
জন্মভূমি রিপোর্ট : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিন’ নামের এই আয়োজন। দৈনিক জন্মভূমি পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (১৭ নভেম্বর) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-
১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কর্ণফুলী টি এস্টেটে পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করলে কয়েকজন হতাহত হয়।
২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিলোনিয়া অঞ্চলে মুন্সিরহাট ও পরশুরাম পাকিস্তানি দখল মুক্ত করার পর এ দিন ফুলগাজীর বিরাট এলাকা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানিরা ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে ফেনীর কাছে পিছু হটে।
এই সেক্টরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মুক্তিযোদ্ধা দল কাইয়ুমপুরে পাকিস্তানি সেনা-অবস্থানে দুটি বাংকার ধ্বংস করে। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের কতিপয় খাদ্য দ্রব্যাদির প্রয়োজন মেটাবার জন্য ‘ইউরোপীয় কমন মার্কেটের’ নিকট আবেদন জানিয়েছে। এছাড়াও এ-যাবৎকাল বিভিন্ন সূত্রে যে পরিমাণ সাহায্য প্রতিশ্রুতি হয়েছে তা হিসেবে ধরার পর আরো তিন লাখ ১১ হাজার টন চাল, এক লাখ ৭৫ হাজার টন গম, ৫০ হাজার টন চিনি, এক লাখ ৮৭ হাজার টন ডাল, ৪০ হাজার টন লবণ, আট হাজার ৩০০টন গুঁড়া দুধ এবং চার লাখ ৩৪ হাজার খানা কম্বল ই.সি.এম-এর কাছে সাহায্য হিসেবে চাওয়া হয়।
সিলেটের গোয়াইনঘাট সংলগ্ন রাধানগর এলাকার ছাত্তারগাঁ ও ঘোরা গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ ক্ষতি হয়।
৭ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের (১৪ ডিসেম্বর শহীদ এবং স্বাধীনতার পর মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ) তত্ত্বাবধানে মুক্তিযোদ্ধারা এ দিন একটি আমবাগানে পাকিস্তানি ঘাঁটি আক্রমণ করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ শেষে ঘাঁটি দখল করার পর হঠাৎ পেছনের বাংকারে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা গুলি করতে থাকে। এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পাকিস্তানিরা আবার ঘাঁটি দখল করে।
৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা জীবননগরের দত্তনগর কৃষি খামার পাকিস্তানি বাহিনীর দখল মুক্ত করেন। ১৭ নভেম্বর রাত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দল তিন দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে। তাঁদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা টিকতে না পেরে সকালে পিছু হটে।
ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়নমন্ত্রী রিচার্ড উড দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাজ্য মনে করে, বাংলাদেশ সমস্যার দায় পাকিস্তানের এবং এর রাজনৈতিক সমাধান হওয়া উচিত।
মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সহকারী হাইকমিশনের প্রবীণ বাঙালি কর্মী শাহজালাল মিয়া পালিয়ে এসে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এসে পুলিশের কাছে আশ্রয় চান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান ডি পি ধর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সঙ্গে প্রায় ৬ ঘণ্টা বৈঠক করেন। তাঁর সঙ্গে একজন ভারতীয় কর্মকর্তাও ছিলেন। দিল্লি থেকে কলকাতায় পৌঁছে তাঁরা সোজা মুজিবনগরে যান। তাঁদের বৈঠকের বিষয় প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক, সাত ও আট; ইত্তেফাক, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, যুক্তরাজ্য, ১৮ নভেম্বর ১৯৭১।