রঞ্জন কুমার মল্লিক, মাদারীপুর : মাদারীপুরে জেলা পরিষদের দেয়াল ভেঙ্গে সরকারি জমি দখল করে বাস কাউন্টার নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে জেলা ছাত্রদল নেতা ফয়সাল শিকদারের বিরুদ্ধে। সে জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কালকিনি থানার পশ্চিম পাশে জেলা পরিষদের নির্মাণ করা দেয়াল ভেঙ্গে জেলা পরিষদের জায়গায় ইতালী এক্সপ্রেস নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টারের জন্য ঘরটি নির্মাণ করেন ওই ছাত্রদল নেতা। জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা করেই দেয়াল ভেঙে ঘর নির্মাণ করার দাবি অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা ফয়সাল শিকদারের। এছাড়া জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন আরও কিছু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। জেলা পরিষদের কিছু কর্মকর্তাদের হাত করেই এসব করছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, জেলা পরিষদের সাথে কোন আলোচনা না করেই নিজ উদ্যোগে তিনি দেয়াল ভেঙ্গে জমি দখল করে কাউন্টার নির্মাণ করেছেন। এই বিষয়ে জেলা পরিষদ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি থানার পশ্চিম দিকে জেলা পরিষদের বড় একটি মাঠ রয়েছে। সেই মাঠের চারদিকে সীমানা প্রাচীরও দেয়া আছে। সম্প্রতি সেই দেয়াল ভেঙে মাঠের ভিতরের জায়গা দখল করে বাস কাউন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য ফয়সাল শিকদার বাস কাউন্টার নির্মাণ করেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি এই কাজ করায় ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল। বর্তমানে অবৈধভাবে নির্মাণ করা সেই ঘরে ইতালী এক্সপ্রেস নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ ওই ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। এছাড়া ঘরটিতে ইতালী এক্সপ্রেসের সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে যেখানে ফয়সাল শিকদারের নাম ও মোবাইল নম্বরও দেয়া হয়েছে। ফয়সাল শিকদার কালকিনির রাজদী গ্রামের মৃত হুমায়ুন কবীর শিকদারের ছেলে। এ ঘটনার পর থেকে কালকিনি জুড়ে এ বিষয়ে চলছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। জেলা পরিষদের অনুমতি ছাড়া উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সরকারি জমির দেয়াল ভেঙে ঘর নির্মাণ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে স্থানীয়রা ও সচেতন মহল। এছাড়া জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন আরও কিছু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। তাদের মধ্যে আল আমিন ষ্টীলের মালিক আল আমিন হাওলাদার, আমিন স্টোরের মালিক চাঁন মিয়া হাওলাদার, রাজ্জাক ট্রেডার্স এর মালিক রাজ্জাক সরদার (ইট ও পুরাতন টিনের ব্যবসা), মিলন ষ্টীলের মালিক মিলন হাওলাদার ও নজরুল খন্দকার। জেলা পরিষদের কিছু কর্মকর্তাদের হাত করেই এসব করছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার সিরাজুল ইসলামসহ অনেকের সাথে আলোচনা করেই ঘর দেয়াল ভাঙা ও ঘর নির্মাণের দাবি ছাত্রদল নেতার। দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের।
স্থানীয় ও সচেতন মহল জানায়, সম্প্রতি জেলা পরিষদের দেয়াল ভেঙ্গে সরকারি জায়গা দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করে বাস কাউন্টার পরিচালনা করছেন জেলা ছাত্রদলের এক নেতা। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। কালকিনি বিভিন্ন মহলে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সরকারী অনেক জায়গা বা স্থাপনা দখল হতে পারে। এছাড়া সরকারী জায়গা ব্যবহার করে জেলা পরিষদের কিছু কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে বছরের পর বছর। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হয়তো এ ঘটনার মত বড় ঘটনা নাও ঘটতে পারতো।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা ফয়সাল শিকদার সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার সিরাজুলসহ ওই দপ্তরের অনেকের সাথে কথা বলেই তিনি ঘর নির্মাণ করেছেন। তবে এ বিষয়ে দখলকারী অন্যরা কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মেহেদী হাসান জাকির বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। সরকারি জমি দখল করে বাস কাউন্টার নির্মাণ করার ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমরা সাংগঠনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। পাশাপাশি এই কাজ থেকে তাকে বিরতও রাখব। বিষয়টি আমরা দেখব।
মাদারীপুর জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে অনুমতি দেয়ার মত সুযোগ তার নেই।
একই ধরনের কথা জানালেন জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শীঘ্রই ওখানে সার্ভেয়ার পাঠাব। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কোন ভাবেই আমরা জেলা পরিষদের দেয়াল অবৈধ ভাবে ভেঙ্গে জমি দখল করে বাস কাউন্টার নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেব না।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আকতার হোসেন শাহিন বলেন, জেলা পরিষদের দেয়াল ভেঙে সরকারি জায়গা যারা দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়াসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত