
জন্মভূমি রিপোর্ট : মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস সহকারী আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বদলি, এমপিওভুক্তকরণ প্রক্রিয়া, বিভাগের অন্যদের অপরাধে সহায়তা ও অপরাধ ধামাচাপা দেয়া, স্বেচ্ছারিতা ও ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া তিনি। প্রায় দুই দশক একই কার্যালয়ে কর্মরত থাকায় কর্মকর্তারাও তার কব্জায় বলে প্রচার করেন তিনি নিজেই। তবে মোটা অংকের অর্থ দিয়েও তার ফাঁদে পড়ে বিপদে পড়েছেন অনেকেই। অথচ, জেলার পাইকগাছার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের মোঃ ইসমাইল গাজীর ছেলে মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম এখন নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুল ইসলাম ২০০৪ সালে এমএলএসএস পদে চাকুরিতে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে তিনি অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি পান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এক ভাইকে একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন জন্ম তারিখ জাল করে। তার ভাই মোঃ আমিরুল ইসলামের জন্ম ১৯৮৬ সালে কিন্তু চাকরিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ ১৯৮৬ এরস্থলে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯৯২ সাল করিয়েছেন। আমিরুল ইসলামের এনআইডি নম্বর ৬৪৩৮৬২৬২৫৮ পরীক্ষা করলেই জালিয়াতির প্রমাণ মিলবে।
সূত্রমতে, রূপসা উপজেলার শামসুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিনকে এমপিও সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে ১০ লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফরিদা ইয়াসমিনের বিষয়ভিত্তিক বাংলা ও ইংরেজিতে তিনশ’ নম্বর না থাকার কারণে তার আবেদনটি ৭বার বাতিল হলেও গত নভেম্বরের এমপিওভুক্ত করিয়েছেন অফিস সহকারী আনোয়ার।
গত নভেম্বরে জুটমিলসের ৫টি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের শর্ত মোতাবেক পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রণয়ননে সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ লক্ষাধিক লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার গুঞ্জন রয়েছে।
সাধারণ শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকদের পাসপোর্ট, বিদেশ ভ্রমণসহ জিপিএফ ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা ছাড়া ফাইল ছাড়েন না অফিস সহকারী আনোয়ার। এছাড়াও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে আর্থিক সুবিধা আদায় এখন আর গোপন কিছু নয়। পেনশন ল্যাম্পগ্রান্ড করণের মূল দায়িত্ব নাজমা খাতুনের হলেও আনোয়ারের ইচ্ছের বাইরে কিছুই করার সক্ষমতা নেই। পারিবারিক পেনশন, জিপিএফ চূড়ান্ত উত্তোলন, পেনশন মুঞ্জুরি, ল্যাম্পগ্রান্ড মুঞ্জুরিসহ বেশ কিছু কাজে কোথা থেকে নিয়মিত অর্থ নেন অফিস সহকারী আনোয়ার।
একই অফিসে কর্মরত একাধিক কর্মচারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, অফিস সহকারী আনোয়ার অর্থ আদায়ে যেমন পটু, তেমনই তিনি তা হজম করতেও সিদ্ধহস্ত। নামে বেনামে বহু সম্পদ সম্পত্তির মালিক তিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে তালাবিদে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী দিদার মোড়লকে গাঁজার গাছসহ গ্রেফতার করেছিল পুলিশ (যার মামলা নং-০৩, ০৪-১১-২০২২)। বিষয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস সহকারী আনোয়ার জানার পর অর্থের বিনিময়ে কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাউশি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। এভাবে বহু অপকর্ম মোটা অংকের বিনিময়ে আঁড়াল করেন আনোয়ার।
বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক কাম ক্লার্ক মোঃ আল মুরাদ ও অফিস সহকারী মোঃ শাহ আলম জমাদ্দার ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল। হাতাহাতির একপর্যায়ে রডের আঘাতে আল মুরাদের মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়। এঘটনাটিও বিভাগের উর্দ্ধতনদের জানতে দেননি তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে মাউশি খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ আনোয়ারুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে (০১৯৩১ ২৯৬১৫৫) একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।