যশোর প্রতিনিধি : মাইকে ঘোষণা দিয়ে যশোর সদরের বড় হৈবতপুরে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। ঘটনাটি
মঙ্গলবার বেলা এগারোটার দিকে। এসময় বিএনপির ঘরানার ৫ জন কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহতরা হলেন, হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি রাজু (৪৪), ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক শামীম (৩৬), বিএনপি কর্মী জিয়া (৩৫) এবং ৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের কোষাধক্ষ পাপ্পু। এছাড়া দুপুর দেড়টার দিকে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ঘরানার শফি নামের একজন নিজেকে আহত দাবি করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে হৈবতপুরের বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েন। হাসপাতাল চত্তরেই শফিকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, চুরামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চাষাবাদের জমি রয়েছে হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামের মাঠে। তাদের মধ্যে রয়েছেন চুরামনকাটি ইউপি মেম্বর ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমানের।
অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আনিছুর নিজের জমিতে সেচের পানি দিতেন হৈবতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জমির আইল কেটে দেয়। এর প্রতিবাদ করার কারো সাহস ছিলোনা কারো। ঠিক একই ভাবে মঙ্গলবার অন্যের পানি নিজের জমিতে দেয়ার জন্য আইল কেটে দেন আনিছসহ তার লোকজন। গ্রামবাসী বিষয়টির প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে আনিছুর নিজ এলাকার মসজিদের দুইটি মাইকে ঘোষনা দিয়ে লোকজন ডাক দেয়। কিছু সময়ের মধ্যে ৫০/৬০জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চলে আসে। অন্যদিকে বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীও সেখানে চলে আসেন। সে সময় দুই গ্রামের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন যুবদল নেতা রাজু। দুই পক্ষের মধ্যে মিমাংসাও হয়ে যায়। পরে হৈবতপুরের লোকজন ফিরে যাচ্ছিলেন বাড়ির দিকে। এমন সময় আনিছের নেতৃত্বে শফিক, সন্ত্রাসী তৌহিদ এবং রমজানসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হৈবতপুরের লোকজনের উপর আতর্কিত হামলা চালায়। এসময় গুরুতর জখম হন ওই চারজন । এসময় হৈবতপুরের আরও লোকজন ছুটে আসলে আনিছ মেম্বারের লোকজন চলে যায়। পরে স্থানীয়রা পাপ্পু বাদে অন্যদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে এঘটনার সাথে জড়িত আনিছের সহকারী শফিকে নিয়ে তার পরিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে হাসপাতাল চত্তরেই মারপিট করে। হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাজেদুল ইসলাম জানান,আওয়ামীলীগের শাসন আমলে আনিছ মেম্বার যা ইচ্ছে তা করেছেন। গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তার নেতৃত্বে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, হৈবতপুরের মাঠ থেকে সাধারণ মানুষের ফসল তুলে নিযে যাওয়া, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবিসহ নানা ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো হৈবতপুরবাসী। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। সরকার পতনের পর থেকে আনিছচক্র আত্বগোপন করে। কিন্তু সম্প্রতি ফের প্রকাশ্যে এসে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে আনিছ বাহিনী।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার মিঠুন কুমার জানান, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় বেশকয়েকটি ক্ষত রয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে বলে জানান মিঠুন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ কাজী বাবুল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, আওয়ামীলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠার চেষ্টা করছে। আধিপত্ত বিস্তারের চেষ্টা করছে। এরপ্রতিবাদ করায় গ্রামবাসীর উপর হামলা চালিয়েছে। এসময় গ্রামবাসীর পাশে দাড়িয়ে আহত হয়েছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা। তিনি জড়িতদের দ্রুত আটকের দাবি জানিয়েছেন ।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে এই মেম্বার আনিছের নেতৃত্বে এক তরুন ও তরুনীকে ধরে প্রকাশে জুতাপেটা এবং মারপিট করে সমালোচিত হন। সেসময় ওই মেম্বারের পা ধরেও ক্ষমা চেয়েও রেহায় পাননি ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণী। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়। যা নিয়ে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। সেই সময় আটকের দাবিতে মিছিল, মানববন্ধনও হয়। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তিনি পার পেয়ে যান।
যশোরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৫

Leave a comment