By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা
তাজা খবরসাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

Last updated: 2025/03/16 at 12:41 PM
করেস্পন্ডেন্ট 4 months ago
Share
SHARE

সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার শ্যামল মাটিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে যাঁরা ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা তাঁদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা। রক্তের সাগরে ডুব দিয়ে স্বাধীনতা নামের ফুল হাতে উঠে আসার দিন ১৬ ডিসেম্বর। এই বিজয় অতি সহজে অর্জিত হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম আর নয় মাসব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল। নয় মাসব্যাপী পাকিস্তানী খানসেনা ও তাদের সহযোগিদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিকামী নির্ভীক বাঙালিরা এই নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাতৃভূমি রক্ষায় প্রাণ দিয়ে লক্ষ বাঙালি শহীদ হয়েছেন। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল অসংখ্য মানুষকে, খান সেনা ও তাদের দোসররা লক্ষ লক্ষ বাঙালি মা-বোনদের ইজ্জত লুট করেছিল, আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল যেমন মুক্তিকামী মানুষকে তেমনি ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে ছাই করেছিল। কিন্তু মুক্তিপাগল সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিকামী মানুষের কাছে ওরা পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পন করেছিল। অবশেষে তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত সবুজের মাঝে লাল সূর্যের লক্ষ-কোটি পতাকা উড়ল স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে। কীভাবে কেটেছে ন’মাস যুদ্ধকালে তা শুনলে হতবাক হতে হয়। সারা দেশজুড়ে এ যুদ্ধ হয়েছিল।
দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলা। এই সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে সুন্দরবন এবং সাগর সীমান্তে দক্ষিণ তালপট্টির প্রান্ত ছুঁয়ে রায়মঙ্গল নদী আন্তর্জাতিক সীমানা ধরে জেলার পশ্চিমে ভারত সীমান্ত। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরা জেলা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। দেশের ভেতর থেকে বহু মানুষ ছুটে গেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত পেরিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশের মধ্যে ঢুকে পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করেছে। এ কারণে যুদ্ধকালীন সময়কালটা সাতক্ষীরা জেলার জন্য ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। দেশের ভেতর থেকে ৫ মুক্তিপাগল ছাত্র (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মতান্তরে খুলনা বিএল কলেজ) জেলার কলারোয়া থানার সীমান্ত পার হতে যেয়ে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে। এর মধ্যে ২ জন পালিয়ে যেতে পারলেও ৩জনকে ধরে কলারোয়া থানায় নিয়ে যায়। পরে ঐ ৩জনকে থানার পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। উলে¬খ্য এর মধ্যে ২জন তাৎক্ষণিক মারা না গেলেও মাটি খুঁড়ে তাদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আবাদেরহাট এলাকার শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের জনৈক ব্যক্তিকে মাটি খুঁড়তে বলে খানসেনারা। অপরাধ কী সে জানে না। শুধু মুক্তি হ্যায়-সন্দেহে তাকে তারই খোড়া ঐ কবরে শুইয়ে জীবন্ত কবর দেয়। কালিগঞ্জ থানাধীন পোদালী চাঁদখালীর ধ্রুব মিস্ত্রী ওরফে পাগল ডাক্তারকে ধরে কাকশিয়ালী নদীর চরে অর্ধেকটা পুঁতে ইট-পাথর মেরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে খানসেনারা তাকে হত্যা করে। এ রকম লোমহর্ষক অনেক ঘটনা জানা অজানায় রয়ে গেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাপক ও জোরদার করতে ১১টি রণাঙ্গণে বা সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি সেক্টরে একজন করে সেক্টর কমান্ডার ছিল। প্রবাসী সরকার থেকে প্রথমে যে ১০টি সেক্টর করা হয়ে তার মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে সাতক্ষীরা জেলার ৩টি সেক্টর-এর আওতাধীণ ছিল। মূল জেলা শহরসহ পার্শ্ববর্তী দক্ষিণে সুন্দরবন এলাকা ৯নং এবং শহরের গা ঘেষে উত্তরাংশে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানা এলাকা ৮নং ও জেলার দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর-এ মোহনা জুড়ে ছিল ১০ নং নৌ মুক্তিবাহিনী (নৌ কমান্ডো) সেক্টর।শ্যামনগর: সাতক্ষীরার দক্ষিণাঞ্চল আশাশুনি ও শ্যামনগর দুটি থানা সুন্দরবন সংলগ্ন এবং নদী-খাল বেষ্টিত থাকায় এখনকার যুবকরা নদী ও পানি দেখে উৎফুল¬ হয় এবং সাঁতারে পটু থাকায় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ নৌ কমান্ডে নাম লেখায় ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও বাছাইতে ৪০ হাজারের মধ্যে মাত্র যে ৬০জনকে প্রাথমিক পর্বে নির্বাচিত করা হয় তার অধিকাংশই সাতক্ষীরা জেলার। এ গর্ব সাতক্ষীরাবাসির। শুধু এ কারণে গর্ব নয়। একাত্তরের ১৪আগস্ট মংলা বন্দরে ঐতিহাসিক ও বিস্ময়কর যে অপারেশন করা হয় তা ছিল অতীব লোমহর্ষক ঘটনা। জাহাজ ধ্বংসকারী মাইন হাতে নিয়ে নৌ কমান্ডোর সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ২মাইল বড় নদী ডুব দিয়ে দিয়ে অতি সতর্কতার সাথে ৯টি জাহাজের কাছে যায়। এর পর দ্রুত ফিরে আসার মুহূর্তে প্রচন্ড বিস্ফোরণে ৯টি জাহাজ ধ্বংস হয়ে বন্দরের বুকে ডুবে যায়। শুধু দেশের মানুষ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ এ অপারেশনের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। এ অপারেশন শেষ করে সাতক্ষীরার সীমান্ত পথে ভারতের হাসনাবাদ ফেরার আগে একটি ফরেস্ট অফিস ঘেরাও করে তারা ২ টি লঞ্চসহ বহু মালামাল নিয়ে যায়। এতে সন্তুষ্ট হয়ে মেজর এম এ জলিল তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। পরে তাদেরকে বাংলাদেশ মিশনে নিয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী সকলকে মিষ্টি খাওয়ান এবং ১০০ টাকা উপহার দেন। এর পরদিন রাতে শ্যামনগর থানার শেখ মোহর আলী ও আবু নেছার সিদ্দিকীকে এবং সাতক্ষীরা শহরের মীর মোস্তাক আহমদে রবিকে সিলেট অপারেশনে যেতে দমদম বিমান বন্দরে এম এ জি ওসমানী বিদায় দেন। সাতক্ষীরার ৩জন মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধকালীন সময়ের এ সংবর্ধনা ইতিহাসের পাতায় চির অ¤¬ান। সাতক্ষীরাবাসি গর্বিত।১৯৭১এর ৬ মে সুন্দরবনের কোল ঘেসে যাওয়া খোলপেটুয়া নদীতে ৯নং সেক্টরের বহু কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র যোগাতে ভারত যেয়ে অস্ত্র বোঝাই করে নিয়ে আসার পর রাজাকার ও পিচ কমিটির সহায়তায় খানসেনাদের খবর দেয়। পরে খানসেনারা গানবোট নিয়ে এসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে লঞ্চটি ডুবিয়ে দেয়। এলাকাটি হচ্ছে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের পারশেমারী। এতে ৯নং সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিল ও ক্যাপ্টেন তোফাজ্জেলসহ প্রায় ১৫০জন মুক্তিযোদ্ধা অচেনা শ্যামানগরের গাবুরায় ঢুকে পড়ে এবং হতবিহ্বাল হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে থাকে। খান সেনাদের দোসর স্থানীয় সোহরাব হাজীর হাতে এম এ জলিলসহ কয়েকজন ধরা পড়ে। পরে কৌশলে তারা পালিয়ে যেতে পারলেও একই এলাকার ওয়াজেদ জোয়াদ্দারের হাতে ধরা পড়ে ১১জন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের পাক ক্যাম্পে পাঠানো হলে তারা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা শ্যামনগর থানা লুট করে ৩টি রাইফেল, ২টি রিভলবার ও ১টি পাইপগান নিয়ে নেয়। ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট শ্যামনগরের অভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের ৪জন শহীদ হন এবং কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতেও ৩জন খান সেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন আহত হয়। এছাড়া শ্যামনগরে ভেটখালী যুদ্ধ, সুন্দরবনের নদীতে পাক গানবোটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করার বীরত্ব কাহিনী, রামজীবনপুরে ভয়ংকর রাজাকার কমান্ডার মাও. আব্দুস সাত্তারকে গুলি করে হত্যা, নওয়াবেঁকি বাজার রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন চালিয়ে এব রাজাকারকে গুলি করে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধারা। রাজাকার মুনসুর নির্মমভাবে হত্যা করে সুরেন বাবুকে। এমনি করে জানা-অজানায় বহু মানুষকে নির্যাতন করেছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বরের হরিনগরের গণহত্যার কথা আজও মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর: সারাদেশের ন্যায় তৎকালীন সাতক্ষীরা মহকুমা শহরেও শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। এপ্রিল ৭১-এর মাঝামাঝি সাতক্ষীরা সংগ্রাম পরিষদ-এর নেতৃবৃন্দ খুলনার পাইকগাছার এম এন এ আব্দুল গফুর (সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুর ইউপি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সরদারের জামাতা) ইপিআর এর সুবেদার আইযুর আলীর নেতৃত্বে সশস্ত্র কিছু যুবক ইপিআর এবং সংগ্রাম পরিষদের বেশ কিছু সংগ্রামী যুবক নেতা ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে সাতক্ষীরা শাখা অপারেশন করে পৌনে ২ কোটি এবং বহু সোনাদানা নিয়ে দ্রুত জীপ গাড়ীতে করে ভারতে চলে যান। এই টাকা প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এই টাকা পেয়ে মুজিবনগর সরকার নব উদ্যমে যুদ্ধ পরিচালনার উৎসাহ পায়। এ খবর পেয়ে যায় খান সেনারা। দ্রুত সাতক্ষীরায় চলে আসে। যশোর থেকে কলারোয়া হয়ে সাতক্ষীরা আসার পথে সদরের ঝাউডাঙ্গা বাজারে পৌছালে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে খুলনা ও যশোর জেলা থেকে আগত শরণার্থী দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। তাতে বহু হিন্দু নারী-পুরুষ নিহত হয়। এদের মধ্যে মৃত এক মায়ের বুকে জীবিত এক শিশু দুধ খাচ্ছিল। পরে পার্শ্ববর্তী গ্রামের একজন শিশুটিকে নিয়ে যায় এবং লালন পালন করে। এ ছাড়া ২১ এপ্রিল শহরের টাউন হাইস্কুলে (বর্তমানে সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়) আশ্রিত শরণার্থীদের ওপর গুলি করে বহু লোককে হত্যা করে। পরে পার্শ্ববর্তী দীনেশ নামের এক কর্মকারের বাড়িতে গর্ত করে নিহতদের মাটি চাপা দেয়া হয়। পরদিন ২১ এপ্রিল শহরের কয়েকটি বাড়িতে যেয়ে কয়েকজনকে হত্যা করে এবং বাড়ি-ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সারা শহর ফাঁকা। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অজানা আতঙ্কে কাটায় সাতক্ষীরা শহরবাসি। এরপর সাতক্ষীরার পশ্চিম সীমান্ত তৎকালীন ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ভোমরায় ২৯ এপ্রিল পাক সেনাদের সাথে মুক্তিবাহিনীর ১৮ ঘন্টাব্যাপী প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এতে আবুল কাশেমসহ কয়েকজন শহীদ হন এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন। একাত্তরের জুন মাসের মাঝামাঝি সদরের বৈকারীর পাক ক্যাম্প আক্রমণ চালিয়ে যুক্তিযোদ্ধারা ৭ জন খান সেনাকে হত্যা করে। এ ছাড়াও হরিণ খোলা গোয়ালপোতা গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও নরকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। এতে বহু লোককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। শহরের অনতিদূরে মাছখোলা বাজারে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে খান সেনারা। এটা সেপ্টেম্বররে শেষ দিকের ঘটনা। এরা হচ্ছে- আশাশুনির সরাপপুরের কেষ্টপদ দাশ, তারাপদ ও মেঘনাদ।
এ ছাড়া মাটিয়াডাঙ্গা খেয়াঘাটের কাছে এক হৃদয় বিদারক কাহিনী রয়েছে। রাজাকার ও পিচ কমিটির লোকজন শরণার্থীদের নৌকার বহর আটক করে সোনাদানা লুটপাট করার সময় কয়েকজনকে ধরে শহরে নিয়ে যায়। মালামাল লুটের সময় এক শিশু নদীতে পড়ে চিরতরে হারিয়ে যায়। হিন্দু অধ্যুষিত গোয়ালপোতা গ্রামে যেয়ে খান সেনারা কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে এবং গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। গোলা ভর্তি ধান কয়েকদিন ধরে পুড়ে অবশেষে ছাই হয়ে যায়। নভেম্বরের দিকে এক রাতে সাতক্ষীরার একমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রটি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল অতি গোপনে যেয়ে মাইন পেতে রেখে আসে। পরে প্রচন্ড বিস্ফোরণে তা ধ্বংস হয়। তৎকালীন ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সরদারের বড় পুত্র নজরুল ইসলাম হারুকে খান সেনাদের গাড়ীর পিছনে বেঁধে টানতে টানতে তাকে মাহমুদ পুরে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এতে অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেলেও তার মুখের দাঁতগুলো ভেঙে যায় এবং তার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। এতটাই নির্যাতিত হয়েছিলেন যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্বর হয়ে রয়েছে। ২০০২ সালে আমি তার একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে লোমহর্ষক পিলে চমকানো সেই নির্মম নির্যাতনের বর্ননা শুনতে শুনতে গিয়ে আবেগাপ¬ুত হয়ে পড়ি এবং এখনো মনে পড়লে আমি আঁতকে উঠি। এমন শত শত নির্মম নির্যাতনের ঘটনা এখনও মানুষের মুখে মুখে।কালিগঞ্জ: সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নূরুল হুদার নেতৃত্বে একাত্তরের জুন মাসে কালিগঞ্জের বসন্তপুরে অবস্থিত পাক সেনাদের ক্যাম্পে অপারেশন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সাথে ২০ জন খান সেনাকে খতম করে। এই ক্যাম্প থেকে বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। উকশা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা মাইন পুতে রাখলে তা বিস্ফোরণে কয়েকজন খান সেনা নিহত হয়। এছাড়া জুলাই মাসে খানজিয়া যুদ্ধ, পিরোজপুর যুদ্ধ এবং সেপ্টেম্বরে ব্যাংক অপারেশন করে ব্যাংক থেকে বন্দুক সংগ্রহ করে। কালিগঞ্জের খেয়াঘাটের পাশে ধ্রুব মিস্ত্রী (পাগল ডাক্তার) কে চরে পুতে ইট মেরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৮ নভেম্বর কালিগঞ্জ ওয়াপদা কলোনীতে খান সেনাদের সাথে যুদ্ধ হয়। খান সেনারা অবশেষে পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। এ জন্য এ দিনটিতে কালিগঞ্জে বিজয় দিবসের মত উল¬াস ছড়িয়ে পড়ে।
তালা: তালার মাদরা, মাগুরা ও বাথুয়াডাঙ্গা সাতক্ষীরার পূর্বাংশের এলাকা ঐতিহাসিক কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী এই ৩টি এলাকা ছিলো মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। তারপরও খান সেনাদের সাথে সম্মুখ আত্রমণ ও যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে মাগুরার যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধে আবু বক্কার, আব্দুল আজিজ ও সুশীল সরকার শহীদ হন। তাদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রের পাশে একটি বাগানে মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হয়। আজও সেই গণকবরটি অযত্বে অবহেলায় রয়েছে। রাজাকারদের সাথে তাদের কলারোয়ার সীমান্তের বাটরা ও কুশোডাঙ্গায় দিনভর যুদ্ধ চলে। তালার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যকেন্দ্র পাটকেলঘাটায় হত্যাযজ্ঞ চলে। চালানো হয় ব্যাপক অত্যাচার ও নির্যাতন। হরিণখোলা ট্রাজেডির কাহিনী আরও দু:খজনক। খান সেনারা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে নিরীহ গ্রামবাসিকে। একজনকে জীবন্ত অবস্থায় ধরে বেয়নেট দিয়ে তার চোখ দুটো তুলে ফেলে। দুটো চোখ যখন মাটিতে নাচছিল তখন তার স্ত্রী-কন্যা তা দেখেছিল। বসন্ত রোগে আক্রান্ত গ্রামবাসির বহু লোক খালে যেয়ে পালিয়ে ছিল। মাছে সেই বসন্ত খুটে খুটে খেয়েছিল। উলে¬খ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তালার পল¬ী মেসেরডাঙ্গী এলাকায় কমরেড আজমল ও তার সহযোগী বামপস্থীদের আস্তানা গড়ে ওঠে। সেখান থেকে তারা এলাকা মুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ছিল। এছাড়া সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী যশোর জেলার সাগরদাঁড়ীর চিংড়ি ক্যাম্পের রাজাকাররা তালার কুমিরা ও সেনপুরে ব্যাপক নির্যাতন চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। ৩জন যুবক কপোতাক্ষ পার হওয়ার সময় তাদের ডাকা হয়। ১জন ফিরে আসেনি। বাকী দু’জনকে গুলি করে হত্যা করে।
আশাশুনি: ১৯৭১’র ১৫ আগস্ট মংলা বন্দর অপারেশন শেষে নৌকাযোগে ভারতে ফেরার পথে বুধহাটায় পৌছালে বেতনা নদীর বুকে রাজাকারদের দ্বারা ঘেরাও হয়। চলে গোলাগুলি। এতে সাতক্ষীরা শহরের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুলসহ কয়েকজন শহীদ হন। খোলপেটুয়া নদীতে কেয়ারগাতির কাছে খান সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর কিছু পূর্ব দিকে গোয়ালডাঙ্গা গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম বাবর আলীর নেতৃত্বে এক যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে কয়েকজন রাজাকার অস্ত্রসহ ধরা পড়লেও তালার মনোরঞ্জন ও গোয়ালডাঙ্গার গাজী ভাই শহীদ হন। আশাশুনি থানা সদরের কাছে চাপড়া রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে কয়েকজন রাজাকার হতাহত হয়।কলারোয়া: ৮ নং সেক্টরের অধীনে কলারোয়া অঞ্চল। সীমান্ত পথের এই কলারোয়াতে সম্মুখ যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে কাকডাঙ্গা, মাদরা, হিজলদী, বেলেডাঙ্গা, নাথপুর, খোর্দ্দ ও ইলিশপুরের যুদ্ধ উলে¬খযোগ্য। এসব যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং আহত হন বহু মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে এসব যুদ্ধে বহু খানসেনা ও রাজাকার হতাহত হয়। ১৯ এপ্রিল খান সেনাদের কমান্ডার কলারোয়া পৌছে মাহমুদপুর গ্রামের আফছার আলীকে প্রথম গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা মুরারীকাটী পালপাড়ায় যেয়ে ৯ জনতে নির্মমভাবে হত্যা করে। নয় মাস ধরে কলারোয়ার বহু মানুষেকে তারা গুলি করে হত্যা করে। এসব গণকবরের মধ্যে উলে¬খযোগ্য গয়ড়ার গণকবর, কলারোয়া সদরের গণকবর, মুরারীকাটি শ্রীপতিপুরের গণকবর, বেলেডাঙ্গার গণকবর, বামনখালী ও সোনাবাড়িয়ার গণকবর। লাউডুবীর রজো হত্যা, সোনাবাড়িয়ার হাজরা গাঙ্গুলী ও শিবু পোদ্দারের হত্যা, বামনখালীর রাজকুমার, খগেনসহ কয়েকজনকে হত্যা, পাঁচপোতা গ্রামের আমিনুল ইসলাম, পাঁচনল গ্রামের মতিয়ার রহমান ও আব্দুর রশীদকে হত্যাসহ বহু মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। কলারোয়ার তাৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য মমতাজ আহম্মদ স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের ভাষা সৈনিক আহমদ হোসেন খান, ভাষা সৈনিক বাগ্মী শেখ আমানউল্যাহ, বিএম নজরুল ইসলাম, শ্যামাপদ শেঠ, তারকনাথ ঘোষ, মো. মোসলেম উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ুেনতৃত্বে কলারোয়ার মাটি মুক্তিযুদ্ধের সময় দুর্জয় ঘাটি হিসেবে চিহ্নিত হয়। নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অগ্নি সংযোগের মত নারকীয় ঘটনা ঘটায় খান সেনারা। দমদম বাজারের খান সেনাদের বাঙ্কার থেকে স্তন কর্তন অবস্থায় মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। বহু গ্রামে ঢুকে যে সব গৃহবধূ ও যুবতী মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হয় তার কাহিনী লোমহর্ষক। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা আর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ৭১এর ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া মুক্ত হয়। এর পরদিন সাতক্ষীরা থেকে খান সেনারা চলে গেলে ৭ ডিসেম্বর গোটা সাতক্ষীরা মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। এর কয়েকদিন পর শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের এক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সাতক্ষীরা শহরকে কাজলনগর, মিলনী (লাবনী) সিনেমা হলকে শহীদ মিলনায়তন, সাতক্ষীরা কলেজকে নাজমুল মহাবিদ্যালয়সহ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে অনেক সড়কের নামকরণও করা হয়।দীর্ঘ ৯মাসের সেই যুদ্ধকালীন সময়ের সাতক্ষীরা জেলার মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে অনধিকাল ধরে।

করেস্পন্ডেন্ট March 17, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article সুন্দরবনের দুবলার জেলেদের স্বপ্ন ও কান্না
Next Article সাতক্ষীরার সাবেক এমপি মুস্তফা ও এসপি মঞ্জুরুলসহ ২২ জনের নামে হত্যা মামলা
Leave a comment

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

দিনপঞ্জি

July 2025
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
« Jun    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যয়

By করেস্পন্ডেন্ট 56 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

দক্ষিণ অঞ্চলে ‍চিংড়িতে মড়ক, আতঙ্কে চাষিরা

By করেস্পন্ডেন্ট 4 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা: কী করলে রক্ষা মিলবে?

By করেস্পন্ডেন্ট 24 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যয়

By করেস্পন্ডেন্ট 56 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

দক্ষিণ অঞ্চলে ‍চিংড়িতে মড়ক, আতঙ্কে চাষিরা

By করেস্পন্ডেন্ট 4 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা: কী করলে রক্ষা মিলবে?

By করেস্পন্ডেন্ট 24 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?