এস এম মুর্শিদ, পিরোজপুর : মাদক যেন ফেরিওয়ালার বাদাম, হাত বাড়ালেই মিলছে। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ যে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য।
উপজেলার ১০০ এর বেশি স্পটে কেনাবেচা চলে দিন রাত। উপজেলা পার্শ্ববর্তী কচুয়া, চিতলমারী, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সঙ্গে থাকা গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশি। বিভিন্ন সময়ে মাদক নিয়ে সভা, সেমিনার, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা।উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও অবাধে চলছে মাদক কারবারিদের রমরমা কারবার। মাদকের করাল গ্রাসে আসক্ত হয়ে ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজার হাজার মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে যুবসমাজ, স্কুলকলেজ পড়ুয়া ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে উপজেলাজুড়ে মাদকসেবীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় উঠতি বয়সী তরুণ ও স্কুলকলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের মাঝে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকমহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের চেয়ে কয়েক গুন বেড়েছে মাদক কারবারি। বেচাকেনা হতো খুব গোপনে। বর্তমানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে মাদক কারবারিরা। স্থানীয়রাও ভয়ে এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছেন না। ফলে উপজেলাতে এখন অবাধে চলছে মাদক কেনাবেচা। উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছেন। অপরদিকে ইয়াবা ও গাঁজার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দু’টি মাদকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যেসব এলাকা নীরব ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় সেইসব স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতাদের দেখা যায়। এছাড়াও উপজেলার গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের কারবার হচ্ছে। প্রতিদিন যে হাড়ে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাদকের অভয়ারণ্য বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই।উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত সবাই অল্পবয়সী। মাদকের ভয়াল নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের অল্পবয়সী যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের বাবা-মা।
মেহেদী হাসান রুবেল নামের এক সমাজসেবক জানান, এলাকার ও বাইরের মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকায় অতীতের চেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে মাদক। মাদক সিন্ডিকেট গ্রেফতার করে ভাঙা না হলে মাদক সেবী ও কারবারি বৃদ্ধি পাবে।
প্রশাসনের কাছে উপজেলাবাসীর দাবি দ্রুত যেন মাদক কারবারি ও সেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহমুদ আল ফরিদ ভূইয়া বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সচেতন। ইতোমধ্যে ডিবি দু’টি মামলা করেছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, অতি দ্রুত মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত