যশোর অফিস : ছাত্রীদের অফিস রুমে ডেকে এনে আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ উঠেছে যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় মেয়েদের বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহৃত কিছু জিনিস ওই প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে নিতে বাধ্য করা হয়। এই ব্যাপারে রোববার এক অভিভাবক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বিভিন্ন লোকের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।
তবে ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মিন্টু।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যায়। এসময় জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য টিফিনের ৫ মিনিট সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিচের চেয়ার থেকে উঠে ওই ছাত্রীর কাছে এসে আপত্তিকর আচারণ শুরু করেন। এসময় বিব্রতকর অবস্থা ওই ছাত্রী কান্নাকাটি শুরু করে। এক পর্যায় শ্রেণি কক্ষে গিয়েও কান্নকাটি করতে থাকে। পরে বিষয়টি বাড়িতে এসে তার পরিবারকে জানায়। পরিবারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দেন।
অভিযোগের অনুলিপি কপি যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, আঞ্চলিক পরিচালক মাউশি খুলনা, জেলা প্রশাসক যশোর, জেলা মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা মাউশির কর্মকর্তা বরাবর দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী আরো জানিয়েছে, নবম ও দশম শ্রেণির শতাধিক মেয়ের সাথে সাথেই এই ধরণের আচারণ করেছেন প্রধান শিক্ষক। বর্তমানে ওই দুই শ্রেণির মেয়েরা প্রধান শিক্ষক আতংকে রয়েছে। আবার অনেক মেয়ে এই ঘটনায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে বলেও জানা গেছে।
ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রী জানিয়েছে, মেয়েদের বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে নিতে বাধ্য করা হয়। তাছাড়া কোন প্রয়োজনে কেউ প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে চেয়ার থেকে উঠে এসে আপত্তিকর আচারণ শুরু করেন। বিষয়টি সভাপতিকে জানানো হলেও তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
ফলে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কাছে কোন মেয়েরই ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। অনেক মেয়ের পরিবার বর্তমানে জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠাতে রাজি হচ্ছেনা।
এই ঘটনা জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী ও সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টু বিভিন্ন লোকজনের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য মাত্র বছর খানেক আগে জুলফিকার আলী প্রধান শিক্ষক হিসেবে জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টুর শ্বশুর বাড়ির নিকটাত্মীয় বলে বিশেষ কোঠায় এখানে চাকরি হয়েছে। যোগদানের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক শুরু করেন মেয়েদের উপর যৌন নিপীড়ন। বিষয়টি নিয়ে খোদ ওই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও ব্রিতকর অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী বলেছেন, এটি একটি কুচক্রি মহলের ইন্দনে করা হচ্ছে।
সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেছেন, প্রধান শিক্ষক দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ায় অনেকেই মেনে নিতে পারছেনা। ফলে এই ঘটনাটি ষড়যন্ত্র মূলক বলে দাবি করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মিন্টু।
এই ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেছেন, মউশির মহাপরিচালক বরাবর একটি অভিযোগের অনুলিপি কপি আমি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।