জন্মভূমি ডেস্ক : কুষ্টিয়ার শিলাইদহ উপজেলায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ির ২০১ নম্বর কক্ষ থেকে ২০১৬ সালে চুরি হওয়া দুটি তরবারি সাত বছরেও উদ্ধার হয়নি। এছাড়া, আদালতে তরবারি চুরির মামলা নিষ্পত্তির পরও কক্ষটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্র ভক্তরা।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ কুঠিবাড়ির ২০১ নম্বর কক্ষের তালাবদ্ধ আলমারি থেকে দুটি তরবারি রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে যায়। সিসি ক্যামেরা ও দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ এড়িয়ে আলমারির তালা ভেঙে সুরক্ষিত কুঠিবাড়ি থেকে চুরি হওয়া তরবারি সাত বছর পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি। এমনকি চুরির রহস্য পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষনিক দৌড়-ঝাঁপ শুরু হলেও পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। চুরির সময় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বন্ধের ঘটনাটিও পুলিশের চোখে ছিলো রহস্যঘেরা।
এদিকে, তরবারি চুরির ঘটনায় কুমারখালী থানায় করা মামলায় ২০১৮ সালে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দিলে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে সিআইডি কুমারখালী থানা পুলিশের দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক বলে আদালতে দাখিল করে। এতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিউ পিটিশন করেন। ২০২২ সালে আদালত রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেন। এদিকে দু’দফায় পুলিশি তদন্ত ও আদালতে রিভিউ পিটিশন খারিজের পরও সাত বছর ধরে কুঠিবাড়ির ২০১ নম্বর কক্ষটি সিলগালা (তালাবদ্ধ) করে রাখা হয়েছে।
এছাড়া, ২০১৬ সালে ঘটনার পর পরই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ কুঠিবাড়িতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বললেও পরবর্তীতে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।
রবীন্দ্রভক্ত ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. হাসান সরওয়ার বলেন, কবিগুরুর স্মৃতিধন্য শিলাইদহের কুঠিবাড়ি থেকে তরবারি চুরির ঘটনা মানহানিকর। চুরির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার বিষয়টিও চরম দুঃখজনক।
কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান আল-আমিন বলেন, ২০২২ সালে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তরবারি চুরির মামলার রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে যায়। পরে মামলাটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত এগোয়নি। তরবারি চুরির ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের নির্দেশনায় কুঠিবাড়ির ২০১ নম্বর কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে।