প্রকৃতিপ্রেমীমানুষকে পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকার মাঝি বনে গেছেন তেরোখাদা এলাকার অনেকেই। দেশি মাছের ভান্ডার পদ্ম বিল। কৈ, শিং, মাগুরের মজুদ এখানে। এছাড়া রয়েছে শোল, গজাল, রয়না, খলিশা, পুঁটি মাছ সহ দেশি অনেক প্রজাতির মাছ। শীতে পানি কমতেই জাল, পোলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন অনেকেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধ এলাকার মধ্যে অন্যতম ভুতিয়ার বিল। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার দুঃখ বলে পরিচিত এই বিল। বছরের অধিকাংশ সময় এখানে ফসলাদি হয় না। সরকারের ভাসমান সব্জি ও মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় গত তিন বছর ধরে এ এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার ১০ হাজার হেক্টর জমি এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৮০টি ভাসমান বেড। আর এই প্রকল্পের আওতায় সম্পৃক্ত হয়েছেন শতাধিক ভূমিহীন কৃষক। এই বিলের চারদিকে ২২টির মতো গ্রাম রয়েছে। আঠারোবাঁকি ও চিত্র নদী দিয়েই মূলত বিলের পানি নিস্কাসিত হয়। তবে নদীগুলো এখন মরে গেছে। ভরাট হয়ে গেছে বিলের মধ্যদিয়ে একসময়কার প্রবাহমান খালগুলো। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধ ভুতিয়ার বিল। তেরোখাদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কপিল দেব বসাক বলেন, ভুতিয়ার বিলে পদ্ম ফুলের পাশাপাশি ভাসমান পদ্ধতিতে সব্জি চাষ করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন এ এলাকার প্রান্তিক পর্যয়ের কৃষকরা। কৃষকদের আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করছি।