রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর : বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাদারীপুর জেলায় বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি বিলীন হয়ে নি:স্ব হয়েছে অনেক পরিবার। ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়ে অন্যের বাড়ীতে বসবাস করছে অনেকেই। এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বহু ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আন্ডারচর গ্রামের মৃত লোকমান শরীফের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। আড়িয়াল খা নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি ভিটে মাটি ছাড়া হয়েছেন। স্বামীর কবরটিও তার এখন নেই। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি এহন কোনহানে থাকবো, তার কিছুই জানি না। সরকার যদি আমারে একখান ঘর উডাইয়া দেয়। তাইলে এট্টু থাকতে পারি। আমার স্বামী সন্তান কিছুই নাই। শুধু তাসমিলা বেগমই নয়। এই রকম অবস্থা মাদারীপুরের আরো অনেক পরিবারের। চলতি মৌসুমেও মাদারীপুর জেলায় দুটি উপজেলায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে কালকিনি উপজেলার ১২টি স্থানে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলার সিডিখান, বাশগাড়ী, সাহেবরামপুরে আন্ডারচর, জাউল্লারহাট, করিমেরহাট এলাকায় দোকান পাট, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও মাদারীপুর সদর উপজেলার কৃত্রিনাশা নদীর চরগোবিন্দপুর দক্ষিণকান্দি, পাঁচখোলার আড়িয়াল খা নদীর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এসব এলাকার পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে ভাঙ্গনের আতঙ্কে বসবাস করছে। এছাড়া অনেক মানুষের বাড়ি ঘর একাধিকবার ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ায় পুণরায় জমি ক্রয় করে যে বসত বাড়ী করবে তাও অনেকের সামর্থ নেই। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দোকান পাট, পোষ্ট অফিস, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, ‘আমাগো বাড়ির পাশ দিয়া আড়িয়াল খা নদটি চলে গেছে। এহন বাইষ্যা কাল। নদে অনেক পানি। ভাঙনও শুরু হইছে। সারা বছর নদীর মধ্য থেকে বালু উঠানোর কারণে নদী ভাঙন বেশি হচ্ছে। অনেক স্থানে নদী ভাঙতেছে। -একই ধরনের কথা বললেন আরো অনেক এলাকাবাসী।
ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন এবং ক্ষতিগ্রস্থদের একটি তালিকা করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত স্থানকে চিহ্নিত করে, পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা আড়িয়াল খা নদের যেসকল স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরী করেছি। প্রাথমিক ভাবে ভাঙন রোধ করার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতি বছর মাদারীপুরের যে সব এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে সে সব এলাকায় স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থায়ী সমাধানের দাবী ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী।
মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে নিঃস্ব অনেক পরিবার
Leave a comment