
জন্মভূমি ডেস্ক : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জেএ বছর কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে বসেই কলার ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে সোনালী হাসি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে। কৃষি বিভাগ বলছে, অনুকূল আবহাওয়ায় গাছে ব্যাপক কলা ধরেছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কলাগুলোর বৃদ্ধি কম হয়েছে। এরপরও কলার ভাল ফলন পেতে কলা চাষীরা দিন রাত পরিচর্যা করে যাচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রচুরকলা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে বলে আশা করছেন চাষীর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় উপজেলার বিস্তৃর্ণ জমিতে এবার কলার বা¤পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত ফসল চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তারা এই সব ফসলের বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন অধিক লাভজনক ফসল কলা চাষ। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জমিতে বিভিন্ন জাতের কলার চাষ হয়েছে। বিভিন্ন জাতের কলার মধ্যে রয়েছে কুলপাত, সাগর ও সবরি কলা। তরে সিংহভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে সর্বি কলা। ধান, পাট ও আখসহ প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনাই কলাচাষে শ্রম ব্যয় হয় কম, বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই বাগান থেকেই বিক্রি হয়। অন্যদিকে কলার বাজারে সহজে ধস নামে না। চড়াঞ্চলের এসব জমিতে অন্যকোন ফসল ভাল না হওয়ায় পুষ্টিকর ফল কলার চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলাচাষের পাশাপশি এখানকার কৃষকরা সাথী ফসল হিসেবে ওল এবং পটল চাষ করে বাড়তি আয় করছে। একই সময়ে একাধিক ফসল চাষের ফলে কৃষকরা বেশী লাভবান হচ্ছেন । ফলে এখানকার কৃষকরা জমির জন্য তিকর তামাক ও ভুট্টা চাষের প্রতি দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।সফল কলাচাষি ইউসুফ আলী তালুকদারজানান, তিনি এক যুগেরও বেশী সময় ধরে কলার চাষ করছেন। প্রাথমিক ভাবে প্রধান ফসলের সাথে কিছু সংখ্যক জমিতে সাথী ফসল হিসাবে কলার চাষ শুরু করেন। স্বল্প বিনিয়োগে ও কম পরিশ্রমে কলা চাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় তিনি এ ফসলকেই বেছে নিয়েছেন। তার কলা চাষের এ সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরা এখন কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষক সাইফুল ইসলামবলেন, কলাচাষের জন্য স্বল্পপুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক লাভ হয় এবং একবার কলা গাছ লাগালে সেই খরচেই দুই বছর ফল পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে আড়াইশ থেকে তিন শত কলার গাছ লাগাতে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। যা থেকে বছর শেষে আয় হবে প্রায় লাখ টাকা। কলার চাষ করলে কলা বিক্রির পাশাপাশি কলা গাছের চারাও বিক্রি করা যায়। কৃষক হেমায়েত হোসেন বলেন, কলা বিক্রি করতে তাদের কোন সমস্যা হয় না। কারণ হিসাবে তিনি জানান, পাইকারী ব্যবসায়ীরা কলার বাগান থেকেই ন্যায্য মূল্যে কলা ক্রয় করে নিয়ে যায়। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে তাদেরকে কলা চাষের উপর প্রশিণ দেওয়া হলে আরো অধিক ুবই লাভ জনক। এই মাটিতে বাংলা কলা, চাঁ¤পা কলা সহ সাগড় কলা বেশি চাষ হয়। আরো জানান, আমার গ্রামের ৫০এরও বেশি রয়েছে একেক পরিবারে ১ থেকে ৩ একর জমিতে কলা চাষ রয়েছে। তবে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় কলাসহ উৎপাদিত ফল-ক্রিয়াজাতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের হিমাগারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তুলনামূলক কম দামে কলা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কলা চাষ করে আনেকে ভাগ্য বদলেছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জমিতে কলা বাগানের পাশাপাশি মিশ্র ফলের গাছ রয়েছে প্রতিটি বাগানে। কলা ব্যবসায়ী বলেন, কলা ফরমালন ও রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন হাটে এর জনপ্রিয়তা ও চাহিদে বাড়ছে। ছড়াপ্রতি ১ থেকে ৩৫ টাকা লাভ হয়। তবে গাড়িতে করে কলা নেওয়ার পথে অনেক কলার ছড়া নষ্ট হয়ে যায় এজন্যে অনেক সময় বড় অঙ্কের ক্ষতিও গুনতে হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ অঞ্চলের মাটি ও আবাহাওয়া কলা চাষের উপযোগী। অনেক জাতের হলেও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মূলত কাঁঠালিকলা,শোবড়ি কলাও চাঁপা কলার উৎপাদন বেশি। দুটি জাতের মধ্যে কাঁঠালিকলা পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া এ জাতের কলাটি বেশি দিন টেকসই থাকে। দ্রুত নষ্ট হয় না। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান কলা অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় এর ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে কলার চাষ বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।