পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাক্ষসী কপোতাক্ষ গিলছে পাইকগাছা রাড়ুলীর জেলে পল্লী। কখনও প্রবল বৃষ্টি, কখনও পূর্ণিমার গোণে, আবার বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপে বছরে একাধিকবার এই মরা কপোতাক্ষ চেহারা পাল্টায়ে খরস্রোতা কপোতাক্ষের ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। একেরপর এক ঘর-বাড়ি, রাস্তা ঘাট, গাছগাছালি, ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বড় অসহায় রাড়ুলীর জেলে পল্লীর বাসিন্দারা। পার্শ্ব ইটভাটায় একাধিক ড্রেজার মেশিনে মাটি – বালু উত্তোলন, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, স্থানীয় পাউবো’র গাফিলতি, বড় ধরনের বরাদ্দ না পাওয়া , ইতোপূর্বে যা পেয়েছে তার সদ্ব্যবহার না হওয়া সহ নানাবিধ এক কথায় বিস্তর অভিযোগ এলাকাবাসীর। বছর পর বছর ধরে এসমস্যা আরো প্রকট থেকে প্রটকতর হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে দু’তিন শত গজ নিকটবর্তী দেশের গর্ব ঐতিহ্যবাহী বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসিরায়) এর জন্মভিটা, রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদ, আরকেবিকে হরিশ্চন্দ্র ইনস্টিটিউট ও কলেজ, মসজিদ – মন্দির। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ঐতিহ্যবাহী রাড়ুলীর পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে যাবার শংকায় রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আ. কালাম আজাদ সহ সুধী জনেরা। সরজমিনে মালোপাড়ার অধিবাসীরা সমস্যায় জর্জরিত হলেও আমারা নিরাশ হয়নি। আমরা সংবাদ কর্মীরা প্রতিবারের মতো এবারও এসেছি নিউজ টা কভার করতে। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। একদিকে পূর্ণিমার গোণে প্রবল বৃষ্টি। অন্য দিকে বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গণের প্রবনতা এতটাই কপোতাক্ষের পাড়ে জেলে পল্লী এলাকার মানুষগুলো চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। বলা যায় নির্ঘুম রাত পার করছে। ধীরে ধীরে নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি আর ভাটায় পানি কমতে থাকে। সাথে সাথে পল্লীর বসবাসরত মানুষের দুলাচালে শংকা তত বাড়তে থাকে। এটা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কারোর বসত ঘরের ধ্বসে গেছে, কারোর গাছ-গাছালী , কারোর আধা-পাকা ঘরের অংশ ঝুলছে। কারোর খড়ের গাদা, রান্না ঘর সহ ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত। কোথাও পুরো রাস্তা। কোথাও দু’চারটি ইট জানান দিচ্ছে এখানে রাস্তা ছিল। লবনাক্ততার কারণে ফসল নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে নিমোজ্জিত এলাকাবাসী আতংকিত। বকুল বিশ্বাস, কালী বিশ্বাস, মোমিন সানা, মাদার গাজী, মেম্বর বজলু মোড়লরা তাদের ঘর-বাড়ি ফেলে স্বজাতিদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। দুই থেকে আড়াইশ পরিবার সবকিছু হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। অতিসত্ত্বর ভাঙ্গন প্রতিরোধ এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এমপি, স্থানীয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সোমবার এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার ইকবাল মন্টু ও নবাগত ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় নদী ভাঙন প্রসঙ্গ উঠলে পাউবো কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা। ভাঙন রোধে পরিকল্পিত ভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন। চেয়ারম্যানরা আরোও বলেন, সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিলেও কেন টেকসই বাঁধ হয় না ! কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এ সম্পর্কে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড শাখার প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার রাড়ুলী মালোপাড়ার ভাঙন সহ উপজেলার কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্বীকার করেন। এ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে রাড়ুলীর ভাঙন মেরামতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার ইকবাল মন্টু বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন দৈনিক জন্মভূমির এ প্রতিনিধিকে বলেন, এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। নদী ভাঙনের অবস্থা সম্পর্কে পাউবো’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।আগামীকাল পাউবো’র থেকে টেন্ডার হবে।