জন্মভূমি ডেস্ক : রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় সাগর মিয়া (২২) নামে এক পথচারী যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি একটি দরজির দোকানে কাজ করেন। আগুন দেওয়া হয়েছে পুলিশ বক্সে।
আজ রোববার (১৯ মে) বিকাল ৪টার দিকে কালশী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহত সাগরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাগরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা রাকিবুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন, বাউনিয়াবাদ এলাকায়। সেখানে একটি টেইলার্সে কাজ করেন সাগর। তারা দুজন আজ সকালে একটি কাজে উত্তরায় গিয়েছিলেন। বিকালে সেখান থেকে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন। পথে কালশী মোড়ে এসে দেখেন পুলিশের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ হচ্ছে। অটোরিকশা চালকদের দমাতে পুলিশ সেখানে গুলি চালাচ্ছিল। তখন সেই সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গেলে সাগরের গলা ও বাম কাঁধে ৪-৫টি গুলি লাগে। এসময় তিনি রাস্তায় পড়ে যান।
পরে তাকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, সাগর নামে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে রবিবার বিকাল সোয়া চারটার দিকে কালশী মোড়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় পুলিশবক্সে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান বলেন, কালশীতে আন্দোলনকারীরা সহিংস আন্দোলন করছে। তারা কালশী মোড়ে অবস্থিত একটি পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে। এটি ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স। আমরা ঘটনাস্থলে আছি, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার শাহজাহান বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে বিকাল ৪ টা ৩২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তবে সেখানে কোনো কাজ করা লাগেনি।
জানা গেছে, আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। এরই জেরে কয়েকবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর পৌনে ৩টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আসেন ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা। তিনি আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন এবং অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে চালকদের একটি অংশ আন্দোলন শেষ করে ফিরতে সম্মত হয়।
তবে শেওড়াপাড়া থেকে আসা শ্রমিকদের একাংশ লাঠি হাতে হই-হুল্লোড় করে এসে আবারো অবরোধ শুরু করে। এসময় পুলিশ তাদের সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় শেওড়াপাড়া দিয়ে মিরপুরের দিকে আসা অটোরিকশা চালকদের একটি অংশ ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে এবং লাঠি নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশও পাল্টা ধায়া দেয়।
বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভের সময় মিরপুর গোল চত্বরে তিনটি বাস ভাঙচুর করেন অটোরিকশা চালকরা। এসময় বাসে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে বাস থেকে নেমে পড়েন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সির সাব্বির জানান, প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধের কারণে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। আড়াইটার দিকে একপাশ দিয়ে বাস চলাচল শুরু করলে তিনটি বাস ভাঙচুর করেন অটোরিকশাচালকরা। তবে পুলিশের বাধায় তারা সেখান থেকে সরে যান।
গত ১৫ মে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।