রঞ্জন কুমার মল্লিক, মাদারীপুর : মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় দুইশ বিশ বছরের পুরনো কালিপূজা উপলক্ষে কুন্ডুবাড়ি মেলা আয়োজনে নানা বাঁধা আপত্তির পরে রোববার বিকেলে ৩ দিনের জন্য অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর কালকিনির স্থানীয় আলেম সমাজের লিখিত অভিযোগের আপত্তির মুখে মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল উপজেলা প্রশাসন।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার জানিয়েছেন, কালিপূজা উপলক্ষে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকার কুন্ডুবাড়িতে মেলার আয়োজন হয়ে আসছিল। মেলাটি কালকিনি পৌরসভা থেকে ইজারা প্রদান করে আয়োজন করা হয়ে থাকত। কিন্তু আমরা এবার ইজারা প্রথা বাতিল করে দিয়েছি। এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ দিন মেলা আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছি। মেলায় যাতে আইন শৃংখলার অবনতি না হয় সেদিক বিবেচনা করে পর্যান্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। যাতে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের কোন ধরনের অসুবিধা না হয়। এমনকি যারা এখানে দোকানি থাকবেন তারাও যাতে কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকগুলো আমরা নজরে রাখবো।
কালকিনি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটার কুন্ডুবাড়ির ঐতিহ্যবাহী কালিপূজাকে কেন্দ্র করে মূলত সপ্তাহব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এই মেলা এবারও অনুষ্ঠানের জন্য কালকিনি পৌরসভা থেকে আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ইজারাও প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু এবার স্থানীয় ২১ জন আলেম সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধিরা এই মেলায় আইন শৃংখলা অবনতিসহ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে মেলা বন্ধ করার জন্য গত ১৬ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালকিনি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন এবার মেলা আয়োজন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মেলাটি যেহেতু শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হিসেবে এই এলাকার মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত। তাই মন্দির কর্তৃপক্ষ ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৩ দিনের জন্য মন্দির কমিটির কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মেলা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যা আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে।
কুন্ডুবাড়ি কালি মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম সদস্য কালীপদ কুন্ডুর ছেলে স্বপন কুন্ডুর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রতি বছর কালী পূজার সময় ৭ দিন ব্যাপী কুন্ডুবাড়ির এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ক্রেতাদের ভীড়ে কোন কোন বছর তা ১৫ দিন পর্যন্ত চলে। দুই’শ বিশ বছর আগে ১৮০৫ সালে শ্রী শ্রী কালী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকে দিপাবলী ও শ্রী শ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মন্দির কে ঘিরে কুন্ডু মেলার শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের কুন্ডুদের বংশীয় নামানুসারে কুন্ডুবাড়ির মেলা নাম করণ করা হয়। কুন্ডুবাড়ির মেলাটি আমাদের দেশের (বাংলাদেশের) সর্ববৃহৎ মেলাগুলোর একটি ঐতিহ্যবাহী একটি মেলায় পরিনত হয়েছে। মূলত কালীপূজার সময়কে ঘিরে এই মেলার আয়োজন করা হয়। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন ধর্মের মতানুসারিরা এই মেলাতে আসেন এবং মেলা উপভোগ করেন। কিন্তু এবার মেলা না করার জন্য স্থানীয় কিছু হুজুররা (আলেম সমাজ) আমাদের নিষেধ করে গেছে। এলাকায় মেলা বন্ধের কিছু ব্যানারও টানানো হয়েছে। এতে গত সোয়া দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা এই মেলা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। সবশেষ বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আনা হলে তিনি সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে ৩ দিনের জন্য মেলা আয়োজনের জন্য আমাদের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা এখন কালিপূজার পাশাপাশি মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করব।
এই বিষয়ে মাদারীপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক প্রাণতোষ মন্ডল বলেন, কুন্ডুবাড়ির কালিপূজা ও মেলায় যাতে পর্যাপ্ত পরিমানে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। সেই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।