প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জানি, যে কোনো মুহুর্তে আমাকে হত্যা করা হতে পারে, তবুও আমি মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে দেশবাসির সেবা করে যাচ্ছি। ওরা ৭৫ এর ১৫ আগস্টে আমার বাবা-মা, ছোট ভাই রাসেল, ছোট দুই ভাই, ভাইবৌসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। তখন আমি বিদেশে থাকায় বেঁচে যাই।
রবিবার (২৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের পঞ্চদশতম অধিবেশনের সমাপ্তি ভাসনে এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি জানি আমিও রেহাই পাবো না, সে সব উপেক্ষা করে আমার ছোট ছেলেটাকে আমার বোনের কাছে রেখে আমি দেশে ফিরে আসি। আমি আমার বাবার স্বপ্ননপূরণে কাজ করে যাচ্ছি, আমার বাবা আজীবন এই বাংরাদেশের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, বহু বার জেল খেটেছেন, আমৃত্যু তিনি জনগনের ভাগ্য উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করেচেন। আর আমার মা তার পাশে থেকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা জাতীসংদের দেয়া তিনটি সুচকের চেয়ে অনেক বেশী উন্নয়ন ঘটিয়েছি। যার ফলশ্রæতিতে সিপিডি দু বার পর্যালোচনা করে। এবার আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সম্মৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করা।
তাঁর সরকারের অগ্রগতির জন্য পরিকল্পিত নীতি এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নকে কৃতিত্ব দিয়ে সরকার প্রধান বলেন,তাঁরা ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করাই এখন মূল লক্ষ্য। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ থেকে ২০২১ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। এই সময়ে এই অর্জন আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। কারণ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী যখন আমারা উদযাপন করছি সেই সময় এই যুগান্তকারি অর্জন বাংলাদেশ পায়। বাঙালি জাতির জন্য এটা একটা বিরল সম্মান অর্জন। বিশ^সভায় বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির জন্য একটা অনন্য উত্তোরণ।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। সে সময় সৌদি পরিবহন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার সালেহ নাসের আল জাসেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সংসদ অধিবেশনে পরিদর্শনে আসেন এবং অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে বলে নয়, সর্বক্ষেত্রেই বিশে^ আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্র্তি উজ্জ্বল হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন।
‘মুজিব চিরন্তন’ থিম নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে অনুষ্ঠানমালায় ৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণ এবং রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, সৌদি বাদশাহ এবং ব্রæনাই সুলতান থেকে শুরু করে ১৯৪টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সে অনুষ্ঠানে অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন বার্তা এবং ভিডিও বার্তা প্রদানের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যই এ সম্মান আমরা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই যে যেটাই বলুক আমি মনেকরি যত সমালোচনাই করুক বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা কাজ করে যাব। তবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাব, বাংলাদেশের এই গতি যেন আর কেউ রোধ করতে না পারে। নানারকম চক্রান্ত ষড়যন্ত্র থাকবে এবং সেগুলো মাথায় নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি সেটা বাংলাদেশের জনগণেরই অবদান।
এবারের অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর বিশেষ আলোচনার সুযোগ প্রদানে স্পিকারকে এবং এই বিশেষ আলোচনার শুরুটা রাষ্ট্রপতির ভাষণের মাধ্যমে হওয়ায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকেও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর ওপর বার বার মৃত্যু আঘাত আসা এবং দলের নেতা-কর্মীদের মানব ঢাল রচনা করে তাঁকে আগলে রেখে সেসব হত্যা প্রচেষ্টা থেকে রক্ষার প্রসংগ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ আমাদের এই সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশকে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। সেটারই আমি শোকরিয়া আদায় করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতো। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল -সেই জিয়া, এরশাদ বা বেগম জিয়া কেউই দেশকে আসলে উন্নত করতে চায়নি। ক্ষমতা ছিল তাদের কাছে ভোগের বস্তু।
আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, হরতাল, অবরোধ- এসব কর্মকা- উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্থ করেছে- এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিএনপি’ আহুত অবরোধ আজ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়নি।
তিনি বলেন, উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করেছে। এরপরে এই কোভিড-১৯ মহামারিও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতির চাকা যখন স্থবির তখন আমরা তা সচল রেখেছি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়ায় আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা।
মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে সেবা করে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী
Leave a comment