জন্মভূমি ডেস্ক : তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরবে না। নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার অধীনে। শর্ত মেনে সংলাপ নয়। এই তিন ইস্যুতে অনড় অবস্থানে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলায় রাজপথেও কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরে এমন অবস্থান ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাকর্মীদের এ নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি তাদেরকে নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ পাহারা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দলীয় এই নির্দেশনা রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহরের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরইমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ যতদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে, ততদিন কোনো বার্তা ও আল্টিমেটাম দিয়ে লাভ হবে না।
সংবিধান থেকে এক চুলও সরবে না সরকার। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশিদের পরামর্শ নেয়া হবে কিন্তু সংবিধানের বাইরে নির্বাচন নয়। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার সবকিছু আওয়ামী লীগ করবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাজপথে নেতাকর্মীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ জানাই আগামী ১০০ দিন দেশকে পাহারা দিতে হবে। কারণ দেশটাকে তারা বিশ্ব বেনিয়াদের কাছে তুলে দিতে চাইছে। ক্ষমতা পাহারা দিতে হবে না, ক্ষমতা পাহারা দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের। কিন্তু দেশটাকে পাহারা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া নয়, তারা জানে নির্বাচন হলেও তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে না। নির্বাচনের মাঠে তারা যে পানি ঘোলা করছে সেখানে মাছ শিকার করবে অন্যরা। সেটাও তারা জানে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে দেশকে তুলে দেয়া। দেশের সম্পদ তুলে দেয়া।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানান, আপাতত নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে রাজপথকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আদালতের রায় মোতাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পুনরায় ফেরার কোনো সুযোগ নেই। সরাসরি আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র সংলাপের প্রয়োজনও নেই। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, সুতরাং অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যেকোনো ইস্যু থাকলে দলগুলো অথবা আগ্রহী যেকোনো পক্ষ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে অধিকতর উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পারেন। যদি কোনো সংবিধান সম্মত ন্যায্য পরামর্শ আসে আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তা বিবেচনা করতে পারে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা এবং সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সংলাপ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে যে, শর্তহীন সংলাপ হলে আওয়ামী লীগ বিবেচনা করবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তারা কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখান।
তাদের বক্তব্য- গণতন্ত্র ও নির্বাচনের স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। গত নির্বাচনের আগেও সংলাপ হয়েছে। তবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সংলাপের আগেই নানা শর্তের কথা তুলে ধরছেন। নানা দাবির কথা বলছেন। এসব নিয়ে তো আর সংলাপ সম্ভব নয়। সংলাপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়া। এর বাইরে অন্য কোনো কিছু চিন্তা করে সংলাপের নিয়ত করা উচিত হবে না বলে জানান দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ যে চারটি শর্ত দিয়েছে বিএনপি, সেগুলো প্রত্যাহার করা হলে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংলাপ সম্পর্কে কোনো কথা বলেনি মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। শর্তযুক্ত কোনো আলোচনায় বসবে না আওয়ামী লীগ। এর বাইরে যে পরামর্শ তাতে সরকারের আপত্তি নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলছে তাদের শর্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়, সংসদের বিলুপ্তি চায়, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়- সেটা তাদের প্রথম শর্ত। তারা ইলেকশন কমিশনের পদত্যাগ চায়। আমরা তো সংলাপের চিন্তা করবো তখন যদি তারা এই চারটি শর্ত প্রত্যাহার করে নেয়। সংলাপ হলে শর্ত কিসের? শর্তযুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা নেই।