জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং জাতীয় জিডিপিতে ৩, ৫৭% অবদান রাখে। বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার ১২শতাংশেরও বেশি তাদের জীবিকার জন্য পূর্ণকালীন এবং খণ্ডকালীন ভিত্তিতে মৎস্য উৎপাদন ও বিপনন কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল। গত চার দশকে বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদন ১৯৮৩-৮৪ সালের ৭, ৫৪ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২০২০-২১ সালে ৪৭, ২১ লাখ মেট্রিক টন থেকে ছয় গুণ বেশি বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে অ্যাকুয়াকালচারের উৎপাদনও প্রায় ২২ গুণ বেড়েছে। অ্যাকুয়াকালচারে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ৫৭% অবদান রাখে অ্যাকুয়াকালচার। এফএও-এর রিপোর্ট ‘দ্য স্টেট অফ ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২২ অনুসারে, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলের ক্যাপচার উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য়। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি কর্মক্ষমতা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলাফল। সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি, এই উপাদানটি প্রকল্প এলাকায় মাছ চাষের আরও উন্নয়নের পক্ষে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকে সমর্থন করছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগের জন্য উন্নত মাছের জাত জনিত নির্দিষ্ট মাছ উৎপাদন মডেলের প্রচার, উন্নত মানের মাছের বীজ উৎপাদন, কম খরচে মাছের খাদ্য প্রবর্তন, উন্নত উৎপাদনশীলতার জন্য খামার যান্ত্রিকীকরণ, উন্নত উন্মুক্ত বিল মৎস্য ব্যবস্থাপনা এবং বাজারগুলিতে আরও ভালভাবে প্রবেশ এবং মূল্য সংযোজন মৎস্য পণ্যের বিকাশের জন্য আরও উপযুক্ত বাজার সংযোগ তৈরি করা। এনএটিপি-২ -এর অধীনে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় মোট ৫৬০সদস্য বিশিষ্ট ২৮ টি কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) গঠিত হয়েছে। ৫৬০জন সদস্যের মধ্যে ২৮২ (৫২, ৩৬%) মহিলা। সিআইজিগুলো সমবায় অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধিত। সিআইজিগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে এবং নিয়মিত সঞ্চয় করছে। প্রতিটি সিআইজি গড়ে ৪, ৭৫, ০০০ টাকা প্রায় সঞ্চয় করে। ২৮ টি সিআইজি মোট ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা প্রায় সংগ্রহ করেছে, যা মাছ চাষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাজারে প্রবেশাধিকার, ভ্যালু চেইন উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। সরেজমিনে দেখা যায় এনএটিপি-২ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর প্রতিটি সিআইজি মৎস্যচাষী সমিতি সদস্যদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিআইজি সদস্যদের মাছ চাষে অগ্রাধিকার চাহিদা প্রতিফলিত করে এক্সটেনশন মাইক্রো প্ল্যান তৈরি করে। সিআইজি মাইক্রো প্ল্যান তৈরিতে অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ মূল্যায়ন কৌশল অনুসরণ করা হয়। ক্ষুদ্র পরিকল্পনা প্রণয়নে, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা/সম্প্রসারণ কর্মকর্তা/ক্ষেত্র সহকারী/মৎস্য চাষের স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মী(লীফ) সিআইজি সদস্যদের সহায়তা করছেন। তারপর ইউনিয়ন পর্যায়ে দুটি সিআইজি মাইক্রো প্ল্যান একত্রিত করা হয় কারণ ইউনিয়ন এক্সটেনশন মাইক্রো প্ল্যান অবশেষে উপজেলা এক্সটেনশন প্ল্যান হিসাবে একীভূত হয়। এক্ষেত্রে মাছ চাষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাজারে প্রবেশাধিকার, ভ্যালু চেইন উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বর্তমান সরকারের নেওয়া উদ্যোগ অনুযায়ী স্থানীয় চাষীদের পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে এনএটিপি-২ -এর অধীনে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত মোট ১৩ টি কৃষক তথ্য ও পরামর্শ সেবা কেন্দ্র ঋওঅঈ গঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি কার্যকর রয়েছে। যার মধ্যে ১ টি পাইলট ঋওঅঈ রুদাঘরাতে অবস্থিত। একজন লীফ সপ্তাহে নিয়মিত ২ দিন ইউনয়ন পরিষদে নির্ধারিত কৃষি তথ্যসেবা কেন্দ্র ঋওঅঈ এ মাছ চাষীদের পরামর্শ প্রদান করছেন। মাছ চাষীরা কৃষক তথ্য ও পরামর্শ সেবা কেন্দ্র থেকে মাটি পানি পরীক্ষার মাধ্যমে মাছচাষ সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে পারেন। কৃষক তথ্য ও পরামর্শ সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কারণে মাছ চাষীরা তাদের দোরগোড়ায় সম্প্রসারণ সেবা পাচ্ছেন যা কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের হারকে ত্বরান্বিত করছে। প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব হল এক্সটেনশন মাইক্রো-প্ল্যান তৈরির সময় চিহ্নিত প্রধান সমস্যা, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং মৎস্য চাষিদের মৎস্য চাষ এবং ফসল-পরবর্তী প্রযুক্তির জ্ঞানের ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য, জলজ চাষ এবং ফসল-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সিআইজি নেতাদের নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ, পুরানো সিআইজি নেতাদের জন্য রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ, নার্সারি অপারেটরদের প্রশিক্ষণ, নতুন লীফ-এর জন্য মৌলিক মৎস্যচাষ ও সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় প্রশিক্ষণ কর্মশালা (ইউনিয়ন ভিত্তিক) ইত্যাদির আয়োজন করা হয় এবং নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মোট ১১৩টি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং এসব প্রশিক্ষনের আওতায় ৫৬০ জন সিআইজি মৎস্যচাষী ও ১৮৫৫জন নন সিআইজি মৎস্যচাষী প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এ সব সিআইজি ও নন সিআইজি চাষীদের মধ্যে প্রায় ১২৩২ জন নারী মৎস্য চাষী প্রশিক্ষন পেয়েছে। ফলে এসব প্রশিক্ষন পেয়ে নারীরা মৎস্য চাষে সফল হয়েছে যা বর্তমান সরকারের অঙ্গিকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। মৎস্যচাষে উন্নত প্রযুক্তির প্রদর্শনী, মাঠ দিবস এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর- এই সমস্ত কার্যক্রম স্থানীয় কৃষকদের কাছে প্রযুক্তির একটি ইতিবাচক ধারণা প্রদান করে যা মৎস্য চাষ ব্যবস্থা সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা বহন করে, প্রযুক্তি প্রদর্শনকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং গ্রহণকারী প্রদর্শনী, মাঠ দিবস এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর সব মিলে প্রযুক্তির কার্যকর স্থানান্তর, প্রযুক্তির ব্যাপক গ্রহণ ও বিস্তার, প্রযুক্তির গুরুত্ব বোঝা, উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদির উপর প্রভাব ফেলেছে। এনএটিপি-২ -এর অধীনে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য দপ্তর ডুমুরিয়া এ পর্যন্ত দশটি বিশেষ প্রযুক্তির ২০৭টি প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে। এই কার্যক্রমের ফলস্বরূপ, প্রায় ৫৬০ জন সিআইজি কৃষক এবং ৮৫০ জন নন-সিআইজি কৃষক প্রচারিত উন্নত মাছ চাষ প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন এবং জাতীয়ভাবে গড় পুকুরের উৎপাদনশীলতা ৩.০ মেট্রিক টন/হেক্টর থেকে ৫, ৩৫মেট্রিক টন/হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। সাহস চাড়াবান্দা কাজিরহুলো গ্রামের নারী সিআইজি চাষি শিউলী মন্ডল বলেন আগে আমরা মাছচাষ জানতাম না, মৎস্য অফিসের এনএটিপি-২ প্রকল্পের সিআইজি সমিতিতে নাম অন্তর্ভূক্ত করি। আমি এই প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ফিয়াক ও মৎস্য অফিস থেকে পেয়েছি। এ বছর মাছচাষ করে যে মাছ হয়েছে তা আমি নিজে বিক্রি করেছি। এখন আমার আর আমার স্বামীর নিকট হাত পাততে হয়না। নিজের টুকিটাকি খরচ নিজেই মেটাতে পারছি। শোভনা কদমতলা সিআইজি নারী চাষি শিল্পী মন্ডল বলেন আগে মাছচাষে আমার লাভ হতো না। টাকার অভাবে ঠিকমত মাছের খাবার দিতে পারতাম না। সিআইজি সমিতি থেকে সহায়তা নিয়ে ও মৎস্য দপ্তরের পরামর্শে মাছ চাষ করে আজ আমি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এনএটিপি-২ -এর অধীনে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য দপ্তর ডুমুরিয়া, খুলনা উপজেলায় ২টি বিল ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে হাজিবুনিয়া ও মুজারঘুটা বিলের একটিতে ১৩০ জন ও অন্যটিতে ৬০ জন সহ মোট ১৯০ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। বিল দুইটি উন্মুক্ত জলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় মৎস্যজীবী, বেকার যুবক, ভূমিহীন জনগণ ইত্যাদিকে সম্পৃক্ত করে একটি সম্প্রদায়-ভিত্তিক মৎস্য পদ্ধতির (ঈইঋগ) মাধ্যমে বিলগুলি পরিচালনা করা হচ্ছে। অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয়ের উন্নতির জন্য একই বিলে বেশ কিছু কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। এই কার্যক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে মৎস্য আবাসস্থানের উন্নতি, বিল নার্সারি স্থাপন, দেশীয় ছোট মাছের প্রজাতির মজুদ, মৎস্য অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা এবং মাছ ধরার কোড বাস্তবায়ন (মাছ ধরার বিধিনিষেধ)। এহেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে, উৎপাদনশীলতা এখন পর্যন্ত ৭০০ কেজি/হেক্টর বেসলাইন থেকে ১২০০ কেজি/হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। রংপুর ইউনিয়নের মুজারঘুটা বিল ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি জগদীশ ঢালী বলেনি মৎস্য দপ্তরের এনএটিপি-২ প্রকল্পের বিল ব্যবস্থপনা একটি যুগান্তকারী কার্যক্রম। এর মাধ্যমে বিলে নার্সারী খনন করে নার্সারীর মাধ্যমে কার্পজাতীয় মাছের পোনা তৈরী করে বিলে অবমুক্ত করা হয়েছে। বিলে কেজি দেশীয় প্রজাতীর ৭৫০ কেজি কৈ, শিং, মাগুর, টেংরা, শোল, পাবদা মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় মাছগুলো যেন নিরাপদে প্রজনন করতে পারে যে জন্য বিলের সংযোগ খালে অভয়াশ্রম করা হয়েছে। মৎস্য দপ্তর থেকে অবৈধ জাল ও পাটা উচ্ছেদে অভিযান ও মোবাইল কোর্টও করা হয়ে থাকে। পিউরলাইন ব্রুড ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্প হতে মাছচাষিকে মানসম্পন্ন মাছের বীজ সরবরাহ করা করেছেন। এনএটিপি-২ প্রকল্প তহবিলের সহায়তায় ভিয়েতনামী পাঙ্গাস মাছের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়। ৫০শতাংশ পুকুরে ১২০০ টি পোনা ছাড়া হয়। মৌসুম শেষে ৫০০ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়। অত্যান্ত সুস্বাদু হওয়ায় বাজার মূল্য বেশী পাওয়ায় পাঙ্গাস মাছ হতে দ্বিগুন লাভ হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটি উপজেলার খর্ণিয়ায় মৎস্য প্রডিউসার অর্গানাইজেশন (পিও) বাস্তবায়ন করেছে। এর মাধ্যমে মাছের বাজারে প্রবেশাধিকার এবং সরবরাহ চেইন উন্নয়ন মাছের বাজারজাতকরণসহ মাছ উৎপাদকদের জন্য অন্য যে সকল প্রধান বাধা ছিল তা দুর করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ, স্থানীয় বাজারে দুর্বল বিপণন ব্যবস্থা, শীতল চেইন বজায় রাখার জন্য প্যাকেজিং এবং পরিবহন সুবিধার অভাবে মাছ চাষীদের তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতে বঞ্চিত করে। মৎস্য উৎপাদকদের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য দপ্তর ডুমুরিয়া, খুলনা তে যে মৎস্য প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়েছে, সেটি এখন পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করছে। পিও এর জন্য একজন অফিস ম্যানেজার পিও র একটি পিকআপ ভ্যান এবং একটি ফিড মেশিন দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে নিয়মিত আয় হয়। অনলাইন মাছ বিপণনের জন্য, একটি ওয়েবসাইট, িি.িঢ়ড়ভরংযসধৎশবঃ.পড়স এবং 'ঋরংযগধৎশবঃ' নামে একটি সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে পিও-এর জন্য। এটি একটি অনলাইন পাইকারি মাছ বিপণন ব্যবস্থা এবং যেটি একটি প্রথম সরকারি উদ্যোগ। ১২০ মেট্রিক টন অনলাইন মাছ বিক্রয় সহ মোট ৪৩০ মেট্রিক টন মাছ পিও এর মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন পিও ১৪ টি ইউনিয়নে “ভ্রাম্যমান মাছ বাজার” এর মাধ্যমে ২২০ মে.টন মাছ বিক্রি করে সারা দেশে আলোচিত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় পিও এর সভাপতি একজন নারী উদ্যোক্তা যার নাম আফরোজা খানম মিতা। তিনি বলেন মাছচাষিরা যেন তাদের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্য পিও এর মাধ্যমে তিনি মধ্যস্বত্তাভোগীর শিকল ভেঙ্গে দিয়েছেন। চাষিরা পিও এর মাধ্যমে সরাসরি মাছ রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে মাছ বিক্রি করতে পারেন। এআইএফ-২ ম্যাচিং অনুদানের মাধ্যমে সক্ষম সিআইজি-কে তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য অর্থায়ন করা হয়েছে যাতে তারা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, নতুন ব্যবসায়িক মডেলের সাথে মূল্য সংযোজন পণ্যের বিকাশ এবং উন্নত বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। এই বিধানের অধীনে, সিআইজি মোট উপ-প্রকল্প ব্যয়ের ৩০% প্রদান করে এবং এনএটিপি-২ বাকি ৭০% প্রদান করে। এআইএফ-২-এর অধীনে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসারের দপ্তর ডুমুরিয়া, খুলনা এর ১৪টা সিআইজি কে মাছ পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যান, ফিশ ফিড তৈরির মেশিন, এয়ারেটর ও সেচ পাম্প সহায়তা হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পটি এআইএফ-৩ ম্যাচিং অনুদান প্রদান করেছে যা স্বতন্ত্র উদ্যোক্তাদের জন্য (সিআইজি, নন-সিআইজি সদস্য, পর্যাপ্ত ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা সহ লীফ, স্থানীয় উদ্যোক্তারা, ইত্যাদি) এবং যারা মাছ চাষ কার্যক্রম, মাছ বিপণন, ভ্যালু চেইন কার্যক্রম ইত্যাদির সাথে জড়িত। এ আই এফ-৩-এর অধীনে উপ-প্রকল্পগুলির অর্থায়নের সময় মাছ চাষে যান্ত্রিকীকরণ, ফসল-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নতি এবং মৎস্য পণ্যের মূল্য সংযোজনের উপর জোর দেওয়া হয়। এ আই এফ-৩-এর অধীনে উদ্যোক্তরা মাছের খামার যান্ত্রিকীকরণ, ফিশ ফিড তৈরির মেশিন, মাছ পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যান, অটোভ্যান, বরফ কারখানা স্থাপন, মিনি ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট ইত্যাদি করেছেন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো: আবুবকর সিদ্দিক বলেন এনএটিপি-২ এর সিআইজি এবং নন-সিআইজি প্রযুক্তি গ্রহণকারী মাছচাষি প্রায় ৩০০ হেক্টর পুকুর এলাকা কভার করেছে এবং এখন পর্যন্ত ৩.০ মেট্রিক টন/হেক্টর (বেসলাইন) থেকে ৫, ৩৫ মেট্রিক টন/হেক্টরে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে। মাছ চাষ যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তি গ্রহণ করে এই উৎপাদনশীলতা ১০ মেট্রিক টন/হেক্টরে বাড়ানো যেতে পারে। এ জন্য দরকার আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও সময়োপযোগী প্রকল্প সহায়তা। জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন এনএটিপি-২ প্রকল্প খুলনা জেলায় সফলভাবে তার সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং ইতিমধ্যেই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। পুকুর ও অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। কিন্তু আধুনিক মাছচাষ প্রযুক্তি এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ গ্রহণের মাধ্যমে মৎস্য চাষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির আরও সুযোগ রয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত