এম সাইফুল ইসলাম : খুলনা সিটি করপোরেশনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড হলো ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ড দুটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষ। এর ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। আসন্ন কেসিসি নির্বাচনে ওয়ার্ড দুটিতে প্রায় ১৮জন প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনকে ঘিরে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বর্তমান কাউন্সিলরদের দাবি তারা গত নির্বাচনের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি পুরণ করেছেন। আর কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এলাকাবাসীর।
॥ ওয়ার্ড নং-৪ ॥
নগরীর ৪ নং ওয়ার্ড। যার পূর্বে পাবলা, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড। পশ্চিমে আড়ংঘাটা, ক্ষুদের খাল। উত্তরে দৌলতপুর থানা এবং দক্ষিণে রায়েরমহল ব্রিজ ও লিংক রোড। ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।
বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ কবির হোসেন কবু মোল্লা জানান, করোনাসহ নানা সমস্যা আর প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এলাকায় উন্নয়ন করে যাচ্ছি। গত নির্বাচনে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতির ৯০ ভাগ পূরন করেছি। এবারে নির্বাচিত হলে আমার বাকি অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজে তার আত্মীয় এবং নিজের লোক থাকে ঠিকাদার। গরীবের জন্য বরাদ্ধকৃত সকল ভাতা কার্ডও নিজের লোকেরা পায়। যদিও বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ কবির হোসেন কবু মোল্লা বলেন, সমবন্টন এবং এলাকাবাসীর উন্নয়নে কাজে করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আসন্ন নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক কাউন্সলর মো. আশরাফ হোসেন। তিনি জানান, কেসিসি’র লোক বা কর্মচারীদেরকে দিয়ে ওয়ার্ডেরে কোন কাজা করান না বরং নিজের বাড়ির কাজ করান বর্তমান কাউন্সিলর। আর যতুটুকু উন্নয়ন কাজে হয়েছে সেই সব কাজের ঠিকাদার তার আত্মীয় আর নিজের লোক। ফলে কাজের গুণগত ঠিক নেই। এলাকাবাসী যথেষ্ঠ ভাল বলেই তাকে কিছু বলে না। তবে এবার জনগণ ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দিবে।
আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ জামিরুল ইসলাম বন্দ জানান, মাদক, জলবদ্ধতা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যা এ ওয়ার্ডে। এলাকায় যত কাজ হয় তার সব ঠিকাদার তার নিজের। এলাকার দরিদ্রদেরকে রাতের অন্ধকারে টাকা দিয়ে ভোট কিনে জিতে যায়। জনগণ কাউন্সিলরের কাছে আসবে না। কাউন্সিলরকে জনগনের পাশে যেতে হবে। কেসিসির সেবা জনগণের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে হবে। আমাদের কাউন্সিলর জন বিছিন্ন। তাকে মানুষ প্রয়োজনে পাশে পায় না।
আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপু জানান, ওয়ার্ডে অনেক সমস্যা রয়েছে। দিন দিন সেইসব সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। মানুষ এখন সচেতন। ফলে এলাকায় কি কাজ হচ্ছে তার মান কেমন, তা মানুষ দেখছে। এলাকার সকল কাজে কাউন্সিলরের আত্মীয় আর নিজের লোক। এসব থেকে এলাকাবাসী এবার মুক্তি চায়।
॥ ওয়ার্ড নং -৫॥
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ডটি ভৈরব নদ, দেয়াড়া বাউন্ডারী রোড, সাতক্ষীরা রোড এবং দৌলতপুর কলেজ রোড এলাকাজুড়ে। এ ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এবার ভোটার নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ১২ হাজার।
কেসিসি নির্বাচনকে ঘিরে ৫ নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা বেশ সরব। তবে প্রার্থীদের কাছে ড্রেনেজ, রাস্তাঘাট, পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের প্রত্যাশা করেন ওয়ার্ডবাসী।
বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, দৌলতপুর বাজার রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান। রাস্তা-ঘাট, ড্রেণ উন্নয়ন করেছি। বাজার রক্ষা বাঁধ প্রকল্প অনুমোদ হয়েছে। জন্মনিবন্ধন, বিদ্যুৎ এবং সকল প্রকার ভাতাদি শতভাগ দিতে পেরেছি। এলাকাবাসীর সাথে আমার সম্পর্ক অত্যান্ত মধুর। জনগণ আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছে আমি তা ভুলতে পারবো ন। এখানে মাদক একটি বড় সমস্যা। আর মাদক নির্মূল পুরোটাই প্রশাসনের উপর নির্ভর করে। তবে এলাকায় মাদক নির্মূলে আমি একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছি।
এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসএম হুমায়ুর কবীর জানান, আমার বেশকিছু ভুল ছিল। যার জন্য গতবার পরাজিত হয়েছি। এ ওয়ার্ডে বর্তমানে যেসব কাজ হচ্ছে, তা আমার আমালে পাশ করা কাজ। আরো কিছু প্রকল্প আমার আমলে পাশ করা হয়েছিল। যা পর্যায় ক্রমে কাজ হবে। একটা সময় দত্তবাড়ির পুকুরটি দখল হয়ে যাচ্ছিল। আমি জীবনের রিক্স নিয়ে সেটি রক্ষা করি। বর্তমানে এলাকার ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এলাকার মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করা যায়। কিন্তু সেটি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমি যখন কাউন্সিলর ছিলাম তখন বেশ কিছু ভুল করেছি। তার সাঁজা আমি পেয়েছি এবং পাচ্ছি। আমি এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। আগামীতে সেই ভুল শুধরে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একটি আদর্শ ওয়ার্ড হিসেবে এই ওয়ার্ডকে গড়ে তুলতে চাই।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ খোকন জানান, আমাদের ৫ নং ওয়ার্ডে সরকারের চলমান উন্নয়নের কাজ হয়েছে। এ জন্য কেউ যদি বলে আমি করেছি। তাহলে সেটি ভুল হবে। এ এলাকায় ড্রেনেজ, রাস্তাঘাট, পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্যব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হলো না। এবার দল যদি আমাকে সমর্থন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে যেতে চাই এবং জয়ী হলে পরিছন্ন ওয়ার্ড হিসেবে এ ওয়ার্ডকে গড়ে তুলবো।