মোস্তাফিজুর রহমান, মনিরামপুর : যশোরের মনিরামপুরে পারভেজ হোসেন নামে এক যুবকের আত্মহত্যার মামলাকে পুজি করে তদন্তকারী অফিসার এসআই সোমেন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এলাকার বেশ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তিদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এসব ভূক্তভোগীদের অভিযোগ এসআই সোমেন বিশ্বাস মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়ে তাদের কাছে টাকা দাবি করছেন। ফলে উপায়ন্ত না পেয়ে ওই সব নিরীহ ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জানাযায়, উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের বাগডোব গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে পারভেজ হোসেন শিশুকাল থেকে পিতা-মাতার মধ্যে ডিভোর্স হবার পর একই গ্রামে তার নানাবাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে আসছিল। পারভেজের সাথে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পারভেজ এবং তার প্রেমিকা এবার দাখিল পরিক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু প্রেমিকা উত্তীর্ন হলেও পারভেজ হোসেন উত্তীর্ন হতে পারেনি। এরই মধ্যে পারভেজ এবং তার প্রেমিকা গত ২১ জানুয়ারি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে অভিভাবকরা গত ২৩ জানুয়ারি ঝিকরগাছা থেকে পারভেজ ও তার প্রেমিকাকে উদ্ধার করে রোহিতা বাজারে নিয়ে আসেন। অভিযোগ রয়েছে এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেমিকার পিতা পল্লী চিকিৎসক ইমরান আলী ও তার লোকজন পারভেজ এবং প্রেমিকাকে চড়থাপ্পড় দেয়। এক পর্যায়ে তারা বিষয়টি নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সরনাপন্ন হয়। মিজানুর রহমান জানান, ছেলে এবং মেয়ের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে লিখিত সমঝোতা হয়। সেই লিখিত সমঝোতায় দুপক্ষের অভিভাবকদের স্বাক্ষর নিয়ে পারভেজকে তার নানা সিদ্দিকুর রহমানের কাছে এবং মেয়েকে তার পিতার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৫ জানুয়ারি নানাবাড়ি থেকে পারভেজ তার মা কোহিনুর বেগমের বাড়িতে(মায়ের তৃতীয় স্বামীর বাড়ি) যায়। ২৬ জানুয়ারি সকালে বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মায়ের সাথে পারভেজের কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুপুর ১২ টার দিকে আত্মহত্যার জন্য পারভেজ কিটনাশক পান করে। এসময় স্বজনরা তাকে উদ্ধারের পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ২৭ জানুয়ারি দুপুরে পারভেজকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জানুয়ারি সকালে মৃত্যু হয় পারভেজের। পারেভেজের মা কোহিনুর বেগম এবং নানা সিদ্দিকুর রহমান জানান, মেয়ের অভিভাবকরা মারপিট করায় পারভেজ অভিমান করে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় দোষারোপ করে পারভেজের নানা সিদ্দিকুর রহমান বাদি হয়ে ওই ছাত্রির পিতাসহ পাঁচজনের নাম উল্লেক করে থানায় মামলা করেন। পুলিশ এর মধ্যে দুজনকে আটক করে। ৩১ জানুয়ারি আদালত থেকে সব (পাঁচ) আসামি জামিনে মুক্ত হন।
এ দিকে পারভেজ আত্মহত্যা মামলাকে পুজি করে তদন্তকারী অফিসার খেদাপাড়া ফাড়ির ইনচার্জ এসআই সোমেন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এলাকার আবদুল কাদের, রেজওয়ান, আসাদুল হক, মুজিবুর রহমান, রাকিবুল ইসলামসহ ১০/১১ জন নিরীহ ব্যক্তিদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রেজওয়ান এবং রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন এসআই সোমেন বিশ্বাস তাদের কাছে পাঁচ হাজার করে টাকা চেয়েছেন। অন্যথায় মামলায় আসামি করার হুমকি দিচ্ছেন। একই অভিযোগ করেন কাদেরসহ অন্যরাও। ফলে এসব ভূক্তভোগীরা এসআই সোমেনের হাত থেকে রেহাই পেতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই সোমেন বিশ্বাস জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।