মাদারীপুর প্রতিনিধি : সরকার নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে ও বিক্রি করতে না পারার কারণে গত চার দিন ধরে ডিম সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন মাদারীপুরের ডিম ব্যবসায়ীরা। বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে চার দিন ধরে মাদারীপুর থেকে দেশের কোথাও কোনো ট্রাক ডিম সংগ্রহ করতে যায়নি। সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম ক্রয় করতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন ডিম ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বাজারে ডিম না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। এই বিষয়ে ডিম ব্যবসায়ী বলেন, বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ বন্ধ থাকবে। কারণ সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডিম ক্রয় করা প্রয়োজন। এই অবস্থা থাকলে ডিম ব্যবসা আর থাকবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে একটা রেট বেঁধে দিয়েছেন। প্রতিটি ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দরে বিক্রি। কিন্তু মাদারীপুরের ডিমের ব্যবসায়ীরা দেশের পাবনা, বরিশাল, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী দরে ডিম সংগ্রহ করে মাদারীপুরের ডিমের আড়তগুলোতে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই মূল্যে বাজারে পাইকারী ডিম ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। পাইকারী ক্রয় মূল্য ১২ টাকার বেশি পড়ে। তারপরে রয়েছে ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ। এতে পাইকারী বাজার থেকে এক ট্রাক ডিম মাদারীপুরের আড়তে নিয়ে আসতে প্রতি পিচ ডিমের দাম পড়ে প্রায় ১৩ টাকা। এতে সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রিতে লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। এই অবস্থায় মাদারীপুরে ডিম সংগ্রহ বন্ধ থাকায় বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাদারীপুর পুরান বাজারের পাইকারী ডিম ব্যবসায়ী মোঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে একটা রেট বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সেই নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা গাড়ি বন্ধ করে রেখেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন? ডিম কেনা বেচা করাই আমাদের পেশা। প্রান্তিক পর্যায়ে ডিমের যে দাম তাতে ডিম ক্রয় করলে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে। পথে বসে যাব আমরা। পুরান বাজারের আরেক জন ডিমের আড়তদার জামাল জয় বলেন, ডিমের চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া এখন বাজারে সব ধরনের শাকসবজির দাম চড়া। ফলে চাপ পড়েছে ডিমের ওপর। আমরা দুই দিন ধরে ডিম ক্রয় করে আড়তে আনতে পারছি না। তবে প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্যের কারণে ডিমের বাজারে এই অস্থিরতা। ভোক্তাদের অভিযোগ, ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সিন্ডিকেট করে যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে। ডিম ক্রেতা অঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘আমার বাসার পাশের দোকানে ডিম পাওয়া যাচ্ছে খুব কম। দামও বেশি। তাই বাজারের পাইকারী দোকান থেকে ডিম কিনতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসেও দেখছি ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে অনেক দাম। এদিকে শহরের বাদামতলা এলাকার মুদি দোকানী শুভ বনিক বলেন, ‘আড়তে কয়েক দিন ধরে ডিম পাওয়া যাচেছ না। এতে ভোক্তাদের কাছে ডিম বিক্রি করতে পারছি না। অল্প কিছু পেলেও আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার সীমান্তবর্তী কোটালীপাড়ার খামারি মানিক মধু বলেন, ‘আমার খামারে ডিম পাড়া ৫’শ মুরগী আছে। মুরগীর খাবারের দাম গত কয়েক মাসে অনেক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমাদের ডিমের উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। একটি মুরগী মাসে দশ থেকে বিশটি ডিমের বেশি দেয় না। তাই ডিমের দাম প্রতি পিচ সাড়ে ১২ টাকা বিক্রি করলেও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডিমের দাম এভাবে কমে গেলে খামারই বন্ধ করে দিতে হতে পারে।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সুবোধ কুমার দাস বলেন, সরকার ডিমের দাম বেঁধে দেয়ার পরেও বাজারে ডিম ছাড়ছেন না খামারিরা। খামারিরা জানায় তাদের এই মূল্যে পোষাচ্ছে না। তাই তাঁরা বাজারজাত করছেন না। তিনি বলেন, আমরা খামারিদের সাথে আলোচনা করেছি, তবুও তাঁরা সরকারি নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না। সারাদেশে ডিম ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। যার ফলে এমনটা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করছি। দুই একদিনের মধ্যেই এর সমাধান হয়ে যাবে। গত সেপ্টেম্বরে ডিমের দাম ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমদানির অনুমতি দেয় তৎকালীন সরকার। এরপর দাম বেঁধে দেওয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে খুচরায় ডিম বিক্রি হওয়ার কথা প্রতি পিস ১১ টাকা ৮৭ পয়সায়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতি পিস ডিমের জন্য ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকারও বেশি। এই বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার জানিয়েছেন, মাদারীপুরে ডিমের বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।