মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) শতাধিক সদস্য পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জানা যায়, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।
দুপক্ষের এ সংঘর্ষের ফলে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে থাকা বিজিপির প্রায় সব কয়টি ক্যাম্প বিদ্রোহী গোষ্ঠী দখল করে নিয়েছে। এ সীমান্তের কাছাকাছি বিজিপি ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই। এদিকে যুদ্ধের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যেও। সেখানে যানবাহন ও লোকজনের চলাচল সীমিত করেছে প্রশাসন। অনেকে আতঙ্কে সীমান্ত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সীমান্তের ওপার থেকে গোলাবারুদ এসে পড়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরঢু সংঘর্ষের কোনো প্রভাব বাংলাদেশে যেন না পড়ে সেজন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত এলাকাজুড়ে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকার বা বিদ্রোহী, কারও পক্ষে অবস্থান নেয়নি বাংলাদেশ। এ ইস্যুতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ ভূমিকায় আছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমার বর্তমানে এক দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে থাকা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৬০ শতাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। শুধু রাখাইন কেন, মিয়ানমারের একটি বড় অংশ এরই মধ্যে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এএ’র হামলার তীব্রতায় টিকতে না পেরে দেশটির সেনারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে রাখাইন হাতছাড়া করার কোনো ইচ্ছা জান্তা সরকারের যে নেই, তার ইঙ্গিত মেলে সেখানে সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পৌঁছে দিতে সাগরপথের ব্যবহার। এতে স্বভাবতই দুপক্ষের সংঘর্ষ আরও দীর্ঘ হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজভূমে কূটনৈতিক তৎপরতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধাগ্রস্ত হবে।
অনেকের মতে, মিয়ানমারে ফেরা বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি রাখাইনকে দ্রুত রোহিঙ্গাশূন্য করতেই রোহিঙ্গা বসতিতে হামলা চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি, রাখাইনের পরিস্থিতি যাই হোক, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফিরতে তাদের নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরঢু পরিস্থিতি নিজেদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে অনুকূলে আনা যায় কিনা, তাও তাদেরই ভেবে দেখতে হবে। জান্তা সরকার কিংবা আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার জন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, জনবহুল বাংলাদেশ শুধু মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে।
সাধ্যের বাইরে হলেও তাদের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় রসদের জোগান দিচ্ছে। কিন্তু তা অনন্তকাল অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক নানা কারণে বিদেশি দাতাসংস্থাগুলোও সাহায্যের পরিমাণ ক্রমেই কমিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টির আগেই আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উচিত নিজভূমে ফিরতে সচেষ্ট হওয়া। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক সরকারও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে কৌশলী কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করবে, এটাই প্রত্যাশা।