সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : ১৩ জুন, থে ২০২৫ থেকেসাগরে ফিরতে শুরু করেছে জেলেরা। প্রায় দুই মাস পর মৎস্য আহরণের জন্য সাগরে নামতে শুরু করেছে দেশের জেলে সম্প্রদায়।
অধিকাংশ জেলে আজ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে পরিবার পরিজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এক থেকে দেড় মাসের জন্য জীবিকার তাগিদে সাগরে নেমে পড়বে।
নিরাপদ মৎস্য প্রজননের জন্য সরকার ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধের সরকারি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত বুধবার মধ্যরাতে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে জেলেরা তাদের সমুদ্র অভিযানের লক্ষ্যে রসদ জোগাড়, বাজার সদাই এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তারা আল্লাহর নাম নিয়ে গভীর সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলেদের পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরইমধ্যে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। অনেক জেলে গতকাল সাগরে নেমে পড়েছেন। অধিকাংশই জুমার নামাজ শেষে রওয়ানা দিবেন।
সরকার প্রতিবছরের মতো এবছরও ইলিশসহ ৪৭৩ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন, সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ৫৮ দিন পর গত বুধবার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ উপকূলজুড়ে জেলেদের অপেক্ষার পালা শেষ। ফলে তারা নেমে পড়েছেন সাগরে।
মৎস্য বিভাগ আগেই জানিয়েছে, মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার দুই মাস তালিকাভুক্ত জেলেরা সরকারের কাছ থেকে নির্ধারিত রেশনিং খাদ্য ৫৮ কেজি করে চালসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেয়েছেন।
এদিকে উপকূলীয় মৎস্যঘাটে আড়তদার ব্যবসায়ীরাও তাদের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে। জেলেরা মাছ নিয়ে আসার সাথে সাথে যেন তা ক্রয় ও সংরক্ষণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বরফ কল গুলো সচল হচ্ছে। ট্রলারগুলোতে প্রয়োজনীয় বরফ তোলা হচ্ছে। ঘাটেও বরফ মজুদ রাখা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলে আবদুর গফুরের বয়স ৩৫ বছর। তিনি জানান, ২০ বছর বয়স থেকে সাগরে আসা যাওয়া করছি। আগামীকালও যাবো ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন। উপকূলীয় মসজিদে জুমার নামাজে সাগরে জেলেদের জানমাল রক্ষায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
টেকনাফ পৌরসভার মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, ‘জেটি মেরামত, ধোয়ামোছা সব শেষ করেছেন জেলেরা। এখন সবাই বরফ নেওয়ার কাজ করছেন। ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক ফিশিং বোট আজ শুক্রবার এই ঘাট থেকে বের হইয়া চলে গেছেন সাগরে। একেকটি মাঝারি ট্রলারে তেল, বরফ, বাজার-সওদা মিলে কমপক্ষে ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এবারে সাগর যাত্রায়। বড় ট্রলারে কমপক্ষে দুই লাখ টাকার পণ্য তোলা হচ্ছে।
কক্সবাজার ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম বাসস’কে বলেন, ‘কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া থেকে প্রায় তিন শতাধিক ছোট বড় ট্রলার সাগরে রওয়ানা হচ্ছে। ওদের খাবার দাবার, পানি তোলা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, জেলেদের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে প্রত্যেক জেলেকে সারাদেশের মতো টেকনাফেও ৫৮ দিনের জন্য ৫৮ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। এখন তারা সাগরে যাচ্ছে। আশা করছি আশানুরূপ মাছ আহরণ হবে।
রসদ-পানি প্রস্তুত : ১৩ জুন থেকে সাগরে ফিরছে জেলেরা

Leave a comment