দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নিজ নিজ সেক্টর নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, মজুতদারির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। ক্যাডার বৈষম্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প শেষে পরিবহণ পুলে গাড়ি জমা দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী। এদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট দমনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। রেলপথমন্ত্রীও দুর্নীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভূমিমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এসেছে এমনই বার্তা।
দেখা যাচ্ছে, প্রথম কর্মদিবসে প্রায় সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় গণমাধ্যমের সহায়তাও চেয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে তাও বিবেচ্য বিষয়। অভিজ্ঞতা বলে, অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনের পরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্য উন্মোচনের দায়ে গণমাধ্যমকর্মীকে হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে। এক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়, তা চিহ্নিত করে সমাধান করা জরুরি।
নাগরিক সমাজের দুর্ভোগের কথা গুরুত্বের সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্যদের স্মরণে রাখতে হবে। বস্তুত অনিয়ম-দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, মজুতদারির মতো চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি ইশতেহারে এসবের ওপর জোর দিয়েছিল। একই সঙ্গে গণতন্ত্র চর্চার পরিধি বাড়ানো, বৈষম্য কমানোর কথাও সেখানে বলা হয়েছিল। এক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাজ করতে হবে। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বস্তুত নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ করার ওপরই নির্ভর করছে নতুন সরকারের সাফল্য। নবগঠিত মন্ত্রিসভায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের যোগ্যতা-দক্ষতার বিষয়টিও এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সরকারের সাফল্য অনেক বেশি নির্ভর করে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর। সংসদে বিরোধী দল এবং সংসদের বাইরে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে সফলতা আনয়নে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তাদের কথা অনুযায়ী কাজেও সফলতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।