By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: যে ‌কারণে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন উপকূলের নারীরা
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > যে ‌কারণে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন উপকূলের নারীরা
তাজা খবরসাতক্ষীরা

যে ‌কারণে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন উপকূলের নারীরা

Last updated: 2025/12/06 at 1:59 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বেড়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। আর মাত্রাতিরিক্ত এসব লোনা পানির দৈনন্দিন ব্যবহারের ফলে জরায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব এলাকার নারীরা। সেজন্য অল্প বয়সেই জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন এই এলাকার অনেক নারীই।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ৯ নম্বর সোরা গ্রামের আসমা বেগম (৩০)। সাত বছর আগে মাত্র ২৩ বছর বয়সে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু কেটে ফেলেন তিনি।
আসমা বলেন, ছোট থেকেই আমার ধাতুর (সাদাস্রাব) সমস্যা ছিল। বিয়ের পরে প্রথম সন্তান জন্মের পর থেকেই জরায়ুতে জ্বালা-পোড়া ও যন্ত্রণা হতো। একে একে তিন সন্তান জন্মের পর জানলাম জরায়ুতে ঘা হয়েছে। তখন অবস্থা খুব খারাপ ছিল। পরে খুলনার এক হাসপাতালে ভর্তি হলে অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দেন ডাক্তার।
তিনি বলেন, আমার বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি গাবুরা ইউনিয়নেই। ফলে জন্ম থেকেই লোনা পানির সাথে বসবাস। তবে আগের তুলনায় যেন লোনাভাব বেড়েছে। গরমকালে লোনাভাব এত বাড়ে যে, পুকুরের পানি মুখেই নিতে পারি না। অথচ তাতেই গোসলসহ সব কাজ করতে হয়।
আসমার চেয়ে কম বয়সে জরায়ু ফেলতে বাধ্য হয়েছেন তার প্রতিবেশী রওশন আরা পারভীন (২৭)। তার গল্পও একই রকম। প্রায় বছর চারেক আগে জরায়ুতে টিউমার দেখা যায়। সে কারণে পুরো জরায়ু ফেলে দেয়া হয় তার। জরায়ু অপারেশনের পর দুজনেরই স্বামী তাদের ফেলে অন্যত্র বিয়ে করেছেন।
শুধু গাবুরা নয়, উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের প্রতিটি গ্রামে জরায়ু সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন এমন নারীর সন্ধান পাওয়া যাবে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নারীদের জরায়ু সংক্রান্ত অসুখের তীব্রতা লোনাপানিপ্রবণ গ্রামগুলোতে বেশি।
শ্যামনগরের প্রতাপনগর ইউনিয়নের রুইয়ার বিলের বাসিন্দা আমিনা বেগম (২৮) বলছিলেন, আমার তলপেট খুব ব্যথা করে, কোমরের অংশ অবশ হয়ে যায়, মনে হয় পেটের ভেতর থেকে কিছু একটা ছিঁড়ে নিচে নেমে আসছে। তাছাড়া প্রচণ্ড সাদাস্রাব হয় আর চুলকায়। ঘণ ঘণ প্রস্রাব হয়। আর প্রসাব করতেও খুব কষ্ট হয়।
‘গ্রামের ডাক্তাররা জরায়ু কেটে ফেলার পরামর্শও দিয়েছেন। কিন্তু এই বয়সে অপারেশন করাতে স্বামী রাজি হননি। আপাতত চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু খুব বেশি হলে ১০-১৫ দিন ভালো থাকি।’
শ্যামনগরের তিনটি বেসরকারি ক্লিনিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরে মোট অপারেশনের প্রায় ১০ শতাংশ রোগীর জরায়ু অপারেশন হয়ে থাকে। এসব ক্লিনিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জরায়ু ফেলে দেয়ার হার বেশি।
বার্ষিক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে সুন্দরবন নার্সিং হোমে শতকরা ৫ জন রোগীর জরায়ু অপারেশন হয়েছে। একই বছরে নগর ক্লিনিকে রোগীদের প্রায় ৮ শতাংশের হয়েছে জরায়ু অপারেশন। এছাড়া বংশিপুর ক্লিনিকে শতকরা ১১ জনের হয়েছে জরায়ু অপারেশন।
শ্যামনগরের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এ প্রতিবেদক অন্তত ৬০ জন নারীর সাথে কথা বলেছেন, যারা জরায়ু সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনের ইতোমধ্যে অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দেয়া হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। কেউ কেউ জরায়ু ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে জরায়ু সমস্যায় ভুগতে থাকলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
শ্যামনগরে অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরায়ুর অসুখের মাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে ৩৮০ জন নারীর ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এদের মধ্যে ২৩ জনের ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাদের দুইজনকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাকিদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তাসনুভা আফরিন বলেন, হাসপাতালে আমি মাসে গড়ে প্রায় নয়শ’ রোগী দেখি। এদের মধ্যে ১০-১২ জন রোগী পাই যাদের জরায়ু ফেলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি।
‘কমিউনিকেশন গ্যাপ, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে জরায়ু কেটে ফেলাটাকেই তারা সমাধান মনে করেছেন। কিন্তু এর ফলে তাদের শারীরিক সমস্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে। অনেকের সংসারই ভেঙে যায়। হট ফ্লাস (হাত-পা ও শরীর জ্বালা-পোড়া), অল্পতে উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধা হতেই থাকে’—বলেন তিনি।
ডা. তাসনুভা অবশ্য মনে করেন, জরায়ু সংক্রান্ত রোগের সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এ এলাকার নারীরা সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ার কারণেই জরায়ু ফেলে দিতে বাধ্য হন।
২০১৮ সালে ‘সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবে লবণাক্ততার প্রভাব’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার নারী ও কিশোরীরা মাসিকের সময় ব্যবহৃত কাপড় লবণ পানিতে ধুয়ে আবারও সেটি ব্যবহার করে। এর ফলে নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত হয় তারা।
: জানা যায়, বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব এবং গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে অপরিচ্ছন্ন ও মাত্রাতিরিক্ত লোনা পানির ব্যবহারের ফলে লিউকোরিয়ায় ভুগছে শিশু থেকে কিশোরী এবং নারীরা। যা ধীরে ধরে জরায়ু ক্যান্সারের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার রেশমা আক্তার বলেন, এখানকার প্রায় প্রতিটি নারী ও শিশু সাদাস্রাব সমস্যায় ভোগে। ২-৩ বছর বয়সী মেয়ে শিশুরও নিয়মিত সাদাস্রাব হয়। এছাড়া মেয়েরা জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যা, রক্তস্বল্পতা, আমাশয়, চর্মরোগ, ডিসমেনোরিয়া (অস্বাভাবিক মাসিক) রোগের ওষুধ নিতে বেশি আসে।
‘সাদাস্রাব বা জরায়ুর কোনো সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেই তিনি পুকুরে নেমে গোসল না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু যেখানে এক পুকুরে অন্তত ৬০-৭০ জনের গোসল করতে হয় সেখানে এই নিয়ম মানার সুযোগ কোথায়? তাই শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব মেয়েরা এখন এই সমস্যাকে নরমাল ব্যাপার ধরে নিয়েছে’—বলছিলেন বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের গৃহিণী জোৎস্না রাণী (২৬)।
চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত সাদাস্রাব এবং নোংরা পানিতে গোসলের কারণে মেয়েদের জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তাসনুভা আফরিন জাগো নিউজকে বলেন, শিশুবয়স থেকে দীর্ঘদিন ধরে সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়ার কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণ, শ্রোণী (পেলভিস) প্রদাহজনক সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব এমনকি সার্ভিকাল ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
‘প্রাপ্তবয়স্কদের লিউকোরিয়ার নানা কারণ আছে। কিন্তু শিশুদের সাদাস্রাবের কারণ হতে পারে পানি কম খাওয়া, এক পুকুরে অনেক মানুষ গোসল করা, অপরিচ্ছন্ন থাকা, কৃমি, অপুষ্টি, ইত্যাদি’—বলেন ডা. তাসনুভা।
দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের রোগীদের সেবা দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, পানির সঙ্কটের কারণে এক পুকুরে অন্তত ২-৩শ’ মানুষ গোসল করেন। আবার সেখানে হাঁস এমনকি গরু-ছাগলের গোসলও করানো হয়। ফলে এই রোগের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। আবার দারিদ্র্য ও অশিক্ষার কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তারা সচেতন নন।
গাবুরা এবং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৫ জন কন্যাশিশুর অভিভাবক জানান, ২-৩ বছর বয়স থেকেই তাদের সাদাস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া এসব এলাকার ১৫ জন কিশোরীও একই সমস্যার কথা জানায়। রয়েছে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাও।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন এই প্রতিবেদককে বলেন, শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় লোনা পানির কারণে মেয়েদের লিউকোরিয়াসহ সাধারণ পানিবাহিত রোগ এবং চর্মরোগের সংক্রমণ বেশি। দেশের অন্যান্য এলাকায় মেয়ে শিশুর লিউকোরিয়ার সমস্যার কথা শোনা যায় না। এটা এই অঞ্চলেই বেশি। লোনা পানির ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবেও এটা হতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলে লবণাক্ততা বেড়েছে। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক নানা সমস্যা দেখা যায়।
‘লবণের জন্য মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়ার ম্যানেজমেন্ট স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। লবণ পানি ব্যবহারের ফলে মেয়েদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি আমাদের গবেষণার পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে’—বলেন তিনি।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে বসে কথা হচ্ছিল স্বাস্থ্যকর্মী দিপালীর সাথে। তিনি নিজেই চর্মরোগের ওষুধ নিতে এসেছিলেন।
আলাপকালে তিনি বলেন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ আমার চার সদস্যের পরিবারের কেউ না কেউ আমাশয়, চর্মরোগ, না হয় অ্যাসিডিটির (গ্যাস) সমস্যায় ভুগছেন। আমি জানি এসবই পানির কারণে। কিন্তু কী করব? এ জীবন থেকে তো পালানোর উপায় নেই। তাই মেনে নিয়েছি।
একই ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাসিমা পারভীনও বলেন এমন কথা। তার চার সদস্যের প্রত্যেকেই চর্মরোগ ও আমাশয়ে ভুগছেন।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নয় মাসের রোগীর তালিকা থেকে দেখা যায়, ১২ শতাংশ মানুষ আমাশয়, ১৫ শতাংশ দুর্বলতা, ১৬ শতাংশ কৃমি সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ব্যথা, গ্যাসসহ নানা ধরনের চিকিৎসা নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। আর চর্মরোগের সমস্যা তো আছেই।
‘আমার পেট-কোমর সব জুড়ে ঘা। এ কারণে স্বামীও আমার সাথে থাকতে চায় না। কিন্তু কী করব? পানির কারণে এসব থেকে আমাদের মুক্তি নেই। গরমকালে এটা সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়,’—বলছিলেন গাবুরার নয় নম্বর সোরা গ্রামের জেসমিন বেগম।
গ্রামটির বাঁধের ওপর দেখা মেলে আকলিমা খাতুনের (১০)। শিশুটির দু’হাত চর্মরোগে আক্রান্ত। রুক্ষ চুল। সে জানায়, হাতের এই অবস্থার কারণে স্কুলেও যেতে পারে না। আকলিমা জানায়, তার ক্লাসের প্রায় প্রত্যেকেরই চুলকানির সমস্যা আছে, তবে তারটা একটু বেশি।
আকলিমার সাথে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল, ঠিক তার উল্টোপাশে একটি ছোট্ট পুকুরের লোনাপানির মধ্যে ৮-১০ জন শিশু গোসল করছিল। তারা জানায়, লোনা হলেও এই পানিতেই গোসল করতে হয় তাদের।
গাবুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৩০ জন শিশু ও তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকেই চর্মরোগে ভুগছেন।
ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার হেলেনা বিলকিস বলেন, চর্মরোগের মলম (বেনজাইল বেনজয়েট অ্যাপ্লিকেশন) ছয়টা বোতল দেড় মাসের জন্য সাপ্লাই দেয় সরকার। কিন্তু এর চাহিদা এতো বেশি যে দুই দিনেই শেষ হয়ে যায়। মাসের বাকি দিনগুলোতে কাউকে দিতে পারি না।
ওই ক্লিনিকে মাত্র আধাঘণ্টায় ৩১ জন নারী ও শিশুকে এই মলম সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার হেলেনা বিলকিস বলছিলেন, আট বছর ধরে চিকিৎসা সেবার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই এলাকার ৯০ ভাগ অসুখই পানিবাহিত। অসুখ বেশি নারী ও শিশুদের। তারা সবচেয়ে বেশি ভোগে চর্মরোগে। কারণ এখানে একটা পুকুরে ২-৫শ’ মানুষকে গোসল করতে হয়।
‘দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে পুকুরে বসানো ফিল্টার থেকে খাবার পানি আনি। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করি। এ সময় পুকুরের পানির লোনাভাবও কম থাকে। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালে পানির লবণাক্ততাও কমেনি, কমেনি অসুখ-বিসুখও’—বলছিলেন গাবুরার ডুমুরিয়া গ্রামের খাদিজা খাতুন।
দুপুরের তপ্ত রোদে নিজের কুঁড়ে ঘরের সামনে সন্তান কোলে নিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, অন্তত চারশ মানুষ ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডুমুরিয়া গ্রামের সেই পুকুরটিতে হাঁস ভাসছে। কয়েকটি ছেলেমেয়ে গোসল করছে। ওই পুকুর থেকে কলস ডুবিয়ে পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা। একজনের পানি নিতে সর্বোচ্চ এক মিনিট লাগে। তাতেও পুকুরের ঘাটে লম্বা লাইন লেগে যায়।
খাদিজা বলেন, এসব জেনেও এই পুকুরের পানি খেতে হয়। বৃষ্টির পানিও বেশি ধরে রাখতে পারি না। কারণ বড় ড্রাম বা ট্যাংক কেনার টাকা নেই।
ডা. তাসনুভা আফরিন বলছিলেন, সাধারণ মাত্রার লবণ পানি অনেক সময় অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত ও অপরিচ্ছন্ন চর্মরোগ, জরায়ু সংক্রান্ত নানা রোগের কারণ হয়ে ওঠে।
২০০৮ সালে লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজ এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘খাবার পানিতে লবণাক্ততা এবং বাংলাদেশের উপকূলে মাতৃস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের গর্ভবতী মায়েদের প্রি-এক্লাম্পসিয়া (খিঁচুনি) এবং গর্ভকালীন উচ্চরক্তচাপের হার বেশি। এই হার গ্রীষ্মকালে বেশি থাকে, যখন বর্ষাকালের তুলনায় ভূপৃষ্ঠে ও ভূগর্ভস্থে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় চার কোটি মানুষ খাবার পানির জন্য সাধারণত পুকুর, নদী এবং নলকূপের ওপর নির্ভর করে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পানির অনুপ্রবেশ এবং দুর্বল পানি ব্যবস্থাপনা ও চিংড়ি চাষের মতো মনুষ্যসৃষ্ট কারণে এই উৎসগুলোও মারাত্মক লবণাক্ত হয়ে উঠেছে। লবণাক্ততা ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ভেতরের অঞ্চলে প্রবেশে করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লবণাক্ত পানির এই সমস্যা আসলে কতটা গভীর তা আরও স্পষ্ট করে বোঝা যায় ‘ডিস্ট্রিবিউশন অব গ্রাউন্ডি ওয়াটার স্যালানিটি অ্যান্ড ইটস সিজনাল ভ্যারিয়াবিলিটি ইন দ্য কোস্টাল অ্যাকুইফারস অব বেঙ্গল ডেল্টা’ শীর্ষক গবেষণায়। এতে বলা হয়, ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা উপকূলের আশেপাশের বেশিরভাগ অঞ্চলে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।
এই গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ উপকূলীয় অঞ্চলে মূল বা দ্বিতীয় জলবায়ুতে লবণাক্ততার পরিমাণ (ক্লোরাইড গণনা) শুকনো মৌসুমে ১০৩-১২, ৪৩৩ এবং বর্ষাকালে ৩৪ থেকে ১১, ৩৬৬ পর্যন্ত থাকে।
ঢাকার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) রাজধানীতে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানি সরবরাহ করে ৮ দশমিক ৪৯ টাকা দরে। একই পরিমাণ পানি খুলনা নগরবাসীকে সেখানকার ওয়াসা দেয় সাড়ে চার টাকায়। কিন্তু সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানুষগুলো ২০ লিটার খাবার পানি কেনে ১০ টাকায়। এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে লোনা পানিকে খাবার উপযোগী করা হয়।
দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলাজুড়েই এই চিত্র। এখানে লবণাক্ত পানির কারণে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জীবন দেশের অন্য এলাকা থেকে ভিন্ন।
উপকূলের প্রতিটি পরিবার বর্ষাকালের তিন থেকে চার মাস ধরে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে প্রয়োজন মেটায়। একটু অবস্থাসম্পন্ন বাড়িতে আধুনিক পানির ট্যাংকিতে পানি সংগ্রহ করা হয়। তবে বছরের বাকি সময়গুলোতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল তারা। তারা প্রতি লিটারে ন্যূনতম ৫০ পয়সা দরে পানি কেনেন। কোনো কোনো জায়গায় লিটারের দাম ৭০ পয়সা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইশ্বরীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আকরাম হোসেন জানান, সমস্যার কারণে তিনি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানি সংগ্রহ করেন। প্রতিলিটার পানির জন্য তার খরচ হয় ৯০ পয়সা।
তিনি জানান, পাঁচজনের পরিবারে দিনে প্রায় ২০ লিটার পানি প্রয়োজন হয় তার। অর্থাৎ মাসে ৬০০ লিটার পানির জন্য খরচ করতে হয় অন্তত ৫৪০ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে জাতীয় গড় পারিবারিক আয় ছিল ১১ হাজার ৮৭৯ টাকা। বরিশাল ও খুলনা বিভাগে গড় আয় ছিল যথাক্রমে নয় হাজার ১৫৮ এবং নয় হাজার ৫৯৯ টাকা। এই এলাকায় পানির ব্যয় পরিবারের গড় আয়ের প্রায় ৩ শতাংশ, যা দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য অনেক বেশি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এনায়েতুল্লাহ এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর–কালিগঞ্জে ২০০-২৫০ ফুট গভীর পানির স্তর থাকলেও তা প্রচণ্ড লোনা। এরপর আবার ১১০০ ফুট পর্যন্ত কোনো পানির স্তর নেই। তবে গাবুরাতে ৬০০-৭০০ ফুট পর্যন্ত গিয়ে কিছুটা খাবারযোগ্য পানি পাওয়া যায়। কিন্তু সাধারণ কোনো পরিবারের পক্ষে এত গভীর টিউবওয়েল বসানো সম্ভব নয়।
‘ফলে এসব এলাকার মানুষ টিউবওয়েলের পরিবর্তে ভূপৃষ্ঠের পানি বেশি ব্যবহার করে। এই পানি লবণাক্ত হয় আবার ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। ফলে এসব এলাকার মানুষ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে ভোগে’—বলেন তিনি।
ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা যেমন বাড়ছে, তেমনি মাছের ঘের তৈরির মতো মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও উপকূলে লবণাক্ততা বাড়ছে।
প্রতিনিয়ত লবণাক্ততা বাড়ার কারণে উপকূলের এসব গ্রামে এখন ফসল ফলে না বললেই চলে। চারদিকে শুধু মাছ আর কাঁকড়ার ঘের। বাণিজ্যিক উৎপাদন হওয়ায় সবার ভাগ্যে সেসব মাছ জোটেও না। আর মাছ জুটলেও পুষ্টিকর সবজির ঘাটতি আছে ব্যাপক। ফলে এসব এলাকার জনগোষ্ঠী বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা ভুগছে পুষ্টিহীনতায়।
শ্যামনগর থানার ইশ্বরীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার কিশোরীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা ও পুষ্টিহীনতা বেশি। মায়েদের মধ্যেও একই সমস্যা। তারা অত্যন্ত দুর্বল। তাছাড়া চর্মরোগ, পাতলা পায়খানা, আমাশয় তো আছেই।
তার মতে, পর্যাপ্ত শাক-সবজির অভাব এর অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে আলাপকালে আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের দিপালী রাণী চৌকিদার বলছিলেন, বছরে তিন-চার মাস নিজেদের লাগানো সবজি খেতে পারি। বাকি সময় কিনে খেতে হয়। আর কিনে খেতে গেলে তো হিসাব করেই খেতে হয়। মিষ্টি পানির অভাবে কোনো ফসল লাগাতে পারি না।
আড়পাঙ্গাশিয়া পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টগরী শীল বলছিল, তরকারি কিনে খাওয়ার মৌসুমে খাবার কষ্টটা বেশ বেড়ে যায়।
তার দিনের খাবার তালিকা থেকে জানা যায়, তিন দিনে সে একবার ডাল, একবার মাছ এবং বাকি দিনগুলোতে শুধু আলু এবং বেগুনের তরকারি খেয়ে থাকে। কখনো কখনো তিন বেলাই আলু দিয়ে ভাত খেতে হয়।
গাবুরার নাছিমা খাতুন বলেন, বর্ষাকালে হয়তো দু-একটা সবজি লাগানো যায়। বাকি সময় তো এখানকার মাটিতে ঘাসও হয় না। তাহলে অত শাক-সবজি কোথায় পাবো? ১২ মাস তরকারি কিনে খাওয়ার ক্ষমতা তো সবার থাকে না। তবে নদীতে নামলে টুকটাক খাবার মাছ হয়। তবে সেই প্রবণতা কমে আসছে। কারণ নদীতে মাছের তুলনায় মাছ ধরার লোক বেশি এখন।
‘আমাদের ভাতের কষ্ট ছিল, কিন্তু পানির কষ্ট ছিল না। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা সেই যে বাঁধ ভাঙলো, গ্রামের পর গ্রাম লোনা পানিতে ডুবে গেলো; তারপর থেকে এখানকার কোনো মানুষ আজো মিষ্টি পানিতে গোসল করেনি’—আক্ষেপ করে বলছিলেন গাবুরার গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী সানা (৫৮)।
ভারী গলায় তিনি বলছিলেন, শুধু লোনা পানির কারণে আমাদের জীবন গত ১০-১১ বছরে পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এমন কষ্টের জীবন যেন আর কারও না হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানিতে বৃদ্ধি পেয়েছে লবণাক্ততা। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে ওই এলাকার মানুষ। লোনা পানিতে কাজ করার কারণে বিশেষ করে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে মাছধরা ও বনজীবী নারীরা অকাল গর্ভপাত, জরায়ু সমস্যাসহ বিভিন্ন মেয়েলী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝূঁকিতে পড়ছে উপকূলের নারীরা।
সূত্রমতে, লবণাক্ত পানির জন্য নারীদের অকাল গর্ভপাত ঘটছে। যে কারণে উপকূলীয় এলাকায় কমছে জন্মের হার। জাতীয়ভাবে দেশে জন্মের হার ১.৩৭ শতাংশ হলেও সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের জন্মের হার ০.৮৯ শতাংশ। এদিকে সাতক্ষীরা এবং উপজেলার ক্লিনিক গুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কয়েকবছর ধরে জরায়ু অপারেশন বেড়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, কৈখালি, রমজাননগরসহ উপকূলবর্তী ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ নারীরা সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী গুলোতে (সকাল ও বিকেল) দুই জোয়ারে ৭/৮ঘন্টা নদীতে নেমে রেণু পোনা (ছোট) মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করেন। উপকূলীয় এলাকার বাঘ বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীসহ সংসার চালাতে অধিকাংশ নারীদের কাজ করতে হয়। অধিক সময় লবণাক্তা পানিতে কাজ করার ফলে নারীদের জরায়ুসহ বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের জেলে পাড়ার বাঘ বিধবা দিপালী রাণী বলেন, স্বামীকে বাঘে খেয়েছে ২৩ বছর আগে। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের আয়ে সংসার চলে না। আগে ক্ষেতে খামারে কাজ করতো। কিন্তু ২০০৯ সালের আইলার পর এলাকায় কাজের ক্ষেত্র কমে যায়। তাই বাধ্য হয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ নদীতে রেণু পোনা (ছোট) মাছ ও কাকড়া আহরণ করেন। সকাল ও বিকেল দুই জোয়ারে ৭/৮ ঘণ্টা নদীতে নেমে রেণু সংগ্রহের জন্য জাল টানেন। নদী থেকে আহরিত রেণু প্রতি পিস ৫০ পয়সা বিক্রি করে কোন রকম সংসার চলে। দীর্ঘ সময় নদীতে কাজ করার ফলে শরীরে ঘাঁ-পাচড়াসহ বিভিন্ন মেয়েলি সমস্যায় ভুগছেন তিনি।
গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, লবণ পানিতে অধিক সময় কাজ করলে বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা হয়। অনেক নারীর জরায়ূসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জরায়ু কেটে ফেলতে হচ্ছে অনেকের। আতঙ্কে আছি কিন্তু করার কিছু নেই। কাজ না করলে খাবো কি? ঘন ঘন দূর্যোগের কারণে এলাকায় কাজের অভাব। সব কিছু জেনেও লবণ পানিতে নেমে রেণু পোনা ধরতে হচ্ছে। না হলে খাবো কী? আমার সাথে কাজ করে এই রকম বেশ কয়েকজন নারীর জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। আমার এক প্রতিবেশী ২৪ বছর বয়সে তার জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। জরায়ু কাটার ফলের অনেকের স্বামী তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সমচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জরায়ু কেটে ফেলার পরও সুস্থ্য হতে পারছে না। দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া এইসব কারণে এই অঞ্চলে তালাকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীদের স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য উপকূলীয় এলাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেওয়ার দাবি করছি।
গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া এলাকার ধাত্রী আসমা উল হুসনা বলেন, বাচ্চা ডেলিভারী করতে যেয়ে দেখছি শতকরা ৯৯ শতাংশ নারী জরায়ু সমস্যায় ভুগছেন। সাদা স্রাব ভাঙতে ভাঙতে ক্ষত হয়ে ঘা হয়ে যায়। বিয়ের আগে থেকেই সমস্যা হয়। প্রথম বাচ্চা ডেলিভারী করে যেয়েও দেখেছি সেই নারীরা জরায়ু সমস্যা। লবণাক্ত পানির কারণে মাসিক আগেই এই এলাকার মেয়েদের। এসব কারণে স্বামীরা সাংসারিক অশান্তি হয়। স্বামীর মন রক্ষা করতে পারছে না, সংসারে কাজ করতে পারছে না। সন্তান লালন পালনও করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর মাত্রাতিরিক্ত এসব লোনা পানির দৈনন্দিন ব্যবহারের ফলে জরায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব এলাকার নারীরা। সেজন্য অল্প বয়সেই জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন এই এলাকার অনেক নারীই। এই এলাকার নারীরা সংকোচবোধ করেন। স্বামীর সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাননা। দিন দিন পানিতে লবণ বেড়েই চলেছে। শীতের সময় পানি মুখে দিলে মুখ জ্বালা করে। এখানে গোসলের পানিরও সমস্যা। যে কারণে দিন দিন নারীদেও স্বাস্থ্য ঝুকি বাড়ছে।
গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, এখানে ১০ বছর ধরে যাবত কর্মরত আছি। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ চর্মরোগ, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। অধিকাংশ নারী জরায়ুসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এই ইউনিয়নটির চারিদিকে নদী হওয়ার কারণে নদী পথে যেতে হয় সে কারণে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এই এলাকার নারীরা। আমাদের ভবনের অবস্থায় জরাজির্ণ। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই এলাকার চাহিদার তুলনায় খুবই কম ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ওষুধের সরবরাহ বাড়াতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার. জিয়াউর রহমান এই প্রতিবেদক কে ‌বলেন, এই এলাকার বেশিরভাগ নারী চুলকানি, প্রসাবে জ্বালাপোড়া, গায়ে ব্যথা, বিভিন্ন মেয়েলি সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। লবণ পানির কারণেই যে নারীদের গর্ভপাত হচ্ছে-এটি গবেষণা ছাড়া বলা সম্ভব না। তবে সম্প্রতি এই এলাকার নারীদের গর্ভপাত বেশি হচ্ছে। লবণ পানিতে কাজ করার কারণে নারীদের গর্ভপাত হচ্ছে, এমন কোনও বিষয় তার জানা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, আমাদের চারিদিকে লবণ এবং লবাণক্ত পানিতে কাজ করার ফলে নারীদের বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা হচ্ছে। জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনা অনেক শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে স্বামীর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ শারিরীকভাবে খুবই দুর্বল। এছাড়া এই এলাকার দ্রুত বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে তালাকের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুন। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এলাকায় কাজ নেই। ফলে কাজের সন্ধানে পুরুষরা এলাকা ছাড়ছেন। ফলে অভাবের কারণে লবণ পানিতে কাজ করায় অনেক নারীর অকালে গর্ভপাত হচ্ছে। ভুগছে নানা রকম শারীরিক সমস্যায়।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন বলেন, আমরা গবেষণা চালিয়ে দেখেছি দীর্ঘ সময় লবণ পানিতে কাজ করার ফলে নারীদের বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার পাশাপাশি তাদের শাড়ি বা কাপড় বেশি নষ্ট হয়। এ বাবাদ তাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়।

জন্মভূমি ডেস্ক December 7, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article বদলে যাচ্ছে‌ উপকূলের অর্থনীতির চাকা, স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজার হাজার বেকার যুবক
Next Article যশোরে হত্যার ঘটনায় দুই যুবক হেফাজতে,বার্মিজ চাকু উদ্ধার

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
বাগেরহাট

শরণখোলায় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
খুলনা

পাইকগাছা সড়ক কাজে অনিয়ম, সংবাদ প্রকাশের দৌড়ঝাঁপ শুরু

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
সাতক্ষীরা

উপকূল মানুষ বৈষম্যর শিকার ‌‌কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

উপকূল মানুষ বৈষম্যর শিকার ‌‌কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ খাবার পানিতেও বৈষম্যর শিকার

By জন্মভূমি ডেস্ক 14 hours ago
সাতক্ষীরা

ক্ষতি গরিবের, লাভ ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 day ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?