By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য
তাজা খবরসাতক্ষীরা

ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য

Last updated: 2025/11/27 at 2:02 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 6 days ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: বাংলাদেশে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে চার দফায় ভূমিকম্প হয়েছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে তিন দফায় ভূমিকম্প দেশের মানুষের জন্য ভয়ানক বার্তা বটে। কার পাপে এই ৩০ ঘণ্টার মধ্যে চার দফায় ভূমিকম্প? ভূতত্ত্ববিজ্ঞানীদের মতে, ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার অর্ধেক ভবন ধ্বসে যাবে। তখন কী ধরনের পরিণতি হবে? দেশের মানুষ অতীতে ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েছে। আলেমরা বলে থাকেন, ভূমিকম্প মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা।
কোনো জাতি পাপাচারে ভরে গেলে জাতিকে সতর্ক করে দেয়া হয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই’ (সূরা শুরা : ৩০)। ভূতত্ত্ববিজ্ঞানের মতে, ‘ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এমন আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনই হলো ভূমিকম্প। ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হয়’। অল্প সময়ের মধ্যে দেশে তিন দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে যেমন আতঙ্ক, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে তেমনি এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ভূমিকম্প আর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স ২০২৫ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি মেয়ের অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেউ বলছেন ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলিম মেয়ের বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পাপের কারণে ভূমিকম্প হয়েছে। কেউ বলছেন, দেশে বছরের পর বছর ধরে পাপ ও পঙ্কিলতা যে হারে বাড়ছে তার কারণে আল্লাহ ভূমিকম্পের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দিচ্ছে।
কাকতালীয় হলেও সত্য যে ২১ নভেম্বর খুব কাছাকাছি সময়ে ভূমিকম্প ও বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচারিত মিস ইউনিভার্স ২০২৫ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশের দর্শকরা সুন্দরী প্রতিযোগিতা দেখার এক ঘণ্টার মধ্যে ভূমিকম্পের মধ্যে পড়েছেন। ফলে ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে ওই বেলেল্লাপনার প্রতিযোগিতা মিস ইউনিভার্স অনুষ্ঠানে বিকিনি পড়ে বাংলাদেশি তানজিয়া জামান মিথিলার অংশ নেয়াকে দোষারোপ করা হচ্ছে। আলেম সমাজের কিছু কিছু ব্যক্তি এই প্রচারণায় বাতাস দিচ্ছেন। তবে এটা বলা যায়, বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে ‘বিশ্ব সুন্দরী’ প্রতিযোগিতার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই, কারণ দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। তবে তানজিয়া জামান মিথিলা বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার খবর যেভাবে গণমাধ্যম ও প্রচার মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে; তাকে মুসলিম দেশের চেতনায় আঘাত লেগেছে। এমন বেলেল্লাপনা বাংলাদেশের সমাজ চেতনার সঙ্গে যায় না। প্রচারণা এবং মিথিলার জন্য ভোট প্রার্থনা এমন ভাবে করা হয়েছে যে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তানজিয়া জামান মিথিলা বিশ্ব সুন্দরী হিসেবে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মর্যাদায় ভাসিয়ে দেবেন। ১২১ দেশের মধ্যে তানজিয়া জামান মিথিলা ৩০ জনের একজন হয়েছিলেন। তবে মূল প্রতিযোগিতায় ১২ জন জায়গা পাননি। সেখান থেকে মিথিলা যোজন যোজন মাইল দূরে ছিলেন। অথচ গণমাধ্যম ও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিরা সোশ্যাল মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করেন মিথিলা ‘পিপলস চয়েস’ তৃতীয় অবস্থানে উঠেছেন, ভোট দিলেই প্রথম হবেন। বাংলাদেশিদের সবার উচিত মিথিলাকে ভোট দিয়ে এগিয়ে নেয়া। মিথিলাকে ভোট দেয়ার লক্ষ্যে এভাবে উদ্বুদ্ধ¦ একটি গ্রুপ যেমন করেছে; তেমনি মিথিলার বিকিনি পরিহিত ছবি দেখে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, একজন মুসলমান মেয়ের এভাবে বিকিনি পড়ে ছবি তোলা ভিডিও করা এবং উলঙ্গপনার প্রতিযোগিতা করা কোনো ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আবার তথাকথিত প্রগতিশীলরা মিথিলাকে ভোট দেয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের যেন নৈতিক দায়িত্ব এমন প্রচারণা চালিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো গণমাধ্যম মিথিলা প্রতিঘণ্টায় কত ভোটে এগিয়ে যাচ্ছে এমন বার্তা প্রকাশ করেছে। ফলে ইসলামী চিন্তাশীল ব্যক্তিরা বলছেন, মিথিলাদের এই বেলেল্লাপনা পাপাচারের শাস্তি হচ্ছে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে তিন দফায় ভূমিকম্প। প্রশ্ন হচ্ছে প্রকৃত সত্য কী?
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে অন্যায় অবিচারে ভরে গেছে দেশ। সর্বত্রই চলছে মিথ্যার বেসাতি। সমাজের প্রতিটি সেক্টরে ব্যভিচার বেড়েছে, অন্যায়-অবিচার চলছে। সুদ, ঘুষ, ভয়ভীতি সন্ত্রাস বেড়ে গেছে ভয়াবহ ভাবে। প্রশাসনযন্ত্রে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ সম্পাদন হয় ধারণা উঠে গেছে। ঘুষ-দুর্নীতি-জোচ্চুরি-ছলচাতুরির প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি সম্পদকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজের সম্পদের মতো আত্মসাৎ করছেন, আমানতের খেয়ানত করছেন, প্রয়োজনীয় যাকাত আদায় করে না, দ্বীনি স্বার্থ ছাড়া (শুধু দুনিয়া অর্জন) জ্ঞান অর্জন করছেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন, মুসলমান হয়ে গীতা পাঠ করছেন, হিন্দুদের পুজায় গিয়ে মন্ত্রপাঠ করছেন, মসজিদে ইসলামী চেতনার চেয়ে ক্ষমতার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বেশি শোরগোল হচ্ছে, খারাপ লোকের হাতে নেতৃত্ব যাচ্ছে, সম্মানিত মানুষকে সম্মানের বদলে অপমান অপদস্ত করা হচ্ছে, মন্দ লোকের ভরে গেছে দেশ।
ইদানিং নারীর অধিকারের নামে নারী স্বাধীনতার প্রবচন চলছে। তাদের কাছে বিকিন বা নারীর নগ্নতা মানেই অশ্লিলতা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে উলঙ্গপনা অবশ্যই অশ্লিলতা। অশ্লিল সংস্কৃতিই হলো শয়তানের সংস্কৃতি। দেশে কার্যত নৈতিকতার অনুশাসন ভেঙ্গে গেছে। সাবান-শ্যাম্পু থেকে শুরু করে পুরুষের লুঙ্গি, এমনকি অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনেও নারীদেহের অশ্লীল প্রদর্শনী স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের দ-বিধিতে অশ্লিলতার সংজ্ঞা নেই। আর এটাই হয়ে গেছে অসাধু ব্যক্তিদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। এমনকি কিছু এনজিওর পৃষ্ঠপোষকতায় জরায়ু স্বাধীনতার দাবি উত্থাপনকারী একশ্রেণীর নারী নেত্রীরাও অশ্লিলতা হিসেবে মানতে চান না। প্রতিবাদ করলে অভিযোগ করা হয় ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। অথচ মুসলমান সমাজে এগুলো চলে না। তানজিয়া জামান মিথিলা বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সে জানে সেখানে উলঙ্গ হয়ে বিকিনি পড়তে হবে। জেনেশুনে সে সেখানে গেছে এবং এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। ওটা নিয়ে মাথাব্যথা নয়। কিন্তু তাকে ভোট দেয়ার জন্য গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা এবং দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা কী অপরাধ-অশ্লীলতা বেলেল্লাপনা নয়? ভূমিকম্পের জন্য বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় মিথিলার অংশগ্রহণকে যেমন দায়ী করা না গেলেও তাকে ভোট দেয়ার জন্য দেশের মানুষকে উৎসাহী করে তোলাও একধরনের শয়তানী। অপ্রিয় হলেও সত্য যে দেশের অন্যায় অবিচার, অনিয়ম, দ্বিচারিতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ভাবে বিস্তার ঘটিয়েছে যে একটি সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ওই দলের নেতাকর্মী, সুবিদাবাদী অলিগার্ক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতারা পালিয়ে যায়। এমনকি ওই দলের অপকর্মের জড়িত থাকায় মসজিদের ইমাম পর্যন্ত পালিয়ে যায়। যে দেশের মসজিদের ইমাম অপকর্মের জন্য পালিয়ে যায় সে দেশে আল্লাহর গজব পড়তেই পারে। ভূমিকম্পের বিভীষিকা নিয়ে কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেছেন: ‘হে মানব সকল, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে এক মারাত্মক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যপায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ’। (সূরা হজ: ১-২)
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার বিরোধিতা করা যেমন উচিত নয়। তেমনি এ ধরনের প্রতিযোগিতার জন্য মানুষকে আগ্রহী করে তোলাও অনুচিত। কারণ এ ধরনের ঘটনায় একদিকে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে অনেকেই উগ্রপন্থায় চলে যেতে পারে। ফলে এসব বিষয়ে সকলের উচিত সতর্ক থাকা। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
ভূমিকম্প হওয়ার কারণ : আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয়, যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকেÑ ১. ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, ২. আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও ৩. শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।
আল্লামা ইবনু কাইয়িম র. বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন এ ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর নিকট তওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মোনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন।’
ভূমিকম্প বিষয়ে পবিত্র কোরআনের ‘যিলযাল’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে। মানুষ শুধু কোনো ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং ভূতত্ত্ববিজ্ঞানও এ কার্যকারণ সম্পর্কেই আলোচনা করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সা. বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে; কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না); জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে; ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে; একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে; বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে; মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে; যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবেÑ সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির। তখন সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য অপেক্ষা করো।’ (তিরমিজি, হাদিস নং ১৪৪৭)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, ৫৯)
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ (সুরা আনয়াম, ৬৫)। সহিহ বুখারির বর্ণনায় বিখ্যাত সাহাবি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসুল সা. বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
শায়খ ইস্পাহানি র. এ আয়াতের তাফসির করে বলেন, ‘এর ব্যাখ্যা হলো, ভূমিকম্প ও ভূমিধসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া (পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়া)।’
ভূমিকম্প কেয়ামতের একটি আলামত : রাসুল সা. বলেছেন, তখন পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে, তোমাদের সম্পদ এতো বাড়বে যে, উপচে পড়বে। (বুখারি, হাদিস নং ৯৭৯)। বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি। এগুলো দিয়ে তিনি তার বান্দাদের সাবধান করে থাকেন। কার্যত এগুলো মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিপদ আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা, ৩০) ।
কয়েক বছর আগে নেপালে ভূমিকম্প হলে সেখানকার হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবন্দ বলেছিলেন, বহু পূর্বেই আমরা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আধিক্য দেখে সবাইকে সাবধান করেছিলাম। অন্যায় ও পাপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভগবান ক্ষুব্ধ হয়ে ভূমিকম্পরূপে শাস্তি পাঠিয়েছেন। ভারতের মন্দিরে আতশবাজি বিস্ফোরণে শতাধিক ভক্ত নিহত ও প্রায় তিনশ’ গুরুতর আহত হওয়ার পেছনেও পাপাচারে মানুষের সীমালঙ্ঘনকে দায়ী করেছেন ধর্মীয় নেতারা। বছর কয়েক আগে কেদারনাথে প্রবল বন্যায় বহু হতাহতের জন্যে মানুষের পাপ ও সীমালঙ্ঘনকেই দায়ী করা হয়। ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মেও এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।
ভূমিকম্প হলে করণীয় : আপদ-বিপদ, সুখশান্তি সর্বাবস্থায়ই প্রত্যেক মুসলমানকে আল্লাহর ওপর ভরসা করা উচিত। বিশেষত দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প প্রভৃতি মুসিবতের সময় খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা (আমার নবিকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা আরাফ, ৯৬)। তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ কিংবা ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।
পৃথিবীতে প্রাকৃতিক যত দুর্যোগ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে ভূমিকম্প। কারণ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও ভূমিকম্প এর ব্যতিক্রম। ভূমিকম্পের আগে কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। ফলে এতে ব্যাপক জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইসলামিক দৃষ্টিতে ভূমিকম্প মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের সতর্কবার্তা। এমন দুর্ঘটনার সময় মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তাওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা ও তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
মানুষকে সতর্ক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার আজাব (নিঝুম) রাত তাদের কাছে আসবে না, তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সুরা আরাফ: ৯৭)
বান্দার অপরাধ ক্ষমা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা: ৩০
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প বিষয়ে ‘যিলযাল’ এবং ‘দাক্কা’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘যিলযাল’ অর্থ হচ্ছে একটি বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা। ‘দাক্কা’ অর্থ হচ্ছে প্রচণ্ড কোনো শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোনো কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া।
ভূমিকম্প সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।’ (তিরমিজি: ২২১
অন্যত্র বলা হয়েছে, ভূমিকম্প হচ্ছে কিয়ামতের একটি অন্যতম আলামত। কিয়ামত যতই নিকটবর্তী হবে, ভূমিকম্পের পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে।
ভূমিকম্পের বিভীষিকা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মানব জাতি, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে মারাত্মক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যপায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা হজ: ১-২
ভূমিকম্পের বেশকিছু কারণ সম্পর্কে জানা যায় হাদিসের মাধ্যমে। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখলে তা আত্মসাৎ করা হবে। জাকাতকে মনে করা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে। পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে বাবাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে। সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসক হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো—রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমিধসের, লিঙ্গ পরিবর্তন, পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।’ (তিরমিজি: ১৪৪৭।
তাই বলা যায়, বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প হচ্ছে, তা মহান আল্লাহর পাঠানো সতর্কবার্তার নিদর্শনগুলোর একটি। এগুলো দিয়ে তিনি বান্দাদের সাবধান করেন। মূলত এগুলো মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল। কেননা আল্লাহ অধিকাংশ জাতিকে ভূমিকম্পের গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন।
যখন পৃথিবীর দুটি ব্লক হঠাৎ একে অপরের পাশ দিয়ে পিছলে যায়, তখন ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যে তল বরাবর এই পিছলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তা চ্যুতিতল বা ফল্ট প্লেন নামে পরিচিত। আর পৃথিবীপৃষ্ঠের নিচে যে স্থান থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়, সেটিকে বলা হয় হাইপোসেন্টার বা ভূমিকম্পের কেন্দ্র। ভূমিকম্পের কেন্দ্রের ঠিক ওপরে থাকা স্থানটিকে এপিসেন্টার বা উপকেন্দ্র বলা হয়।
অনেক সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে ফোরশক বা পূর্বাভাস কম্পন হয়। এগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট ভূমিকম্প, যা পরে হওয়া বড় ধরনের ভূমিকম্পের একই স্থানে ঘটে। বড় ও প্রধান ভূমিকম্পকে মূল কম্পন বা মেইনশক বলা হয়। মূল কম্পনের পর পরবর্তী কম্পন বা আফটারশক হয়। ফলে মূল কম্পনের পরে একই স্থানে ঘটে ছোট ভূমিকম্প। মূল কম্পনের আকারের ওপর এটি নির্ভর করে। আফটারশক মূল কম্পনের কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরেও হতে পারে।
পৃথিবীর চারটি প্রধান স্তর রয়েছে। অন্তঃস্থ কেন্দ্র, বহিস্থ কেন্দ্র, ম্যান্টল ও ভূত্বক। ভূত্বক ও ম্যান্টলের ওপরের অংশ পৃথিবীর পৃষ্ঠে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এই স্তর একক কোনো খণ্ড নয়। এটি পৃথিবীপৃষ্ঠকে আবৃত করে থাকা অনেক ক্ষুদ্র টুকরা দিয়ে গঠিত। শুধু তা–ই নয়, এসব টুকরা ধীরে ধীরে নড়তে থাকে। একে অপরের পাশ দিয়ে পিছলে যায় এবং একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এসব টুকরাকে টেকটোনিক প্লেট বলে। এসব প্লেটের কিনারাকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি। প্লেট বাউন্ডারি অনেক চ্যুতি নিয়ে গঠিত। বিশ্বের বেশির ভাগ ভূমিকম্প এই চ্যুতিতেই ঘটে। যেহেতু প্লেটের কিনারা রুক্ষ হয়, তাই প্লেটের বাকি অংশ নড়তে থাকলেও কিনারা পরস্পরের সঙ্গে আটকে যায়। যখন প্লেট যথেষ্ট দূরে সরে যায়, তখন চ্যুতির মধ্যে থাকা কিনারা আলাদা হয়ে ভূমিকম্প হয়।
চ্যুতির কিনারা আটকে থাকার সময় ও বাকি ব্লক নড়তে থাকার সময় শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। যখন চলন্ত ব্লকের বল চ্যুতির রুক্ষ কিনারার ঘর্ষণকে অতিক্রম করে ও তা আলাদা হয়ে যায়, তখন সেই সঞ্চিত শক্তি মুক্ত হয়। সেই শক্তি ভূমিকম্প তরঙ্গ আকারে পুকুরের ঢেউয়ের মতো চ্যুতির কেন্দ্র থেকে সবদিকে বিকিরণ করে। ভূমিকম্পের তরঙ্গ পৃথিবীর মধ্য দিয়ে চলার সময় পৃথিবীকে কাঁপায় এবং যখন তরঙ্গ পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছায়, তখন তারা মাটি ও এর ওপর থাকা সবকিছু—যেমন আমাদের ঘরবাড়ি—কাঁপিয়ে দেয়।
ভূমিকম্প সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। এই যন্ত্র যে রেকর্ড তৈরি করে, তাকে সিসমোগ্রাম বলে। সিসমোগ্রাফের একটি ভিত্তি রয়েছে, যা মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা হয় এবং একটি ভারী ওজন মুক্তভাবে ঝুলে থাকে। যখন একটি ভূমিকম্পের কারণে মাটি কাঁপে, সিসমোগ্রাফের ভিত্তিও কাঁপে কিন্তু ঝুলে থাকা ওজন কাঁপে না। পরিবর্তে, যে স্প্রিং বা তার থেকে, তা ঝুলে থাকে, সেগুলো সমস্ত নড়াচড়া শোষণ করে নেয়। সিসমোগ্রাফের কম্পনশীল অংশ ও নিশ্চল অংশের মধ্যে অবস্থানের যে পার্থক্য, সেটিই রেকর্ড করা হয়।
একটি ভূমিকম্পের আকার নির্ভর করে চ্যুতির আকার ও চ্যুতির ওপর পিছলে যাওয়ার পরিমাণের ওপর। বিভিন্ন চ্যুতি পৃথিবীপৃষ্ঠের নিচে অনেক কিলোমিটার গভীরে থাকায় বিজ্ঞানীরা কেবল একটি মাপার ফিতা দিয়ে তা পরিমাপ করতে পারেন না। পৃথিবীপৃষ্ঠে সিসমোগ্রাফে তৈরি সিসমোগ্রাম রেকর্ডিং ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয় ভূমিকম্পের পরিধি। একটি সংক্ষিপ্ত নড়বড়ে রেখা, যা খুব বেশি নড়ে না, তার অর্থ একটি ছোট ভূমিকম্প; আর একটি দীর্ঘ নড়বড়ে রেখা, যা প্রচুর নড়ে, তার অর্থ একটি বড় ভূমিকম্প। নড়াচড়ার দৈর্ঘ্য নির্ভর করে চ্যুতির আকারের ওপর। নড়াচড়ার পরিমাণ নির্ভর করে পিছলে যাওয়ার পরিমাণের ওপর।
ভূমিকম্পের আকারকে এর মাত্রা বা ম্যাগনিচিউড বলে। প্রতিটি ভূমিকম্পের জন্য একটি মাত্রাই থাকে। বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট কম্পনের তীব্রতা নিয়েও কথা বলেন। ভূমিকম্পের সময় আপনি কোথায় আছেন, তার ওপর নির্ভর করে তীব্রতা পরিবর্তিত হয়।
ভূমিকম্পের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যও সিসমোগ্রাম কাজে আসে। পি তরঙ্গ আর এস তরঙ্গ নিয়ে তখন আলোচনা করা হয়। পি তরঙ্গ এস তরঙ্গের চেয়ে দ্রুতগামী। এ তথ্য বিজ্ঞানীদের বলতে সাহায্য করে ভূমিকম্পের উৎপত্তি কোথায় হয়েছে। বিষয়টি বোঝার জন্য পি ও এস তরঙ্গকে বজ্রপাত ও বজ্রধ্বনির সঙ্গে তুলনা করুন। আলো শব্দের চেয়ে দ্রুত ভ্রমণ করে, তাই একটি বজ্রপাতের সময় আপনি প্রথমে বজ্রপাতের ঝলকানি দেখতে পাবেন এবং তারপর বজ্রধ্বনি শুনতে পাবেন।
পি তরঙ্গ বজ্রপাতের মতো ও এস তরঙ্গ বজ্রধ্বনির মতো। পি তরঙ্গ দ্রুত ভ্রমণ করে এবং প্রথমে যেখানে আপনি আছেন, সেখানে পৃথিবী কাঁপায়। তারপর এস তরঙ্গ আসে এবং পৃথিবীকে কাঁপায়। আপনি যদি ভূমিকম্পের কাছাকাছি থাকেন, তাহলে পি ও এস তরঙ্গ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আসবে, কিন্তু আপনি যদি দূরে থাকেন, তবে দুটির মধ্যে আরও বেশি সময় থাকবে।
একটি সিসমোগ্রাফে রেকর্ড করা সিসমোগ্রামে পি ও এস তরঙ্গের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান দেখে বিজ্ঞানীরা বলতে পারেন, ভূমিকম্প সেই অবস্থান থেকে কত দূরে হয়েছিল। সিসমোগ্রাফ থেকে ভূমিকম্পটি কোন দিকে হয়েছিল, তা বলা যায় না। শুধু কত দূরে ছিল তা বলা যায়।
বিজ্ঞানীরা ঠিক কোথায় ভূমিকম্প হয়েছে, তা নির্ধারণ করতে ট্রায়াঙ্গুলেশন নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যদি আপনি একটি মানচিত্রে তিনটি ভিন্ন সিসমোগ্রাফের চারপাশে একটি বৃত্ত আঁকেন, যার প্রত্যেকটির ব্যাসার্ধ হলো সেই স্টেশন থেকে ভূমিকম্প পর্যন্ত দূরত্ব, তবে সেই তিনটি বৃত্তের ছেদবিন্দুই হলো উপকেন্দ্র।
বর্তমানে সুনামি, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য জানার সুযোগ মিললেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানার কার্যকর পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আর তাই যেকোনো নির্দিষ্ট চ্যুতিতে, বিজ্ঞানীরা জানেন যে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় আরও একটি ভূমিকম্প হবে, কিন্তু কখন তা ঘটবে, তা বলার কোনো উপায় তাঁদের কাছে নেই।
হঠাৎ পায়ের নিচের মাটি কেঁপে ওঠা বা দালানকোঠা দুলে ওঠার আতঙ্ক আমরা অনেকেই অনুভব করেছি। কিন্তু পৃথিবীর গভীরে ঠিক কী পরিবর্তনের কারণে এই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়? মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) ও বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে এর নেপথ্যের কারণ ও কারিগরি বিশ্লেষণ।
টেকটনিক প্লেটের ঘর্ষণ ও শক্তির মুক্তি
বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবী কোনো অখণ্ড বা একক ভূখণ্ড নয়। এর গঠন চারটি প্রধান স্তরে বিভক্ত—অন্তঃস্থ কেন্দ্র, বহিস্থ কেন্দ্র, ম্যান্টল ও ভূত্বক। পৃথিবীর উপরিভাগ বা ভূত্বক অনেকগুলো বিশাল খণ্ডে বিভক্ত, যেগুলোকে ‘টেকটনিক প্লেট’ বলা হয়। এই প্লেটগুলো স্থির নয়, বরং ধীরগতিতে নড়াচড়া করে।
যখন দুটি প্লেট একে অপরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অমসৃণ কিনারায় আটকে যায়, তখন সেখানে প্রচণ্ড শক্তির সঞ্চার হয়। প্লেটের বাকি অংশ নড়তে চাইলেও কিনারা আটকে থাকায় সেখানে চাপ বাড়ে। একসময় এই সঞ্চিত চাপ ঘর্ষণ বলের চেয়ে বেশি হলে প্লেটগুলো হঠাৎ পিছলে যায় বা ভেঙে সরে যায়। তখনই সঞ্চিত শক্তি ‘সিসমিক ওয়েভ’ বা তরঙ্গ আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, যা আমরা ভূমিকম্প হিসেবে অনুভব করি।
হাইপোসেন্টার ও এপিসেন্টার: পার্থক্য কোথায়?
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও প্রভাব নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে কিছু পরিভাষা জানা জরুরি। মাটির নিচে যে স্থানে শিলাস্তর ফেটে বা পিছলে গিয়ে কম্পন শুরু হয়, তাকে বলা হয় ‘হাইপোসেন্টার’ (Hypocenter)। আর ঠিক এর সোজাসুজি ওপরে ভূপৃষ্ঠের অবস্থানটিকে বলা হয় ‘এপিসেন্টার’ (Epicenter)। সাধারণত এপিসেন্টার বা উপকেন্দ্রেই কম্পনের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়।
বড় কোনো ভূমিকম্পের (মেইনশক) আগে কখনো কখনো ছোট কম্পন অনুভূত হয়, যাকে ‘ফোরশক’ বলা হয়। আবার মূল ভূমিকম্পের পরেও ভূস্তরের ভারসাম্য ফিরে আসতে সময় লাগে। ফলে মেইনশকের কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত একই স্থানে ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে পারে, যা ‘আফটারশক’ নামে পরিচিত।
ভূমিকম্প পরিমাপের জন্য ‘সিসমোগ্রাফ’ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রে মাটির কম্পন একটি গ্রাফ বা ‘সিসমোগ্রাম’-এ রেকর্ড হয়। সিসমোগ্রামের রেখা যত বেশি নড়বড়ে ও দীর্ঘ হয়, ভূমিকম্পের আকার বা ম্যাগনিচিউড তত বড় হয়।
ভূমিকম্পের অবস্থান নিখুঁতভাবে বের করতে বিজ্ঞানীরা ‘ট্রায়াঙ্গুলেশন’ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বজ্রপাতের আলো ও শব্দের গতির পার্থক্যের মতো, ভূমী।

জন্মভূমি ডেস্ক November 28, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article সাতক্ষীরা ১আসনে ‌দুই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটের আশায় মাঠ দাবিয়ে বেড়াচ্ছে
Next Article ফকিরহাটে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, অভিযুক্ত পলাতক

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
খুলনাতাজা খবর

খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

শ্যামনগরে মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হত্যার হুমকি

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
খুলনাতাজা খবর

খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

শ্যামনগরে মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হত্যার হুমকি

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?