রঞ্জন কুমার মল্লিক, মাদারীপুর : মাদারীপুর সদর উপজেলায় সরকারি উদ্যোগে আশ্রয়ন প্রকল্পের ভাঙ্গা চোরা জীর্ণ ঘরে বসবাস করা ৩২০ পরিবার নতুন পাকা ঘর পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নতুন ঘরগুলোর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এসব ঘরগুলো উপকারভোগী পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে (গুচ্ছগ্রাম) প্রতিবন্ধী এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মৃত ইসমাইল খানের স্ত্রী জুলেখা বেগম গত ২২ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। পুরনো ঘরটি টিনের তৈরী হওয়ায় অনেক বছর আগেই টিনের চাল ফুটে হয়ে ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। ঝর বৃষ্টি রোদ মাথায় নিয়ে ওই ভাঙ্গাচোরা ঘরেই বাস করতেন তারা। তাদের পুরনো ঘরের জায়গায় নতুন পাকা ঘর সরকার তুলে দেওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন বুনছেনন জুলেখা বেগম।
শুধু জুলেখা বেগমই নয়। সদর উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের (গুচ্ছগ্রাম) ক্ষীতিশ মন্ডল, জাহানারা বেগম, এসকেন হাওলাদারসহ অধিকাংশ বাসিন্দাদেরই একই অবস্থা ছিল। প্রকল্পের জরাজীর্ণ ভাঙ্গাচোরা টিনের ঘরগুলোর পরিবর্তে আধা পাকা রঙিন সারিবদ্ধ ঘরগুলো দেখে আশ্রয়ন প্রকল্পের সকল বাসিন্দারাই শান্তিতে বসবাস করার প্রহর গুনছেন।
পেয়ারপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা জুলেখা বেগম বলেন, ‘আমার একটি ছেলে প্রতিবন্ধী। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আশ্রয়নের একটি ভাঙ্গাচোরা ঘরে গত ২২ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। সরকার আমাদের পুরাতন ভাঙ্গাচোরা ঘরের বদলে নতুন করে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। আল্লাহ যতদিন বাঁচাবে, ততদিন ওই পাকা ঘরেই থাকতে চাই। নতুন পাকা ঘর করে দেওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। এখন দ্রুত আমাদের ঘরগুলোতে বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা শান্তিতে ঘুমাইতে পারতাম’
আশ্রয়ন প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা ক্ষীতিশ মন্ডল বললেন, ‘আগে আমি পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতাম। প্রায় ২২ বছর আগে সরকার আমাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে বসবাসের সুযোগ দেয়। তবে পুরাতন ঘরগুলো ভেঙ্গে চুরে যাওয়ায় বসবাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এখন নতুন পাকা ঘর নির্মাণ করায় আমাদের বসবাস করতে খুবই সুবিধা হবে। আমরা সরকারের কাছে খুব কৃতজ্ঞ। সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানেও নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন শতাধিক পাকা ঘর।
মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানালেন, আগের টিনের ঘরগুলোতে একটি ঘরে ১০ টি পরিবার থাকতো। খুবই কষ্ট করে। এখন প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ঘর তৈরী করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সদর উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোতে নতুন করে নির্মাণ করা ৩২০ টি ঘরের প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, একটি বারান্দা ও একটি টয়লেট আছে। প্রতি ১০ ঘরের জন্য একটি করে টিপটিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। খুব দ্রুতই উপকারভোগীদের ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।
মাদারীপুরে ৩২০ পরিবার পাচ্ছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের নতুন ঘর
Leave a comment