বিশেষ প্রতিবেদন : পদ্মা ব্রিজ চালুর পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে মংলা বন্দর। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন নতুন জাহাজের আগমন। একসময় মোংলা বন্দর চ্যানেলে নাব্যতা সংকটের কারণে চট্রগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার খালাস করে ড্রাফট কমিয়ে জাহাজ মোংলায় প্রবেশ করে। ফলে কন্টেইনারাইজড মালামাল আমদানি রফতানীতে ব্যবসায়ীগণ মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত ছিলেন না। তাদের উৎসাহ বৃদ্ধিতে বঙ্গপসাগর থেকে মোংলা বন্দর চ্যানেলে প্রবেশ মুখে ইনার বারে ৩০ কিলোমিটার নদী ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং করা হয়েছে। ফলে মোংলা বন্দর জেটিতে এখন ৯.৫-১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেলিং করতে পারছে। আগে চ্যানেলে নাব্যতা ছিল মাত্র ৫-৬ মিটার। তখন বন্দরের জেটিতে ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে মোংলা এখন বাণিজ্যের স্বর্ণদুয়ার। মোংলা বন্দরে এখন স্বর্ণ যুগ চলছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা ও নেীপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনার ফলে মোংলা বন্দরে এখন স্বর্ণ যুগ চলছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় চট্রগ্রামের তুলনায় মোংলা বন্দর থেকে ঢাকার দুরুত্ব ১০০ কিলোমিটার কমে গেছে। এখন মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় মোংলা বন্দর থেকে পণ্য ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। রেল লাইন পরিপূর্ণ ভাবে চালু হলে বন্দরের কর্মযজ্ঞ আরও বাড়বে। এছাড়া বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য ১০ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। শেষ হয়েছে খুলনা-মোংলা রেলসেতু ও রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দের নির্মাণ কাজ। এরই মধ্যে মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক দেশের শিল্প-বাণিজ্যের কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় অমিত সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত সুচিত হয়েছে। এ বন্দরকে কেন্দ্রকরে গড়ে ঊঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোংলা বন্দরের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত মোংলা বন্দর ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এসময় বন্দরে ৩ হাজার ৭০০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করে। ২০২০-২০২২ অর্থবছরে নীট মুনাফা এবং বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙরের হার দ্বিগুন হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১০৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন হয়। এ বছর বন্দরে ৭৮০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৩৩ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করে। এ বছর বন্দরে ৯১২টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১১৭ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন হয়। এ বছর বন্দরটিতে ৯০৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোংলা বন্দরে মোট ৪৫৯টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করে। এ সব জাহাজে সার, সিমেন্ট, ক্লিংকার, সিরামিক ক্লে, কয়লা, রামপাল রূপগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেল কার্গো ও ভারি ভারি যন্ত্রপাতি, এলপিজি গ্যাস, ফ্লাই অ্যাশ ও এডিবেল ওয়েলসহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করে।