জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর টানা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে আবার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী উপস্থিতি না থাকায় ক্লাসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় চরম ব্যাঘাত হচ্ছে। দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী প্রায় তিন কোটি। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে? জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হরতাল-অবরোধে বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধের দিনে পরীক্ষা নিচ্ছে ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সপ্তাহের কর্ম দিবসগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চললেও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদান প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা হরতাল-অবরোধের কারণে শুধু চলতি বছরের শিক্ষা কার্যক্রমই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে না; আগামী বছরের শুরুতেও শিক্ষাপঞ্জিতে ধাক্কা লাগছে। বছরের প্রথম দিন বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষাপঞ্জি শুরু হয়। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগামী বছরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপিয়েও জেলা ও উপজেলায় পাঠাতে পারছে না। প্রায় ২ কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপাখানাগুলোতে পড়ে আছে। সময়মতো বই শিক্ষার্থীদের হাতে না দিলে আগামী বছর নির্ধারিত সময়ে শিক্ষাপঞ্জি শুরু হবে না। করোনা ভাইরাসের সময় দুই বছরেরও বেশি সময়ের এক বড় ধাক্কা এসেছিল শিক্ষা খাতে। সে ধাক্কা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা বছরের সময় কমিয়ে সে ক্ষতি কাটিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে না পারলে করোনার পর ফের বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে এ খাতে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কিছু পরীক্ষাও অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে। তবে সব শিক্ষার্থী অনলাইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না। আমরা দেখেছি করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি চালু করা হলেও শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই যুক্ত হতে পারেনি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় তাও সুফল পায়নি। বিশেষ করে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা এখন চিন্তাই করা যায় না। বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা; তাদের না আছে ইন্টারনেট সাপোর্ট, না আছে ল্যাপটপ; স্মার্টফোন থাকলেও নেটওয়ার্কিং ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাব তো আছেই। উপরন্তু অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর পারিবারিক অবস্থা আর্থিক অনটনের মধ্যে যাচ্ছে, যার ফলে উদ্বিগ্নতা আর টানাপড়েনের মধ্যে অনলাইন লেখাপড়ায় মনস্থির এক দুরূহ ব্যাপার। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিপর্যয়কর অবস্থা দ্রুত কেটে উঠতে হবে। রাজনীতিক দলগুলোকে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অরাজকতা, নৈরাজ্য বন্ধ করে লেখাপড়ার পথ সুগম করে দিতে হবে।