শহিদ জয়, যশোর : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। গত রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন শেষে রাত ১০টার দিকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বেসরকারীভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন যশোর রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। প্রাপ্ত ফলাফলে যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া বাকি ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। যশোর ছয়টি আসনের মধ্যে এবার চারটিতে আসনে নতুন মুখ পেয়েছে জনগণ।
প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে, যশোর- ১ (শার্শা) আসনে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন বারবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আশরাফুল আলম লিটন পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৭৭ ভোট (অবশ্য তিনি সকালে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বর্জন করেছেন)। এছাড়াও এ আসনে জাতীয় পার্টির আক্তারুজ্জামান পেয়েছেন ২ হাজার ১৫১ ভোট।
যশোর- ২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসনে নতুন মুখ হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তৌহিদুজ্জামান। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৩৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি ট্রাক প্রতীকের মনিরুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৮৮২ ভোট। এছাড়াও এ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম হাবিবুর রহমান পেয়েছেন ২২২ ভোট, (এই আসন থেকে এসএম হাবিবুর রহমান তিনি আগেই নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন) এই আসন থেকে অপর প্রার্থীরা বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুল আওয়াল পেয়েছেন ১ হাজার ২৪৫ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফিরোজ শাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৯৫০ ভোট, এবং বিএনএফের প্রার্থী শামসুল হক পেয়েছেন ১২০০ ভোট।
যশোর-৩ (সদর) আসনে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার ৭২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথ পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৫১১ ভোট। এছাড়াও এ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান পেয়েছেন ১ হাজার ২৪৬ ভোট, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. কামারুজ্জামান পেয়েছেন ৩৮৯ ভোট, বিকল্পধারার প্রার্থী মারুফ হাসান কাজল পেয়েছেন ৫৫৫ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহাবুব আলম বাচ্চু পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১০ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী শেখ নুরুজ্জামান পেয়েছেন ২২৪ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সুমন কুমার রায় পেয়েছেন ৬৩৩ ভোট।
যশোর -৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুল। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ২৯৫ ভোট। এ আসনে জাতীয় পার্টির জহুরুল হক পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৪৬ ভোট, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম শাব্বির আহমেদ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিৎ কুমার রায় পেয়েছেন ৫৮৬ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ইউনুছ আলী পেয়েছেন ৪ হাজার ১৫৩ ভোট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি কুমার মন্ডল পেয়েছেন ৪২৩ ভোট।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ বিশিষ্ট শিল্পপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের এসএম ইয়াকুব আলী। তিনি পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৪৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩০২ ভোট। এছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির এমএ হালিম পেয়েছেন ৬২৪ ভোট, তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ পেয়েছেন ২৩৬ ভোট, ইসলামি এক্যজোটের প্রার্থী হাফেজ মওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসী পেয়েছেন ৮০৬ ভোট।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের আজিজুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৬৯ ভোট। এ আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আমির হোসেন পেয়েছেন ১৭ হাজার ২০৯ ভোট এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম হাসান পেয়েছেন ৬৪০ ভোট।
যশোর জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৯ হজার ৫৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১১লাখ ৭৬ হাজার ১০৫ জন, নারী ১১ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন ১৫ জন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। রোববার ভোট গ্রহন চালাকলীন সময়ে যশোর শহর, মনিরামপুর, বেনাপোল ও ঝিকরগাছায় বিছিন্ন কয়েকটি সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। এসকল ঘটনায় প্রায় নয়জন আহত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঘটনার পরপরই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই সকল ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।